চিন্ময় কর- পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত এক বছরে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় গত এক বছরে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ১০ হাজার ৪৩৩ জন। বিদ্যাসাগরের জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার অন্য জেলার তুলনায় বেশি বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী নিয়ে প্রচারের কোন খামতি নেই রাজ্য সরকারের প্রচারে। তবে গত এক বছরে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি এই বিষয়টির বিষয়ে জনসম্মুখে আসে নি।
কেন এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলিতে গিয়ে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। নাবালিকাদের মা বলছেন, নিরাপত্তা হীনতায় এবং আর্থিক সঙ্কটের কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উঠে এলো স্বামীরা ভিন রাজ্যে কাজ করেন। পুরুষ হীন ঘরে মেয়েকে নিরাপত্তার অভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই স্বাস্থ্য দপ্তরে বলেই ফেললেন, ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।
এখন প্রসূতি হয়ে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলিতে পোলিও কার্ড করাতে ভিড় বাড়ছে। ঘোমটা দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা হলেও পোলিও কার্ড করার সময় স্বাস্থ্য কমীরা ধরে ফেলছেন অন্তঃসত্ত্বারা নাবালিকা। বিপাকে পড়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারীককে খবর দিচ্ছেন। বুধবার চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে সাত জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা পোলিও কার্ড করতে হাজির। পোলিও কার্ড করানোর জন্য, ১৪ থেকে ১৭ বছরের নাবালিকা অন্তঃস্বত্বাদের দেখে বেজায় চটছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকেরা। নিরুপায় হয়ে অবশেষে এই নাবালিকাদেরই পোলিও কার্ড দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের।
স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০ হাজার ৪৩১ জন নাবালিকা গর্ভধারণ করেছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩৯ জনের বয়স ১৫ বছরের নীচে। ৯ হাজার ১৩২ জনের বয়স ১৮ বছরের নীচে। তার আগের বছর সেই সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার ৭৫৫ জন।
১৪ বছরে বিয়ে। ১৫ বছর পড়তে না পড়তেই অন্তঃসত্ত্বা! এক জন বা দু’জন নয়। বুধবার এই ধরনের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাদের লাইন পড়ে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপ্ননীল মিস্ত্রির। চরম ভর্ৎসনা করলেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের।
নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ ফোনে ফোনে প্রেম আলাপ করে পরিবারের অজান্তেই পালিয়ে বিয়ে করেছে। কেউ আবার পরিবারের দারিদ্রতার জন্যই বিয়ে করেছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে গ্রামের বুথগুলিতে ঘুরে। নাবালিকা দুই সন্তানের মা। তৃণমূল নেতাদের সহযোগীতায় বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে পঞ্চায়েতে ফরম ফিলাপ করে রূপশ্রী প্রকল্পের ৪৫ হাজার টাকাও পেয়েছে। সেই টাকাও ভাগ হয়েছে অর্ধেক অর্ধেক করে। কেশপুর গড়বেতা ব্লকে এই রকম বহু ঘটনা রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগের সুরে বললেন, বিদ্যাসাগরের জেলায় নাবলিকা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা রয়েছে। নিখোঁজের পর তাকে উদ্ধারে রয়েছে প্রসাশনিক গড়িমসি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সদইচ্ছা। পুলিশ প্রসাশন ফোনের লোকেশন পেয়েও পদক্ষেপ নেয়নি। এমনো অভিযোগ জেলা পুলিশ প্রসাশনের কাছে দায়ের হওয়ার ঘটনা রয়েছে। আবার কোথাও নাবলিকা নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বাড়ি ফিরছে, এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সরকারি হাসপাতালগুলিতে পোলিও কার্ড নিতে বাড়ছে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাদের ভিড়। যা নিয়ে নিয়ে দুশ্চিনা্তয় জেলা প্রশাসনও। সচেতনামূলক প্রচারের পরেও নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সংখ্যাটা চিন্তা বাড়িয়েছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী বলেন,‘‘জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, থানা, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন সর্বত্র বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমরা পোস্টার, হোর্ডিং দিচ্ছি। এই ধরনের খবর থাকলেই ১০৯৮ বা ১১২-তে ফোন করুন। বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহের হার শূন্যতে নামিয়ে আনতেই হবে বলে তিনি স্বীকার করে নেন।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বিষয়টি স্বীকার করে নেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই ঘটনা শুধু স্বাস্থ্য দপ্তরের নয়, এটা একটা সামাজিক ব্যধি। এটা রুখতে সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন।
Comments :0