শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য। দেখা গিয়েছে অবাধ ভোট লুটের ছবি। ভোটদানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা থেকে মারামারি, ব্যালট বাক্স নষ্ট করা, বুথ দখল, হিংসা, বোমা, গুলি, ব্যালট লুট একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল সকাল থেকেই। বিভিন্ন জেলার কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সন্ত্রাসের মধ্যেই শনিবার রাজ্যে ভোট পড়েছে ৮০.৭১ শতাংশ। সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। সেখানে ভোটদানের হার ৮৪.৭৯ শতাংশ।
ভোট পরবর্তী অশান্তি অব্যাহত জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে। পঞ্চায়েতের ভোট লুট করতে না পেরে বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি আক্রমণ চালালো শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। প্রার্থীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার ভোট চলাকালীন ব্যালট বক্স পুড়িয়ে ফেলা, লাথি মেরে ব্যালট বক্স মাঠে নিয়ে এসে ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ। ভোট লুট করতে আসা তৃণমূলীদের সিপিআই(এম) এর মহিলা প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে ভোট লুট আটকে দেয়। পাহাড়পুরের একটি বুথে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষ শুরু করে। ছাপ্পা ভোটের ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন এক মহিলা সহ ৮জন সাংবাদিক। যাদের অধিকাংশই এখনো জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মালবাজার মহকুমায় খয়েরবাড়ী ২১/১৮০ নং বুথে ভোট চলাকালীন তৃণমুলী গুন্ডাদের হাতে নিগৃহীত হন সিপিআই(এম) প্রার্থী রামান্তি মুন্ডা। কারণ দুষ্কৃতীরা ভোট লুট করতে আসলে বাধা দেন প্রার্থী। তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়। কাপড় ছিড়ে দেয় ও পেটে লাথি মারে বলে অভিযোগ। তাঁর ১৫ দিনের শিশু সন্তানকে নিয়ে বর্তমানে রমান্তি মুন্ডা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাজগঞ্জের ১৮/১২১ জুম্মাগছ বুথের ভোট লুট করতে তৃণমূলের বাহিনীকে বাধা দেওয়ায় রাতে সিপিআই(এম) প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূল দুষ্কৃতীদের অভিযোগ সিপিআই(এম) কর্মীরা তাদের ভোট লুটে বাধা দিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য মুক্তাল হোসেন, স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা সওকত আলি, মহিলা নেত্রী রিনা সরকার সহ অন্যান্য পার্টি নেত্রীবৃন্দ। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে রাজগঞ্জ থানায় এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার হারিয়ে যাওয়া ব্যালট বক্স উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য জলপাইগুড়িতে। ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জানা গেছে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুর ১৮/২২৫ হাকিমপাড়া বিএফপি বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণের পর ব্যালট বক্স গুলি লুঠ হয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত খোজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। রবিবার দুপুরে পুকুর ও নর্দমা থেকে মোট ২ টি বক্স উদ্ধার হয়। পঞ্চায়েত সমিতির ব্যালট বক্সটি এখোনও নিখোঁজ। যদিও এই বিষয়ে প্রশাসন এই বিষয়ে কিছু জানায়নি।
যদিও পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের রায় এই মুহূর্তে জলপাইগুড়ির ডিসিআরসি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অস্থায়ী স্ট্রং রুম তালা বন্দী। যার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সঙ্গে রয়েছে রাজ্য পুলিশও।
রবিবার সকালে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায় দেখা যাচ্ছে জেলার ১৬ লক্ষ্য ৭৩ হাজার ৩৩৭ মোট ভোটারের মধ্যে, ১২ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৬৬ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। ভোট পড়েছে মোট ভোটারের প্রায় ৮২ শতাংশ।
রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় ১০টি, নাগরাকাটার ১টি ও জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ২টি পোলিং স্টেশনের কাগজপত্রের অসঙ্গতি থাকায় সিপিআই (এম) জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির তরফে রবিবার জেলা শাসকের নিকট মোট ২৮টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি করা হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের তরফে ১৪ টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচন কথা জানানো হয়েছে। সোমবার সেখানে পুনঃনির্বাচনের কথা রবিবার বিকেলে জানালেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা।
Comments :0