UNEMPLOYMENT

কর্মনাশ উৎসব

সম্পাদকীয় বিভাগ

editorial unemployment narendra modi bengali news

কথা ছিল বছরে দু’কোটি চাকরি দেবেন ক্ষমতায় এলে। চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা এখন দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থারই দু’লক্ষ সত্তর হাজার খেয়ে হজম করে ফেলেছেন। তারপর ঢেকুর তুলে বলছেন দেশে এখন ‘অমৃতকাল’ চলছে। 

অতএব দেশের কর্মহীন এবং সামান্য মজুরির কর্মরতরা সকলে পে‍টে গামছা বেঁধে অমৃত মহোৎসবে যোগ দিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাও। মোদীর নামে জয়ধ্বনি দাও। যুব সমাজের স্বপ্নের সমাধি রচনা হলে দেশ তরতর করে এগোবে। আদানিসহ বৃহৎ কর্পোরেটে মুনাফার পর মুনাফার রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যায় সমীক্ষার আওতায় থাকা ৩৮৯টি সংস্থায় ২০১৩সালের মার্চ মাসে মোট কর্মী ছিল ১৭লক্ষ ৩০হাজার। ২০২২সালের মার্চ মাসে সেটা কমে হয়েছে ১৪লক্ষ ৬০হাজার। অর্থাৎ গত এক দশকে নরেন্দ্র মোদীর করিতকর্মা সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দু’লক্ষ ৭০হাজার কর্মী ছেঁটে ফেলেছেন। 

তাঁর দক্ষতার ব্যাপ্তি এখানেই থেমে যায়নি। যাদের এখনো কাজে বহাল রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কার যে কখন চিরতরে ছুটি হয়ে যাবে কেউ জানে না। অর্থাৎ স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে ঠিকা নিয়োগ এবং অস্থায়ী নিয়োগ, এমন কি দৈনিক মজুরিতে নিয়োগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

ফলে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালে যেখানে নিযুক্ত কর্মীদের মাত্র ১৯শতাংশ ছিল ঠিকা ও অস্থায়ী ২০২২ সালে সেটা ৪২শতাংশ পেরিয়ে গেছে। যাদের কাজ আছে এবং যারা নতুন কাজ পাচ্ছে তাদের কাজের কোনও নিরাপত্তা থাকছে না এবং কোনও সামাজিক নিরাপত্তাও থাকছে না। সর্বোপরি মজুরি কমে হয়ে যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম।


রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে এমন ঢালাওভাবে কর্মী হ্রাসের ঘটনা শুধু লোকসানে চলা সংস্থাতেই হচ্ছে না, হচ্ছে লাভে চলা সংস্থাতেও। আসলে সরকারের নীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অগ্রাধিকারে নেই। সরকারের লক্ষ্য সরকারি সংস্থাগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। কর্মীসংখ্যা বেশি হলে কোন বেসরকারি সংস্থা তাদের দায় নেবে না। 

তাই কর্মীসংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে এবং যতটা সম্ভব ঠিকাকরণ ও অস্থায়ীকরণ বাড়িয়ে বেসরকারি সংস্থার কেনার আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা। তারপরও যদি বেসরকারি কর্পোরেট ক্রেতারা আকৃষ্ট না হয় তারজন্য অন্যভাবে তাদের সুবিধা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা হচ্ছে। 

যেমন তাদের কর ছাড় দিয়ে, করের হার কমিয়ে, যথেচ্ছ ঋণের বন্দোবস্ত করে দিয়ে, বকেয়া ঋণ মকুব করে কর্পোরেট সেবার নৈবেদ্য সাজানো। স্বাভাবিকভাবেই বেকারদের চাকরি না জুটুক, কর্মরতদের মজুরি না বাড়ুক, সাধারণ মানুষের আয় না বাড়ুক কর্পোরেট মুনাফা কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে কর্পোরেট মালিকদের সম্পদ। 

ফলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে, সম্পদ ও আয় বৈষম্য প্রতিদিন নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে। তৈরি হচ্ছে গুটিকয় অতিকায় ধনী। দেশের সব সম্পদ গিয়ে জড়ো হচ্ছে তাদের ঘরে। আর কোটি কোটি ভারতবাসী নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment