বার্মায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়ছে সেদেশের সেনাবাহিনী। বার্মার সংবাদপত্র ‘দ্যা ইরাওয়াড্ডি’ জানিয়েছে, রাখাইন প্রদেশের মিনবিয়া শহরের দখল নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। মঙ্গলবার শহরের শেষ দুটি সেনাঘাঁটির দখল নেয় বিদ্রোহীরা।
রাখাইন আর্মি জানিয়েছে, বার্মা সেনার ৩৭৯ এবং ৫৪১ নম্বর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নের সদর দপ্তরের দখল নিয়েছেন তাঁরা। এই ঘাঁটি দুটির দখল নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে দুই তরফের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
মিনবিয়ার যুদ্ধের সময় বার্মা সেনার বহু জওয়ান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্থন করেছে বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্ত লাগোয়া টাউং পিয়োর দুটি ঘাঁটিরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী মুয়াংডাও শহরের দখলও বিদ্রোহীদের হাতে চলে গিয়েছে বলে ‘দ্যা ইরাওয়াড্ডি’ জানিয়েছে।
ইরাওয়াড্ডির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিদ্রোহীদের হাত থেকে বাঁচতে ২০০’র বেশি সরকারি সেনা জওয়ান সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের বার্মায় ফেরানোর বিষয়ে সরকারি স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকার তরফে ইঙ্গিত মিলেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, রাখাইন প্রদেশের ম’রাউক-উ, কিয়াউকটাও, রামরি, আন এবং মেইবনের মত শহরগুলির দখল নিয়ে এখনও দুই পক্ষের লড়াই চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বার্মা সেনার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে আরাকান আর্মি সহ আরও বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী সংগঠনের জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। বার্মার উত্তর শান প্রদেশ থেকে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে এই অভিযান শুরু হয়। অভিযান চালিয়ে উত্তর বার্মার চীন সীমান্ত লাগোয়া শান প্রদেশের সিংহভাগ এলাকা দখল করেছে বিদ্রোহীরা। বার্মা-চীন বাণিজ্যপথ লাগোয়া ২০টিরও বেশি শহরের দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। শান প্রদেশের পাশাপাশি রাখাইন প্রদেশেও ১৩ নভেম্বর থেকে অভিযান শুরু করে বিদ্রোহীরা।
ইরাওয়াড্ডি জানাচ্ছে, রাখাইন এবং দক্ষিণ চীন প্রদেশে বিদ্রোহীরা ৩টি শহর এবং ১৭০টি সেনা এবং পুলিশ ছাউনির দখল নিয়েছে এখনও অবধি।
রাখাইন প্রদেশে সংঘর্ষের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘রাখাইনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবনতি ঘটেছে। সংযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ভারতীয় নাগরিকদের রাখাইন প্রদেশে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। যাঁরা রাখাইনে রয়েছেন, তাঁদের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে চলে আসুন।’’
Comments :0