PANCHAYAT ELECTION

বামপন্থার পুনরুত্থানেই নিহিত বাংলার ভবিষ্যৎ, সেলিম

কলকাতা রাজ্য পঞ্চায়েত ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের বুকে বামপন্থীদের পুনরুত্থান দেখে আতঙ্কিত তৃণমূল এবং বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিথ্যা প্রচার করছে মিডিয়ার একাংশের সাহায্যে। বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই অভিযোগ করে বলেছেন, রাজনীতিতে বামপন্থীদের কোনও স্বাধীন পরিসর দিতে চাইছে না তৃণমূল এবং বিজেপি। সেই জন্যই বিজেপি’র আইটি সেল ফেক প্রচার করছে তৃণমূল এবং বামেদের জোট হয়েছে বলে। আর মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল প্রচার করছে রাম-বাম জোট বলে। বাস্তবে বাংলার মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে লাল ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়ে এককাট্টা হচ্ছেন। বাংলার পুনরুজ্জীবনের ভবিষ্যৎ নিহিত আছে বামপন্থার এই পুনরুত্থানের মধ্যেই। 
রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল ও পুলিশের হামলা, হুমকি, মিথ্যা মামলার মোকাবিলা করে দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত ফিরে পেতে বাংলার মানুষের লড়াইয়ের উল্লেখ করে এদিন সেলিম বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধীদের এককাট্টা করে বামপন্থীরা লড়াই করছে। দুর্নীতি কায়েম রাখতে দুষ্কৃতী যোগের কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া এবং প্রার্থী পদে থেকে যাওয়াটাই একটা কঠিন যুদ্ধের চেহারা নিয়েছে। এরমধ্যেও আমরা বলছি, পঞ্চায়েতের তিন স্তরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলিয়ে প্রতি বুথেই ভোট হবে। বামফ্রন্ট অথবা তাদের সহযোগীরা অথবা তাদের সমর্থিতরা লড়ছেন, কাজেই সব বুথে ভোট হবে। এতেই তৃণমূল বিজেপি’র বুক ধড়ফড় করছে। তাই রাজনীতিতে বামপন্থীদের স্বাধীন পরিসর চাপা দিতে মিথ্যা প্রচার করছে। পাটনার বৈঠক দেখিয়ে একদল প্রচার করছে যে তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের জোট হয়ে গেছে, আরেকদল রাম-বাম জোট বলে বিজেপি’র মিছিলে লাল ঝান্ডা খুঁজছে। গণশক্তি পত্রিকার সংবাদকেও বিকৃত করে ফেক নিউজ প্রচার করা হয়েছে সোশাল মিডিয়াতে। 


সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পাটনা বৈঠকে কোনও জোটের কথা হয়নি। রাজ্যে রাজ্যে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী বিজেপি’র ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে, জনজীবনের দুর্দশা নিয়ে লড়াই হবে। লোকসভা নির্বাচনের পূর্ববর্তী কোনও সর্বভারতীয় জোটের সম্ভাবনা নেই। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই করছে, ভবিষ্যতেও তাই হবে। এরাজ্যে নবান্নের দুর্নীতি দুষ্কৃতীরাজ থেকে ছাপান্ন ইঞ্চি মানুষকে বাঁচাবে না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যারা বিজেপি’র হয়ে জিতেছিল তারা তো তৃণমূলে চলে গেছে। তৃণমূলের জন্মের পর মমতা ব্যানার্জি নিজেই বলেছিলেন বিজেপি-কে নিয়ে মহাজোট করে বামপন্থীদের হটাবেন। আর বিজেপি যখনই বিপাকে পড়ে তখনই ঝাঁপি থেকে মমতা ব্যানার্জিকে বের করে আনেন। এখনও তারা তৃণমূলকে দিয়ে জাতীয় স্তরের বিজেপি বিরোধী শিবিরকে ভাগ করতে চাইছে। তৃণমূল এমনই একটি দল যারা সবসময়েই বিজেপি’র সম্ভাব্য সঙ্গী।
পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের জয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়, ওটা জবরদস্তির জয়। লাভপুর, নানুর, ভাঙর, ডায়মন্ডহারবার, মিনাখাঁ ইত্যাদি কিছু জায়গায় এটা করতে পেরেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলছি, প্রায় সব বুথেই ভোট হবে, তিন স্তর মিলিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী প্রার্থী আছে। 


অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বারবার আদালতের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং সরকার যদি আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করে তাহলে আদালত তো হস্তক্ষেপ করবেই। কিন্তু আমরা বামপন্থীরা জনগণের আদালতে রয়েছি, রায়দান বুথে বুথে হবে। দুর্নীতি ও দুষ্কৃতী চক্র ভাঙতে মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে বলেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে এত বেশি সংখ্যায় মনোনয়ন জমা দেওয়া ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা সম্ভব হয়েছে।
দুর্নীতি ও দুষ্কৃতী চক্রের জন্য তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়কেই দায়ী করে তিনি বলেছেন, ১৮ বছরে ভোটাধিকার দিয়ে, মহিলা, তফসিলি জাতি ও আদিবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কেন গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ যুবদের কাজের জন্য ভিনরাজ্যে গিয়ে বিপদে পড়তে হবে? স্থানীয় মানুষ যাতে স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়নে শরিক হতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত দুই দশকে তৃণমূল সেটা লুটের ক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে। দুর্নীতি রুখতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোনও মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করেনি। আর দুর্নীতিতে এরাজ্যে তৃণমূল আর বিজেপি’র ফারাক কোথায়? পার্থ চ্যাটার্জি জেলে, আর শুভেন্দু অধিকারী বাইরে, এটুকুই ফারাক। 


এদিকে, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল নকল ব্যালট পেপার ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। এই সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, যে রাজ্যে জাল ওএমআর শিটে চাকরি হয়, সেই রাজ্যে জাল ব্যালটের আশঙ্কা তো আছেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় স্তরে ব্যালট ছাপা হয়, এই কারণে আমরা সারা রাজ্যে বামপন্থী কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। শুধু জাল ব্যালট নয়, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া যাতে বানচাল না হয় তার জন্য সব দিক থেকেই খেয়াল রাখতে হবে। গতবার ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলা হয়েছিল। এবার যাতে বুথ থেকে ব্যালট বাক্স ঠিক মতো স্ট্রংরুমে নিয়ে যাওয়া হয়, স্ট্রংরুমে যাতে সিসিটিভি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় এগুলি নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, মানুষের কিন্তু নজরদারি থাকবে। পঞ্চায়েতকে লুটেরামুক্ত করতে মানুষের মেজাজ বুঝে নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন কাজ করুক।
 

Comments :0

Login to leave a comment