স্মার্ট মিটার চালু করার বিরুদ্ধে গোটা রাজ্যেই পথে নেমেছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ দপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তেমনই গ্রাহকদের মধ্যে প্রিপেড মিটারের কুফল নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে বিদ্যুৎ দপ্তরের গ্রুপ অফিসগুলিতে স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে শয়ে, শয়ে চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রায় আট দফা সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠনের তরফে বিদ্যুৎ দপ্তরকে চিঠি দিয়ে স্মার্ট মিটার বসানোর বিরোধিতা করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্মার্ট মিটারের জন্য সমীক্ষা শুরু করার বিঞ্জপ্তি জারি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই স্মার্ট মিটারের বিরোধীতা করে প্রথম থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বামপন্থীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি রাজ্য সরকার। মুখ বুজে তারা মেনে নিয়েছে। শুধু স্মার্ট মিটার নয়, রাজ্যে প্রতিদিন বাড়ছে বিদ্যুৎ এর মাশুল। যার ফলে মানুষের ওপর বাড়ছে বাড়তি বোঝা। বিদ্যুৎ দাম নিয়ন্ত্রণেও সরকার নীরব। রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে একজোট হয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, রাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মোট ২ কোটি ২০ লক্ষ গ্রাহকের ঘরে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসাবে। কেন্দ্রের শর্ত অনুযায়ী, এই মিটার বসানোর আর তারপর থেকে তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে প্রাইভেট কোম্পানি। রাজ্যের সরকার লিফলেট ছাপিয়ে নানাভাবে প্রচার করার চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে এই মিটার লাগালে গ্রাহকরা লাভবান হবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে স্মার্ট মিটারের সমস্যা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ব্যাবহারের আগেই টাকা জমা দিতে হচ্ছে। জমা রাখা টাকা অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে আগের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুতের বিল জমা দিতে হচ্ছে। শনিবার, রবিবার বা কোন ছুটির দিনে জমা রাখা টাকা শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন চলে যাবে। এই প্রকল্পে বহু মানুষের কর্মসংস্থান চলে যেতে চলেছে। স্মার্ট মিটার চালু করার বিরুদ্ধে ৭ দফা দাবিতে বুধবার বারাসত শেঠপুকুর বিদ্যুৎ সাপ্লাই অফিসের সামনে বারাসত বিদ্যুৎ গ্রাহক মঞ্চের পক্ষ থেকে সই সংগ্রহ করা হয়। ইতোমধ্যে সই সংগ্রহ অভিযানে গ্রাহকদের বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে। সই সংগ্রহ কর্মসূচি হয় নোয়াপাড়া ও নবপল্লী বিদ্যুৎ সাপ্লাই অফিসের সামনে। এদিন গ্রাহক মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক নীলকন্ঠ আচার্য জানিয়েছেন, ‘‘প্রায় প্রতিটি সই সংগ্রহ অভিযানে বহু মানুষের ক্ষোভ আমরা পাচ্ছি। তাদের দাবি এই স্মার্ট মিটার রাক্ষুসে মিটার। আগের পোষ্টপেড মিটার ভাল ছিল। তিনমাসে টাকা জমা দিতে হতো। কোন মাসে টাকা জমা দিতে না পারলে ফাইন সহ পরের মাসে বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া যেতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে টাকা ফুরইয়ে গেলে বিদ্যুতের লাইন চলে যাবে। তা গভীর রাতে বা ছুটির দিনে হলে তো কথাই নেই। স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে গ্রাহকদের কোন অনুমতি ছাড়া। যা আইন বিরুদ্ধ। অবিলম্বে স্মার্ট মিটার বন্ধ করে পুরনো পোস্টপেড মিটার চালু করতে হবে।’’ এই বিষয়ে এদিন শেঠপুকুর বিদ্যুত দপ্তরের ম্যানেজার কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘মিটার লাগানোর আগে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছিল। এটাই নাকি বকলমে অনুমোদন। তাই যদি হয় তাহলে যে সমস্ত গ্রাহকদের স্মার্ট মোবাইল নেই তাদের ক্ষেত্রে ? উত্তর দিতে পারেন নি তিনি। এদিন ৫ সদস্যের বৃহত্তর বারাসত বিধ্যুৎ গ্রাহক মঞ্চের প্রতিনিধিদল স্টেশন ম্যানেজারের কাছে স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে ডেপুটেশন দেন। সই সংগ্রহ অভিযানে ৩২৯ জন সাক্ষর করেছেন। কিন্তু ফরম ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক গ্রাহক সই করতে পারেন নি।
Smart Meter
স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে বারাসতে ডেপুটেশন, সই সংগ্রহ

×
Comments :0