Tangra Suicide

আত্মহত্যা নয়, খুন হয়েছে ট্যাংরার তিন সদস্য

রাজ্য কলকাতা

আত্মহত্যা নয়। ট্যাংরার একই পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে আসছে। বুধবার ট্যাংরায় একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত দেহ উদ্ধার হয় তাদের বাড়ি থেকে। গতকাল  সকালেই বাইপাসে অভিষিক্তার সামনে একটি বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে। আহতদের কাছ থেকে একটি ঠিকানা পাওয়া যায়। ২১/সি অতুল সুর রোড। ওই ঠিকানা ধরে পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখে তিনজনে দেহ মাটিতে পড়ে আছে।

নিহতদের নাম রোমি দে (৪৪)সুদেষ্ণা দে (৩৯) এবং প্রিয়ম্বদা দে (১৪)। সকলের শরীরেই ক্ষত চিহ্ন মিলেছে। কিশোরীর ঠোঁটনাকের নীচে আঘাত রয়েছে। দুই মহিলার হাতের শিরা কাটা। গলায় মিলেছে ক্ষত। জানা যাচ্ছেজখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রসূন কুমার দের স্ত্রী ও কন্যা রোমি দে এবং প্রিয়ম্বদা। জখম প্রণয় দের স্ত্রী সুদেষ্ণা দে। তাঁদের ছেলে প্রতীপ দে। দাদা প্রণয় দে (৪৪)ছেলে প্রতীপ দে (১০) ও ভাই প্রসূন দে (৪২) একসঙ্গে গাড়ি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে।

বাড়ি থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারের পক্ষ থেকে। এদিন এনআরএস হাসপাতালে প্রায় দু’ঘন্টা ধরে চলে ময়নাতদন্ত। এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে দুই ভাই কি পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে নাকি অন্য কেউ? 

বুধবার রাতে ট্যাংরা থানায় এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত রোমি দের বাবা কুমার ব্যানার্জি। তবে আপাতত নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়নি এফআইআর-এ। 

বুধবার দিনের শেষে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি তিন জনের ভিডিও ও লিখিত বয়ান নিয়েছে। সেখানে দুই ভাই দাবি করেছেঅর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে পরিবারের সকল সদস্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। পায়েসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে পরিবারের ৬ জন মঙ্গলবার রাতে খেয়েছেন বলে দাবি। কিন্তু ট্যাংরার বাড়িতে থাকা তিনজনের দেহে ক্ষত চিহ্ন কীভাবে এলো তা জানা যায়নি। ঘটনাটি আদৌ আত্মহত্যা কিনা তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিচ্ছিল প্রথম থেকেই। এবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। 

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছেঅটল সুর রোডের চারতলা বাড়িতে প্রণয় ও প্রসূন দের যৌথ পরিবার। দুইভাই পেশায় চামড়া সামগ্রীর ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছিল। বাজারে প্রচুর দেনা। সেই দেনার সঙ্গে পারিবারিক খরচ চালাতে না পেরে গোটা পরিবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো বলে দাবি।     

ট্যাংরা বুধবারের এই ঘটনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাবিভাগ রীতিমতো ধন্ধে। ঘটনাটি আদৌ আত্মহত্যা না খুন তার সবটাই নির্ভর করছে নিহতদের ময়নাতদন্তের ওপর। এদিন ঘটনাস্থলে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনারগোয়েন্দা প্রধান থেকে হোমিসাইড বিভাগের অন্যান্য আধিকারিকরা। ট্যাংরা ঘটনার নিয়ে কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেনট্যাংরার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। যেহেতু পরিবারের দুই সদস্যই হাসপাতালে চিকিৎসাধীনতাই সেই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। প্রণয় ও প্রসূন দে সুস্থ হলে তাঁদের ঘটনাস্থলে নিয়ে নিয়ে পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা। পুলিশ কমিশনার আরো জানানপরিবারের সকল সদস্যের মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। তার তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছেন, ‘‘আরও কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। হাসপাতাল থেকে আহতেরা যা বয়ান দিয়েছেনতা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই আমরা সব তথ্য প্রকাশ করতে পারছি না। কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।’’ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোটে মৃত্যুর কারণের থেকে যেটি বেশি করে তদন্তকারীদের প্রয়োজন তা হলো মৃত্যুর সময়। কেননাঅটল সুর রোডের দে পরিবারের পড়শীরা জানাচ্ছেনএক দিন আগে থেকেই ওই বাড়ির কাউকে ডাকাডাকি করে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই বাড়ির ছাদে প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতি হয়। সেটাও দুদিন ধরে হয়নি। তার ওপর মঙ্গলবার ওই বাড়িতে একাধিক পাওনাদার এসেছিলো। সকলে কলিং বেল বাজিয়ে কাউকে না পেয়ে চলে যায়।

এই ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকার মানুষজন। একই বাড়িতে তিন জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেনদে পরিবারের দুভাই এলাকায় তেমন মিশতেন না। দুই গৃহবধূই পাড়ায় মিশতেন না। মাঝেমধ্যে ওই বাড়ি থেকে ঝগড়াঝাটির আওয়াজ শোনা যেত। দিন তিনেক আগে দে বাড়িতে একটা বড় পার্টি হয়। সেখানে গান-বাজনার সঙ্গে ঝগড়ার আওয়াজও প্রতিবেশীদের কানে আসে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ওই বাড়ির লাইট নেভানো ছিল। দে পরিবারের পাশের বাড়ির কেয়ারটেকার মন্টু সামন্ত জানিয়েছেন, ‘‘গতকাল দুপুর থেকে দফায় দফায় দশ থেকে বারো জন এসেছিল। তারা বারবার বাড়ির দুটি গেটেই বেল বাজিয়েছে। কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বাড়ির ভিতর থেকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বাড়ি ছিল নিঝুম অন্ধকার। আলো পর্যন্ত জ্বলেনি।’’ 

 

Comments :0

Login to leave a comment