ভালো করে হাঁটতে পারেন না গৌর মণ্ডল। তাঁর একক লড়াই সাহেবখালি মানুষের মনে কিছুটা সাহস জুগিয়েছিল গত ভোটে। তাই ভোট মিটতেই রমাপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই লাল ঝান্ডা না নোয়ানো মানুষটিকে মেরে ফেলতে এসেছিল তৃণমূলের ঘাতক বাহিনী। মারধর করে মাথা রক্তাক্ত করে দিয়েছিল গৌর মণ্ডলকে। বাদ যাননি স্ত্রী মিহিরাণি মণ্ডল। আক্রমণ শাণিয়ে ঘাতক বাহিনী গ্রাম ছাড়ার সময় জান্তব উল্লাস করে বলছিল, ‘লালকে শেষ করে দিয়েছি।’ ছেলে নেই গৌর মণ্ডলের। পাঁচ মেয়ে। বাবার ওই পরিস্থিতি সামলেছিলেন বেঙ্গালুরুতে গেঞ্জির কারখানায় কাজ করা মেয়েরা। সেখান থেকে টাকা পাঠিয়ে পাঠিয়ে বাবাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করেছেন মেয়েরা। এখন তিনি আগের থেকে ভালো।
অথচ রাস্তায় বের হতে চান না গৌর মণ্ডল। তাঁর একটাই শপথ সিপিআই(এম) জিতলে তবেই তিনি লাল ঝান্ডা হাতে ফের রমাপুর গ্রামের রাস্তায় হাঁটবেন। গৌর মণ্ডলের সেই শপথকে রাখতেই ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রার্থী স্বপন দাসের লড়াই। রমাপুর গ্রামের ১৯৯ নম্বর বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী স্বপন দাস।
রায়মঙ্গলের এক খেয়াপাড়ে বিচালি ঘরে দোকান চালান স্বপন দাসের বৃদ্ধা মা। পার্টি কর্মী স্বপন দাসের দিন চলে কোন মতে। কিন্তু গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মুখ তিনি। সেই লড়াইয়ের জোর যে এবারে কত তা এলাকার প্রচার অভিযান দেখলেই বুঝতে পারা যায়। রায়মঙ্গলের ভাঙতে থাকা বাঁধের ওপর দিয়ে যেতে থাকা লাল পতাকার মিছিল যতই এগিয়েছে ততই তা লম্বা করেছন সাহেবখালির বিভিন্ন বুথের মানুষ।
নির্বাচনের লড়াইয়ে তাঁরাই জুগিয়েছেন অর্থ। তোলাবাজি বা চুরির পয়সায় রমাপুর গ্রাম ভরিয়ে দেওয়া শাসক দলের সঙ্গে লাল পতাকা সমানে লড়ছে। কোথাও কোথাও লাল পতাকা পালটে দিয়েছে প্রকৃতির সবুজের আস্তরণ। ২০১৮ শাসানির ভোটে জিতে ওরা ‘লাল’কে শেষ করতে চেয়েছিলো পারেনি। এখন সেই ‘লাল’ই ওদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভয় দেখিয়ে গত পঞ্চায়েতে ব্যাপক লুটের বিরুদ্ধে এবার জোটবদ্ধ মানুষ। গতবার সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতে সব বুথ দখল করলেও রমাপুরের কিছু মানুষের জেদ জিতিয়েছিলো দেউলির ১৯৪ নম্বর বুথের প্রার্থী নন্দিতা বর্মণকে। তিনি এবারেও প্রার্থী। আলোচনার নামে তাঁকে পঞ্চায়েত অফিসে ডেকে এনে দিনের পর দিন অপমান করেছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান ও বাকি সদস্যরা।
মুখে এতটুকুও রা কাটেননি নন্দিতা বর্মণ। গ্রামের গরিব মানুষকে নায্য দাবি আদায়ে তিনি লাগাতার লড়ে গেছেন। কাজ না করতে দিলেও তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠকে রোখা যায়নি। পাঁচ-পাঁচটা বছর কেটে গেছে। আবার তিনি গ্রামবাসীদের সাথে করে রাজনৈতিক লড়াইয়ে শামিল। পাশে রয়েছেন দেউলির আপামর মানুষ।
হিঙ্গলগঞ্জ পার করে লেবুখালি ঘাট। সেখান থেকে সাহেবখালি নদী পার করলে দুলদুলি। আর দুলদুলি, সাহেবখালি আর রূপামারি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ জেলা পরিষদের ৬৫ নম্বরের আসন। এবারে সেখানে সিপিআই(এম) প্রার্থী রবি বিশ্বাস। নানা ধরণের গ্রামীণ উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিনের সাথি। পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী আমিনা খাতুন বিবি। জব কার্ডের টাকা নেই। পুরোনো পিএইচ প্রকল্পের জলাধার থেকে অনেক দূর থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়।
চরম সঙ্কটে গ্রামীণ অর্থনীতি। মাছ চাষের অবস্থাও ভালো না। এক ফসলি মাঠের ওপর ভরসা করে আর সংসার চলে না। গ্রামের যুবক-যুবতীদের ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হয়। কর্নাটকে সুতোর কলে বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক হয়েছেন। বাকিরা তামিলনাড়ুতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। যদি সংসারে কিছুটা সুরাহা করা যায়। সম্প্রতি বালেশ্বর রেল দুর্ঘটনায় জখম অনেকে রূপামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা।
আদিবাসী প্রধান রূপামারি গ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই এখন জমি হারিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হয়েছেন। অপুষ্টির শিকার শিশুরা। শহরে কিছু মানুষ নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামীণ ন্যূনতম পরিষেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কাজের দাবিতে এবার লড়াইয়ে শামিল বামপন্থী প্রার্থীরা।
Comments :0