Editorial

নির্লজ্জ এবং প্রতারক

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিক্ষোভ থামছে না, মার খেয়েও চাকরি ফেরানোর দাবিতে অনড় আন্দোলন চলছে । দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস (নাকি নতুন প্রতারণা), নবান্ন থেকে মুখ্যসচিবের অনুরোধ কোনও কিছুই বিক্ষোভের আগুন নেভাতে পারছে না। একের পর এক জেলায় শিক্ষা দপ্তরে তালা পড়ছে, চলছে রাস্তা অবরোধ, সর্বত্র বিক্ষোভের আগুন, চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে এরাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও সোচ্চার। শিক্ষা দুর্নীতির জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী বলছেন সকলেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ? সীমাহীন প্রতারণার রাস্তা থেকে এতটুকু সরেননি। সরবেন কি করে? দুর্নীতিই তাঁর দলের লালন পালনের একমাত্র অবলম্বন। না হলে মুখ্যমন্ত্রী তো   আদালতের কাছে প্রকৃত তথ্য দিয়ে যোগ্যদের চাকরি রক্ষার ব্যবস্থা করতেই পারতেন। পারছেন না, কারণ  তাঁর শিক্ষামন্ত্রী থেকে গোটা প্রশাসন, তাঁর পারিষদবর্গ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এদের আড়াল না করলে তিনি নিজে বাঁচবেন কি করে?    
কি দেখছে গোটা রাজ্য? নেতাজী ইন্ডোরের সভায় সরকার পাশে আছে বলার  দু’দিনের মধ্যেই আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল শিক্ষকরা পুলিশের লাঠিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন, তারপরও চলছে অনবরত লাঠি। চলল ঘাড় ধাক্কা, চালালো  লাথিও। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বেশ কয়েকজন শিক্ষক। থানায় আটক করা হলো  শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাদের দাবি ছিল চাকরিতে সসম্মানে পুনর্বহালের। আর তাতেই নেমে এল পুলিশি অত্যাচার। পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর প্রশাসন কতটা নির্লজ্জ হলে চাকরিহারা শিক্ষকদেরই কাঠগড়ায় তুলে পুলিশের লাঠি আর লাথির বৈধতা দিতে পারে ! এই নৃশংস হামলা কী তাহলে মুখ্যমন্ত্রীরই পরিকল্পনার অংশ ?  প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। না হলে এই নৃশংস পুলিশি হামলার পর রাজ্যের মুখ্যসচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের কি করে বলতে পারেন, এই  ঘটনা কাঙ্ক্ষিত না হলেও, ঘটনার পিছনের বিষয়ও আমরা খতিয়ে দেখবো! আইনশৃঙ্খলা ভাঙলে পুলিশ ব্যবস্থা তো নেবেই। সামাজিক মাধ্যমে কলকাতা পুলিশের বয়ান আরও মারাত্মক, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে, আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করেছে মাত্র। সেই সময়েই চাকরিহারা শিক্ষকদের ওপর হালকা বলপ্রয়োগের যেসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে তাতে শিউরে উঠেছেন রাজ্যবাসী।
শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক শিক্ষাকর্মীর চাকরি এক ধাক্কায় চলে গিয়েছে, যার মধ্যে একটা বড় অংশ রয়েছেন, যাঁরা নির্দোষ, অর্থাৎ যোগ্য। কিন্তু কিভাবে অযোগ্য আর যোগ্য আলাদা করা যাবে, তার কোনও তথ্য সরকার দিচ্ছে না। এটা তো সরকারেরই দায়। সবাই এখন জানেন, তথ্য সব আগেই লোপাট করা হয়েছে। অপরাধী যারা, অর্থাৎ যারা তৃণমূলের নেতা প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি, যাদের  সীমাহীন দুর্নীতির শিকার এরা সবাই, সেই দুর্নীতিরাজকে  বিচারের আওতায় আনার রাস্তা খুঁজে বার করা যাবে কি করে তা এ রাজ্যের সাধারণ মানুষই ঠিক করে নেবেন। একের পর এক  দুর্নীতি প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ্যে আসছে, ‌অথচ সে সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী কিছুই জানেন না,  রাজ্যবাসীর কাছে এখন তা কষ্টকল্পিত।  ভয়ঙ্কর সব সরকারি দুর্নীতির পরও সরকারের প্রধান মমতা ব্যনার্জি  এতটুকু লজ্জিত নন, বরং স্পর্ধিত। এই  মহা অপরাধের দায় কবে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন তিনি তারই প্রতীক্ষায় এই বাংলা। প্রতারণারও তো একটা শেষ থাকতে হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment