Rahul Gandhi

বিচিত্র তথ্য জানার অজুহাতে এবার পুলিশি হেনস্তা রাহুলকে

জাতীয়

‘দেশের মেয়েরা এখনও যৌন নির্যাতনের শিকার হন’। এমন এক নির্মম সত্য বলার জন্য কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বাসভবনে রবিবার সকালে হানা দেয় দিল্লি পুলিশ! কীসের ভিত্তিতে তিনি ওই কথা বলেছেন, নির্যাতনের শিকার কারা হয়েছেন, এমন কোনও তথ্য তাঁর জানা আছে কীনা, সেই তালিকাও চায় পুলিশ। এই ধরনের বিচিত্র জেরাকে ‘নজিরবিহীন’ অ্যাখ্যা দিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে এদিনই চার পাতার একটা প্রাথমিক জবাবও পাঠিয়ে দিয়েছেন রাহুল। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তিনি পুলিশের পূর্ণাঙ্গ জবাব পাঠিয়ে দেবেন। পরে তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘আদানি নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যই এই হেনস্তা।’
৩০ জানুয়ারি ৪৫ দিনের ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাহুল ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছিলেন যে, ‘এদেশে এখনও মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হন’। এটা এমন এক সত্য যে কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। প্রতিদিনই দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ধর্ষণ, যৌন হেনস্তা, গার্হস্থ্য হিংসার খবর পাওয়া যায়। যৌন নির্যাতন কিংবা ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুনের ঘটনার খবরে সাম্প্রতিককালে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে সর্বাধিক এসেছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তর প্রদেশ। নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্য পাঁচ জনের মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাহুল। এই কথা বলা যে ‘অপরাধ’ হতে পারে এখন দেশে, রাহুলের বাসভবনে পুলিশি হানার আগে সম্ভবত জানা ছিল না কারুরই।


এদিন সকালে রাহুলের তুঘলক লেনের সরকারি বাসভবনে সদলবলে হাজির হন দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার সাগর প্রীত হুদা। তাঁরা দশটায় পৌঁছে গেলেও রাহুল তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন ১২টা নাগাদ। ঘণ্টাখানেক জেরার পর রাহুলের বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশ বাহিনী। পুলিশের দল থাকাকালীনই রাহুলের বাসভনে পৌঁছে যান অভিষেক মনু সাঙভি, জয়রাম রমেশ, পবন খেরার মতো আরও কয়েকজন কংগ্রেস নেতা। বাইরে তখন জড়ো হওয়া কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ তাঁদের মধ্যে থেকে চার-পাঁচজনকে আটকও করে।
রাহুলের বাসভবনে এদিনের হানা সম্পর্কে পুলিশের যুক্তি বেশ বিচিত্র! তাদের বক্তব্য, ‘শ্রীনগরে ভারত জোড়ো যাত্রা শেষে রাহুল গান্ধী তাঁর বক্তব্যে নারী নির্যাতনের উল্লেখ করেন। রাহুল যাত্রাপথে রাজধানী দিল্লির উপর দিয়েও গিয়েছেন। ওই সময় তাঁর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়েছেন কীনা, পুলিশ সেই তথ্যই জানতে চেয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। দিল্লির বুকে এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তা অতি অবশ্যই তদন্ত করে বের করা দিল্লি পুলিশের কর্তব্য। পুলিশের কাছে যদিও এমন কোনও তথ্য নেই। তবু রাহুল গান্ধীর কাছে আসা, ওঁর কাছে এবিষয়ে বিশদ তথ্য আছে কীনা জানার জন্য। প্রয়োজনে সেই সব মহিলাদের নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করবে দিল্লি পুলিশ।’ হুদা দাবি করেন, তাঁরা আগেও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু উনি বিদেশে থাকায় সম্ভব হয়নি। বস্তুত, পুলিশের কাছে কোনও ধরনের অভিযোগ নয়, স্রেফ বক্তৃতার মাঝে নারী নির্যাতন নিয়ে মন্তব্যের জেরে বক্তাকে বিশদ তথ্য দাখিল করতে হয়, একথা নতুন করে বুঝিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ।


ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সম্প্রতি ব্রিটেনে বিজেপি সরকারের আমলে দেশের গণতন্ত্রের বেহাল দশার কথা উল্লেখ করায় কেন্দ্রের আরও বেশি নিশানা হয়ে পড়েছেন রাহুল। বিদেশে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এমনিতেই রাহুলের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সরব বিজেপি। তাঁকে সংসদ থেকে সাসপেন্ড করারও উদ্যোগ চলছে। এরই মধ্যে আবার ‘কারা কারা নির্যাতনের শিকার’ তার তালিকা চেয়ে কংগ্রেস নেতাকে অপদস্ত করার সুযোগও হাতছাড়া করতে চাইল না অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ।
চার পাতার প্রাথমিক জবাব পুলিশের কাছে পাঠানোর পর রাহুল বলেন, ‘হঠাৎ করে দিল্লি পুলিশ তৎপরতা দেখাতে শুরু করল কেন বোঝা গেল না। ভাষণ দেওয়ার ৪৫ দিন পর আমার কাছে বিশদ তথ্য চাওয়া হচ্ছে। তিনি এও জানতে চান, রাজনৈতিক প্রচারে এধরনের মন্তব্য করার জন্য অন্য কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা শাসক গোষ্ঠীর কাউকে এভাবে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে কীনা।
রাহুলের বাসভবনে পুলিশি হানার পর সাংবাদিক সম্মেলনে গোটা ঘটনার কড়া সমালোচনা কংগ্রেস নেতারা পরিষ্কার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ভয় দেখানো এবং অপদস্ত করার লক্ষ্যেই এমন কাজ করা হয়েছে।’ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘বিরোধী নেতাদের রাজনৈতিক প্রচারের পর যদি এমন হেনস্তার শিকার হতে হয় তাহলে মোটেই তা ভালো উদাহরণ হয় না। রাজস্থানে গিয়ে এমন অনেক মন্তব্য অহরহ করে চলেছেন বিজেপি নেতারা, তাহলে কি তাঁদের বিরুদ্ধে এমনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?’
বিজেপি স্বাভাবিকভাবেই রাহুল কিংবা কংগ্রেসের অভিজোগ মানতে নারাজ। পুলিশের হয়ে সাফাই গেয়ে বিজেপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ শুধুমাত্র আইনি কর্তব্য পালন করতে গিয়েছিল।’

Comments :0

Login to leave a comment