Editorial

এখনও কেন মন্ত্রী?

সম্পাদকীয় বিভাগ

সংসদে সংবিধান নিয়ে আলোচনায় সংবিধান প্রণেতাকেই অপমান ও অশ্রদ্ধা করলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। অথচ এই সংবিধান হাতে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করে তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এহেন ব্যক্তির মন্ত্রী থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। ন্যূনতম বাস্তববোধ ও বিবেকবোধ থাকলে আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে নিজের থেকেই পদত্যাগ করতেন। তারজন্য তার পদত্যাগের সোচ্চার দাবি তোলার বা ক্ষমা চাইবার দাবি তোলার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছু হবার সম্ভাবনা কম। কারণ আম্বেদকরকে যিনি অবজ্ঞা করেছেন তিনি অন্ধ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের আদর্শে জারিত। মনুবাদ তথা ব্রাহ্মণ্যবাদ যাদের মজ্জায় তারা আর যাই হোক আম্বেদকরকে সহ্য করতে পারে না। কারণ, সমাজ থে‍‌কে জাত-পাত, বর্ণ প্রথার উচ্ছেদ সাধনই ছিল তাঁর মহান ব্রত। জাত-পাতের বিভাজনকে সরা‍‌নোর লক্ষ্যেই সংবিধানের কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন। বিজেপি’র পূর্বসূরি জনসঙ্ঘ বা আরএসএস বরাবর আম্বেদকরের বিরোধিতা করেছেন। আম্বেদকর প্রণীত সংবিধানকে বিদেশি সংবিধান বলে অস্বীকৃতি দিতেও দ্বিধা করেনি। তারা অশোক স্তম্ভকেও মেনে নিতে রাজি ছিল না। আসলে হিন্দুত্ববাদী অতি দক্ষিণপন্থী আরএসএস চেয়েছিল মনুসংহিতার আদলে ভারতের সংবিধান রচিত হোক। সেখানে জাত ও বর্ণ প্রথা স্বীকৃতি পাবে। নারীর অধিকার স্বীকৃত হবে না। এমন‍‌কি এরা তেরঙ্গা জাতীয় পতাকাকেও মানতে রাজি ছিল না।
সেই আরএসএস-জনসঙ্ঘের পতাকাই বহন করছে আজকের বিজেপি। আরএসএস আদর্শ ও লক্ষ্য পূরণই বিজেপি’র দায়। তাই মোদী সরকার নিষ্ঠার সঙ্গে সততার সঙ্গে সংবিধানকে বাস্তবের মাটিতে প্রতিফলিত করার ঠিকাদারি নেয়নি। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য এই সংবিধান বাতিল করে আরএসএস’র ভাবনা অনুযায়ী নতুন সংবিধান তৈরি করা। কিন্তু সেটা তো চাইলেই সম্ভব নয়। যতদিন না সেটা সম্ভব হচ্ছে ততদিন তেতো হলেও এই সংবিধানকে তাদের গিলতে হবে। অবশ্য প্রতিনিয়ত প্রতি পদক্ষেপে সংবিধানকে গুরুত্বহীন করার পরিকল্পিত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আরএসএস-বিজেপি’র লক্ষ্য হিন্দু রাষ্ট্র। তাই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে তারা সহ্য করতে পারে না। তারা সমানাধিকারের আদর্শে বিশ্বাস করে না। তীব্র শ্রেণি শোষণ, শ্রেণি বৈষম্যকে বজায় রেখে শ্রেণি শাসনকে শক্তিশালী করতে চায়। তাই সমাজতান্ত্রিক শব্দে তাদের ঘোর আপত্তি। কাশ্মীরের বি‍‌শেষ সাংবিধানিক অধিকারেও তারা চির বিরোধী। তাই সুযোগ পেয়ে তা বাতিল করে দিয়েছে। এইভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত তাদের বিরোধী বিষয়গুলি একে একে বাতিল করতে চায়। সেইজন্য গত লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসন দখলের জন্য মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। ৪০০ আসন পেলে এক নিমেষে আম্বেদকরের সংবিধান বাতিল করে দিয়ে মনুবাদী সংবিধান চালু করে দিত। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে না বলেই ওরা ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ-ঘৃণা ছড়িয়ে বিভাজন করে। মসজিদ-দরগা ধ্বংস করে মন্দির বানাতে চায়। ওরা যা কিছু চায় বা করে আম্বেদকরের সংবিধান সেসব অনুমোদন করে না। সে জন্যই সংবিধান তাদের গাত্রদাহের কারণ। আম্বেদকর তো বটেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment