সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসরে যাতায়াত অবাধ। রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে। নেপালদেব ভট্টাচার্যের জীবন থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে। বুধবার শ্রমিক ভবনে প্রয়াত শ্রমিকনেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ সভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
ছাত্র সংগঠন এসএফআই‘র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। সে সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করেছেন সুজন চক্রবর্তী, যিনি নিজেও এসএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। চক্রবর্তী বলেছেন, "স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদী মতাদর্শে পুষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে আজকের লড়াইয়ে তাঁর জীবন থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে।
সর্বভারতীয় স্তরে ছাত্র সংগঠন গড়ার দায়িত্ব নিয়ে সিমলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোয়ালিয়রে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন এসএফআই-কে। দূরতম প্রান্তেও সংগঠনের পতাকা তোলার মতো কর্মী খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন। সর্বভারতীয় স্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই-কে।"
ষাটের দশকে উত্তাল সময়ে বামপন্থী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত। ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও দখল ছিল। তাঁর সমসাময়িক ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব জানিয়েছে যে হিন্দি বলয়ে সংগঠনের প্রসারে এই দক্ষতা কাজে আসত খুবই।
চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘৭৮ সালে ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে নেপালদা সম্পাদক হলেন। আমরা জেলায় কাজ করার সুযোগ পেলাম। ৭৯-তে পাটনায় সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। অসম্ভব রসবোধ সম্পন্ন, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব তাঁর চরিত্রে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল। ‘৭৪ সালে ছাত্র আন্দোলন। কাগজ, কেলম, পেনসিল, কেরোসিনের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন। পুলিশকে নাস্তানাবুদ করে ছোটানো হলো। বাংলায় কার্যত তখনই জরুরি অবস্থা। পুলিশও ছেড়ে দেয়নি। ডায়মন্ড হারবারে ছাত্র কর্মীদের লাফিয়ে খালে পড়তে হলো। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারের মানুষ জানলেন ছাত্র ফেডারেশনের এক নেতা পুলিশকে কার্যত চরকিপাক খাইয়ে দিয়েছে। এমন অজস্র উদাহরণ আছে।’’
চক্রবর্তী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘এসএফআই’র বম্বে সম্মেলন। সলিল চৌধুরীকে সঙ্গে রেখে সবাইকে শিল্পী, সাংস্কৃতিক জগতের বহু বিখ্যাত মানুষকে যুক্ত করে ফেললেন। চুরাশি সালে শিখ দাঙ্গার সময়, দিল্লিতে ভিপি হাউসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমজীবী মানুষকে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন। তাঁদের রক্ষা করলেন। কেবল নেপালদা নন, সে সময়ে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, এভাবেই ইতিহাস তৈরি করলেন।’’
এদিন শ্রমিক ভবনের হলঘরে সবার বসার জায়গা হয়নি। বাইরে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বা বসে স্মরণসভায় অংশ নিয়েছেন অনেকেই।
সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটি এই স্মরণসভার আয়োজন করেছিল। সিআইটিইউ’র অনুমোদিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেপালদেব ভট্টাচার্যকে। এদিন নেপালদের ভট্টাচার্যের ছবিতে মাল্যদান করেন দেশের বাম গণ আন্দোলনের নেতা রামচন্দ্র ডোম, সুজন চক্রবর্তী, সিআইটিইউ নেতা অনাদি সাহু, সুভাষ মুখার্জি, আভাস রায় চৌধুরী, কৃষক সভার নেতা পরেশ পাল, ক্ষেতমজুর আন্দোলনের পক্ষে তুষার ঘোষ, বস্তি আন্দোলনের নেতা সুখরঞ্জন দে, মহিলা আন্দোলনের নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম, কনিনীকা বোস ঘোষ, পরিবারের পক্ষে মাল্যদান করেন তাঁর স্ত্রী মঞ্জুলা ভট্টাচার্য, এছাড়াও মাল্যদান করেন বাম আন্দোলনের নেতা রবীন দেব, অলকেশ দাস ও রমলা চক্রবর্তী।
সুজন চক্রবর্তী বলেছেন যে অতি সহজে বৃত্তের বাইরে বেরতে পারতেন, ছুঁয়ে আসতে পারতেন অচেনা মানুষকে। টেনে নিতে পারতেন কাছে। এই গুনাবলী আজকের সময়ে বামপন্থী কর্মী সংগঠকদের কাছে আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব।
অনাদি সাহু শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেছেন, "দেশের শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতার পর্বে প্রয়াণ হয়েছে শ্রমিকনেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যের। গত ২০ এপ্রিল ব্রিগেডে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং বস্তি আন্দোলনের ডাকে হয়েছিল সমাবেশ। ব্রিগেডে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে রূপায়নের কাজও নিজের হাতে করেছিলেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। শারীরিক সমস্যা নিয়েও সমাবেশ সফল করার কাজে জড়িয়ে থেকেছেন। তারপর ধর্মঘটের প্রস্তুতি পর্বের সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত থেকেছেন।"
সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জ্জি বলেন, "নেপাল শুধু রাজনৈতিক ভাবে দৃঢ় ছিল তাই শুধু নয়। নেপাল খুব ভালো নাচতে পারতো, অসাধরণ ছবি আঁকতে পারতো, গান গাইতো ভালো। ওঁর একাগ্রতা ছিল প্রবল। নিষ্ঠার সাথে যেকোনও কাজ করতো।"
আন্তর্জাতিক সংগীতের মাধ্যমে এদিন স্মরণসভা শেষ হয়।
comemorating nepaldeb bhattacharya
নেপালদেব ভট্টাচার্যের জীবন থেকে সংগঠন গড়ার শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান

×
Comments :0