কোনও গণতান্ত্রিক দেশের সেনাবাহিনী সে দেশের কোনও দল বা নেতার গোলাম নয়। দেশের ভৌগোলিক সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালন করে সেনাবাহিনী। যেকোনও ধরনের বৈদেশিক হামলা, শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে দেশের ভূখণ্ড ও জনগণকে রক্ষা করা তাদের প্রধান কাজ। এ কাজ তারা করে থাকে নিঃশর্তে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরত্বের সাথে। কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ, সর্বোপরি কোনও নেতার সেবাদাসত্ব করার জন্য সেনাবাহিনী নয়। তারা সমস্ত ধরনের দলমতের উর্ধ্বে দেশের জন্য ও দেশের জনগণের সুরক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ। এহেন সেনাবাহিনীকেই ধর্মান্ধ হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি অত্যন্ত নির্লজ্জ ও কুৎসিতভাবে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। এমনকি দলের ঊর্ধ্বে এক ব্যক্তি নেতা এবং দেশ ও জাতির ঊর্ধ্বে ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর সামনে হাঁটুগেড়ে মাথানত করতে বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। ঐ দলের নেতা-কর্মীরা যেমন অন্ধ ভক্তরূপে নেতার পদতলে আত্মসমর্পণ করে তেমনি বাহিনীও সেই পথ অনুসরণ করবে বলে তারা মনে করে। আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাহীন দাসানুদাস ভক্তদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা অর্থহীন। নেতার পায়ে গড়াগড়ি খেয়ে মোক্ষলাভের স্বপ্ন দেখেন যারা তারা দেশ রক্ষার অতন্দ্রবাহিনী বীর যোদ্ধা সেনাদের আত্মসম্মান ও আত্মগৌরবের মর্যাদা বুঝবে কি করে। এমন আকাটদের বোধবুদ্ধির দৈন্যতা তাও বোঝা যায় কিন্তু এদের যারা নেতা তারা নিশ্চয়ই বোধবুদ্ধি সবটাই হারিয়ে বসেননি। তাহলে তারা এমন একটা সময় মৌনতার আড়ালে আত্মগোপন করছেন? তবে কি তারাও চান সেনাবাহিনী মোদীর পদতলে করজোড়ে শামিল হোক? স্বয়ং মোদীও কি সেটাই চান? সর্বশক্তিমান এক নায়কসুলভ মনোভাবের দ্বারা চালিত তাদের মধ্যে এমন চরম ঔদ্ধত্যের স্বপ্নবিলাস অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চার-পাঁচ দিন আগে মধ্য প্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রী সরকারি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বীরাঙ্গনা কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে তাঁর ধর্ম পরিচয়ের জন্য পহেলগামের জঙ্গিদের বোন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ এই সোফিয়াই চলমান পাক-ভারত সামরিক সংঘাত পর্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম মুখ হিসাবে দেশবাসীদের সামনে হাজির ছিলেন। এভাবে একজন দায়িত্ববান সেনা অফিসারকে কদর্যভাবে আঘাত করা বিজেপি’র মন্ত্রী ছাড়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এহেন নোংরা মানসিকতার বিরুদ্ধে নিন্দা-ধিক্কারের ঝড় ওঠে দেশে। মধ্য প্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টেও ঐ মন্ত্রী ঘাড় ধাক্কা খায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দলের সর্বোচ্চ নেতারা টু শব্দটিও করেননি। মোদী-শাহদের এমন নীরবতায় দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে দেশের গোটা সেনাবাহিনীকেই মোদীর পদতলে নতজানু করিয়ে ছেড়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন সেনাবাহিনীর কোনও কৃতিত্ব নেই। আসল কৃতিত্ব ও গৌরবের অধিকারী মোদী। যা কিছু সাফল্য এসেছে সবটাই মোদীর দৌলতে। অতএব মোদীর পায়েই সেনাবাহিনীকে নতজানু হতে হবে। যথারীতি এবারও কোনও কথা নেই মোদী-শাহদের মুখে। তাঁরা এমন প্রশংসা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন। সেনাবাহিনীকে অপমানিত, অসম্মানিত করে মোদীকে সর্বগৌরবের চূড়ায় স্থাপন করা হচ্ছে মোদীর নীরব সম্মতিতেই।
Modi Armed Forces
মোদীর পায়ে সেনা

×
Comments :0