Salil Chowdhury

নিষেধ পেরোনোর গান

রাজ্য

Salil Chowdhury

তাঁর গানে আছে নিষেধের পাহারার কথা। আছে পথ হারানোর কথা। আছে পথে নেমেই পথ চেনার কথা। নয়ন মেলে দেখার জন্যে নয়ন মোদার কথা। ক্লান্তি নামার কথা। আবার না-থামার কথা। এগুলো কি স্রষ্টার সৃষ্টির ভেতরে থাকা বিরোধাভাস? নাকি যাকে বিরোধাভাস ভাবছি তার গভীরে অন্তর্নিহিত আছে কোনো সুচিন্তিত ঐক্যের সুর? 
এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই তাঁর সৃষ্টিকে আমরা পরস্পর বিরোধিতায় বিভিন্ন পর্বে প্রতিস্থাপিত করে রেখেছি। এবং এটা করেছি গভীরে ডুব না দিয়েই। সেজন্যেই গণনাট্যের সলিল বনাম বম্বের সলিল, গণসঙ্গীতের সলিল বনাম আধুনিক গানের সলিল, রাজনীতির সলিল বনাম সঙ্গীত পরিচালক সলিল- এমন অসংখ্য নিজেদের গড়া দ্বিপদে বিভাজিত আমাদের সলিল-ভুবন। আরো স্পষ্ট করে বললে, শুধু সলিল নয়, এমনতর খণ্ডিত অভিজ্ঞান ঘিরে রেখেছে আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক চেতনাকেই। আমরা ঘরে থাকি, বাইরেও বেরোই। বেড়াতে যাই, মিছিলেও যাই। 

 

আমরা কাঁদি, আবার গর্জেও উঠি। আমরা আশায় ভরপুর হয়ে স্বপ্ন দেখি। আবার বিষণ্ণ হতাশায় ডুবে গিয়ে কুঁকড়েও যাই। একই আমির নানা ভিন্ন ভিন্ন সত্তা থাকলেও আবার একটা সমগ্রের সংহতিও আছে যেখানে এই টুকরো টুকরো সত্তাগুলো একটা মোজেইকের মত জুড়ে একটা অখণ্ড মানুষের অবয়ব দেয়। আমরা যখন সত্তাগুলিকে পরস্পর বিরোধী দ্বিপদে প্রতিস্থাপন করে কোনো একটি অংশে মনোনিবেশ করে অপর অংশকে উপেক্ষা করি, তখন একটি খণ্ডিত আংশিক সত্য উঠে আসে। পূর্ণ অবয়ব অধরা থেকে যায়। সমগ্রের সন্ধান হয় এভাবেই যখন আমরা একটি এককের মধ্যে নিহিত থাকা বিচিত্রধর্মী বহুর মধ্যেকার ঐক্য সূত্রের সন্ধান করি ও তাকে খুঁজে পাই। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘শব্দ ও সত্য’ প্রবন্ধ সংকলনের একটি নিবন্ধে খণ্ড ও সমগ্রের অন্য একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলছিলেন, সাধারণ আলোচনায় জীবনানন্দ দাশ ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাকে পরস্পর বিরুদ্ধ পক্ষে দাঁড় করানো হয়। কিন্তু সত্যিই কি এই দুজনের কবিতা পরস্পর প্রতিপক্ষ, নাকি দুইয়ের একত্র বিবেচনায় রুচির একটি সমগ্রতার নির্মাণ হয়? রুচির সমগ্রতার সন্ধান শুধু দুজন ভিন্ন স্রষ্টার মধ্যে হয়, তা নয়। আবার একই মানুষকে দু'টি সময়পর্বে বিভাজিত করে খণ্ডিত সত্তারও নির্মাণ করি আমরা। সলিল চৌধুরীর ক্ষেত্রে এটা ভীষণভাবে সত্য, একইভাবে সত্য মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও যাকে বিভাজিত করে দেখা হয় উত্তরকাল ও পূর্বকালে। 

 


সলিল চৌধুরীর সাংস্কৃতিক উন্মেষের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে রাজনীতি। ব্রিটিশ ভারতের আসামের মিকির পাহাড় (আজকের কার্বি আংলং) সীমান্তের চা বাগানের জনজীবন ও প্রকৃতি থেকে আজকের দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ বারাসত ও কোদালিয়া হয়ে সুকিয়া স্ট্রিটের জ্যাঠতুতো ভাইয়েদের বাড়ি- এক বিচিত্র প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও সর্বোপরি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর কেটেছে কৈশোর। তারপর প্রথম যৌবন থেকে বাকি জীবন বিদ্যাধরী নদী খননের গণআন্দোলন থেকে ৪৬ ধর্মতলার গণনাট্যের পরিসর, সেখান থেকে মুম্বাইয়ের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র জগৎ হয়ে আবার যৌবনের শহর কলকাতা। সামগ্রিক এই জীবনের যদি কোনো কেন্দ্রীয় সুর থাকে, তা হল নিষেধের রক্তচক্ষুকে পেরিয়ে প্রগতি ও মুক্তির স্বপ্ন যাপন। নিষেধকে পেরিয়ে যাওয়ার শিক্ষা এসেছিল শৈশবের জীবনেই। ব্রিটিশ মালিকানাধীন চা বাগানের ডাক্তার বাবা জ্ঞানেন্দ্রমোহন চৌধুরীকে একদিকে দেখেছেন সারাদিনের পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় গ্রামোফোনে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের রেকর্ড চালিয়ে শ্রান্তিমোচন করতে। আবার অন্যদিকে দেখেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়ে এক ঘুঁষিতে ব্রিটিশ ম্যানেজারের তিনখানা দাঁত ভেঙে ফেলতে। কখনো বাবাকে দেখেছেন চা বাগানের আইরিশ ডাক্তারের সাথে পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে আলোচনায় মশগুল হতে, কখনো দেখেছেন চা বাগানের মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিকতার অর্জন ভেঙে চা মজুর পুরুষ নারীদের নিয়ে নাটক করতে। মামার বাড়ি কোদালিয়ায় গান বাজনায় ছিল নিষেধাজ্ঞা। জ্যাঠতুতো দাদাদের বাড়িতে গান বাজনা থাকলেও গানবাজনার ঘরে ছিল প্রবেশ নিষেধ। বাগানের বাবুর ছেলে হয়েও মিশেছেন চা শ্রমিক ছেলেমেয়েদের সাথে।

 

 

 নিষেধের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে যৌবনে জীবনের প্রথম প্রেম এসেছে চা শ্রমিক নারীর সিক্ত ভালোবাসায়। শৈশবে বাঁশি বাজানোও শিখেছেন চা শ্রমিক বাজিয়েদের কাছেই প্রথম। জীবনের সুর বা সুরের জীবন এভাবেই এসেছে নিষেধ পেরোনর মধ্য দিয়ে যা এক অর্থে এক রাজনৈতিক পাঠও। মামা বাড়ির ভেতরে বাঁশি বাজানো নিষেধ। তাই কোমরে বাঁশি গুঁজে রেল লাইন পেরিয়ে চলে যেতেন পুলের কাছে। রাতে পুলের ওপর বসে প্রাণের আনন্দে বাজিয়ে যেতেন বাঁশি। ছড়িয়ে পড়া বাঁশির সুরে মুগ্ধ আশেপাশের গ্রামের লোকের কাছে তাঁর নাম হয়ে গেল কেষ্ট ঠাকুর। 

 


 

একদিন এই নিষেধের বেড়াও ভেঙে গেল। মামার বাড়ির চৌহদ্দির ভেতরেই শুরু হল গানের চর্চা, সাহিত্যচর্চার হাতমকশো। এর আগের সুকিয়া স্ট্রিটের জ্যাঠতুতো দাদাদের বাড়ির জীবনে একদিকে ছিল স্নেহহীন নিষ্ঠুর শাসন। আবার অন্যদিকে পরবর্তীকালের পেশাদার সঙ্গীতের জীবনের হাতেখড়িও এখানে। স্নেহ ভালোবাসাহীন নিষ্ঠুর শাসনের ওই বাড়িতে ছোড়দা নিখিল চৌধুরীর ছিল অর্কেস্ট্রার দল। মিলন পরিষদ নামের ওই দলের সদস্যরা বিকেল থেকে একটি নির্দিষ্ট ঘরে মহড়া দিত। চা বাগানের জীবনে মায়ের রেকর্ডে শোনা সে সময়ের সমস্ত বিখ্যাত বাংলা গান, বাবার সংগ্রহের পাশ্চাত্য সঙ্গীত, চা শ্রমিকদের লোকগান নৃত্য বাঁশি ঢোল, দূর পাহাড় থেকে ভেসে আসা পশু পাখির ডাক শিশু সলিলের মনটাকে সঙ্গীতময় করেই রেখেছিল। প্রথম সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে মিলন পরিষদের মহড়া ঘর থেকে নানা সঙ্গীত যন্ত্রের সমবেত ঐক্যতান কানে যেতেই মন্ত্রমুগ্ধের মত সলিল ছুটে যাচ্ছিলেন মহড়া ঘরের দিকে। পা বাড়াতেই কানে এসেছিল, ওই ঘরে না যাওয়ার নিষেধের নির্দেশ। এই নিষেধের বেড়া ভেদ করে সঙ্গীতের কাছে পৌঁছতে স্কুল ফেরৎ সলিল বসে থাকতেন ওই ঘর লাগোয়া ফুটপাতে। মুগ্ধ হয়ে শুনতেন বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ভেসে আসা সুর। মুগ্ধ বিস্ময়ে মুখস্থ করে নিয়েছিলেন সমস্ত সুরের চলন, যন্ত্রের ধ্বনি। ঘরের নিষেধ, তাই চলে যেতেন খোলা আকাশের তলায় ছাদে। ওখানে দাঁড়িয়ে স্বকণ্ঠে সমস্ত যন্ত্রের বাদনের অনুকৃতি করে যেতেন একনাগাড়ে। একদিন ওই সঙ্গীত শিল্পী ছোড়দা আড়াল থেকে শুনতে পেলেন শিশু সলিলের কন্ঠে সমস্ত যন্ত্রের নিখুঁত অনুকরণ। বিমুগ্ধ বিস্ময়ে টেনে নিলেন বুকে। নিষেধের বন্ধ দুয়ার খুলে সলিলের ঠাঁই হল ওই ঘরে। দাদার উদ্যোগেই বিভিন্ন যন্ত্রের পাঠ নেওয়া শুরু হল বিখ্যাত শিল্পীদের কাছে। নির্বাক সিনেমায় দাদার অর্কেস্ট্রা দলের হয়ে প্রথম পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হয়ে অংশও নিলেন শিশু সলিল। 

 

 


এভাবেই নিষেধের পাহারা ঠেলে ঠেলে এগিয়েছে জীবন। লাল পতাকার নেতৃত্বে প্রতিবাদের আন্দোলন স্বচক্ষে প্রথম দেখেছেন গ্রামের এলাকার বাইরে মেথর পল্লীর নিষেধের সীমার ওপারে। রাজনীতির পাঠও এভাবেই এসেছে। প্রথম গানও রচিত হয়েছে প্রতিবাদের সরণি বেয়ে নদী খননের আন্দোলনের সময়। 
স্থিতাবস্থার বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের গানে একাধারে এনেছেন গ্রামীণ লোকায়ত সুর ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের হারমনি। গণনাট্য আন্দোলনের সতীর্থ বন্ধুরা গেল গেল রব তুলেছেন। প্রিয় সংগঠনের মঞ্চেই নিষিদ্ধ হয়েছে তাঁর কিছু গান। আবার রাষ্ট্রও ভীত হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্য কিছু গানকে। ময়দানে সভা শুরু হওয়ার একটু আগেই পুলিশ এসে টাঙিয়ে যেতো তালিকা, এই এই গান নিষেধ। অন্যদিকে ২৪ পরগণার কৃষক আন্দোলনের সূত্রে মাথায় রয়েছে চার চারটে হুলিয়া। তখন ওই বন্ধুরাই আবার চারধারে ভিড়ের বৃত্ত তৈরি করে সলিলের গান গাওয়ার সুযোগ করে দিতেন। গান শেষ হলেও ভিড়ের আড়াল দিয়ে পুলিশের রক্তচক্ষু এড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পথ করে দিতেন। নিজের সঙ্গীতাদর্শ ও রাজনৈতিক প্রত্যয়ে অটল সলিল জানতেন, জনতার দরবারে পরীক্ষায় উতরে যাবে তাঁর গান। ভেতরের বাইরের কোনো নিষেধই তাকে বেঁধে রাখতে পারবে না। পারেওনি। 

 

 


একটা সময়ে অনুভব করলেন, শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ ও স্বল্প আয়ুর গণআন্দোলনের রাজনৈতিক গানই একমাত্র আয়ুধ হতে পারে না। প্রেম ভালোবাসা সহ ব্যক্তি ও সামাজিক মানুষের সমস্ত দিককেই গানের বুকে ঠাঁই করে দিতে হবে। নয়ত প্রতিবাদী মিছিল থেকে ফিরে মানুষ অবসরের সময়ে আবার ভেসে যাবে ওই মূলধারার গানবাজনার নেশাতেই। এভাবে গণনাট্যের গানের পরিসরকে বিস্তৃত করার ভাবনার পাশাপাশি, প্রতিবাদী গানের সাঙ্গীতিক প্রকরণ নিয়েও তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন সলিল। বন্ধুদের মধ্যে একটা পক্ষ বলল, গণসঙ্গীতের সাঙ্গীতিক ভাষা হতে হবে সম্পূর্ণত লোকসঙ্গীত নির্ভর। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সিক্স পার্ট হারমনি ও কর্ডসের প্রয়োগ শ্রমজীবী জনতার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সলিলের মত ছিল, মার্কসবাদ একটি আধুনিক মতাদর্শ যার চরিত্র আন্তর্জাতিক। বিভিন্ন দেশের মাটিতে হবে তার স্থানিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রয়োগ। ফলে গণসঙ্গীতের ভাষাকেও হতে হবে আধুনিক। তাতে মাটির সুরভি, লোকায়তের ঘ্রাণ থাকবে নিশ্চয়ই, কিন্তু আধুনিক জীবনের বিচিত্ররূপিতার প্রতিফলন ঘটাতে সেখানে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বহুস্বরিকতার প্রয়োগের মাধ্যমে। সলিলের অভিমত শুধু যে কালের বিচারে প্রমাণিত হয়েছে তাই নয়, সেদিন যারা তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই পরবর্তী সময়ে বলেছেন, সেদিনের বিতর্কে সলিলের মতই সঠিক ছিল। পরবর্তীতে ওরাও সলিল চৌধুরীর সঙ্গীতাদর্শেই গান বেঁধেছেন। 

 

 


কলকাতা ছেড়ে সলিল মুম্বাই গিয়েছিলেন পারিবারিক বাধ্যবাধকতায় এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য চলচ্চিত্র বিষয়ে লেনিনের অভিমতও তাঁকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্প মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র জনমনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ। অতএব চলচ্চিত্র মাধ্যমটি নিয়েও বামপন্থীদের ভাবা উচিত। যেহেতু চলচ্চিত্র বিশাল অর্থের উপর নির্ভরশীল, অতএব নিজস্ব উদ্যোগের অসমর্থতার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ধারায়ও একটি স্বতন্ত্র চরিত্র নিয়ে বামপন্থী শিল্পীদের অংশ নেওয়া উচিত। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে তিনি পা রেখেছিলেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নয়, চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে। সেই গল্পের বিষয়ও ছিল ভূমি থেকে উৎখাত হওয়া গ্রামের কৃষকের শহরের মজুর অর্থাৎ রিক্সাচালকে পরিণত হওয়ার বৃত্তান্ত। এখানেও রাজনীতির প্রশ্নেও একটি সুস্পষ্ট অবস্থান থেকে রচিত হয়েছিল চিত্রনাট্য। পরবর্তীতে তিনি যখন পুরোদস্তুর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন সেখানেও সঙ্গীতে এসেছে গণনাট্য আন্দোলন থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর। সলিল সারা জীবন ধরে একটি কথা বলেছেন, গণনাট্যের সর্বভারতীয় সম্মেলনগুলি ছিল তাঁর কাছে গোর্কির বিশ্ববিদ্যালয়ের মত। সেখানকার মঞ্চেই তিনি এই বিশাল ভারতের বৈচিত্র্যময় সাঙ্গীতিক ধারার সাথে পরিচিত হয়েছেন। এখানে শোনা গান, গানের সুর, তাল, ছন্দ, তালবাদ্য তাঁর সাঙ্গীতিক ভুবনকে সমৃদ্ধ করেছে। 

 

 

ছোটবেলা থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সাথে তাঁর নিবিড় থেকে নিবিড়তর পরিচয় হয়েছে। গণনাট্যের দৌলতে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন আসমুদ্র হিমাচল সঙ্গীতের বহুস্বরিক অভিজ্ঞতায়। নিজের পেশাদার সঙ্গীতকারের জীবনে এই সঙ্গীত ভাণ্ডারকেই তিনি উজাড় করে দিয়েছেন নিজের সৃষ্টি ধারায়। ফলে যে অভিযোগ একশ্রেণির সহপথিক বন্ধুরা করতেন, সলিল গণনাট্য ছেড়ে পালিয়ে গেছে, সেটা সত্য নয়। সত্য উল্টোটা, সলিল গণনাট্যকেই সঙ্গে নিয়ে গেছেন মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে। শুধু চলচ্চিত্র জগতেই নয়, তাঁর পেশাদারি সঙ্গীতের সর্বত্রই গণনাট্যের উপস্থিতি। শুধু সলিল নয়, পেটের তাগিদে এবং তখনকার রাজনৈতিক আন্দোলনের টালমাটাল অবস্থায় সারা দেশের বহু গণনাট্য শিল্পী মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন। এদের আসা, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিশেষ করে একটি রুচির জন্ম দিয়েছিল সুরে ও বাণীতে। সলিল বলেছিলেন, গণনাট্য স্বপ্ন দেখত সারা দেশের নানা প্রান্তের লোকসুর, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাসায়নিক মিলনে একটি ভারতীয় সুরধারার জন্ম হবে যাতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাট থেকে মনিপুর সমভাবে সাড়া দেবে। বারবার ভাঙনে বিপর্যস্ত গণনাট্য আন্দোলন সে কাজ করতে না পারলেও মুম্বাইয়ের হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত সেই সুরধারার জন্ম দিয়েছে যার আবেদন আসমুদ্র হিমাচলে হয়েছে অভিন্ন। এই সুরধারার গড়ে তোলার এক প্রধান ঋত্বিক ছিলেন সলিল চৌধুরী। 
 

Comments :0

Login to leave a comment