CORRUPTION PHD

পিএইচডি’র আসন দুর্নীতি বিদ্যাসাগরে,
অভিযোগ দায়ের পুলিশে

রাজ্য জেলা

CORRUPTION PHD

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলল পিএইচডি আসন পাইয়ে দেওয়ার চক্রের হদিশ। প্রতারিত হওয়া দম্পতি শেষ পর্যন্ত দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন। পরিবর্তনের জমানায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে দখল করে তৃণমূল ছাত্রপরিষদ নাম ধারী  এমন চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। এমন চক্রের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়াও হয়েছে। 

অভিযোগ, তৃণমূলের এই বাহিনীই মেধা তালিকার ছাত্রদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়ে, কখনো ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষমানদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে এমবিএ, এমসিএ তে ভর্তি করানোর কাজ করেছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত বাইরের এক্সটেনশন বিভাগ এমন কেন্দ্র থেকেই এমন জালিয়াতি চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ প্রকাশ্যে এলো। 

জালিয়াতির শিকার এমন দম্পতি তেমনি এক এক্সটেশন কেন্দ্রের এক কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি পাওয়া এক শিক্ষককের খপ্পরে পড়েন উঠে আসে। কেন্দ্রীয় তদন্ত টীমের মাধ্যমে গত ১১বছরে কারা কারা এমন পিএইচডি সহ এমফিল করার সুযোগ পেয়েছেন বা সেই ডিগ্রি পেয়েছেন তার তদন্ত হলে অনেক কিছুই প্রকাশ পাবে বলে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন পড়ুয়া বা পাশ করে যাওয়া মেধাবী পড়ুয়াদের বক্তব্য। 

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কয়েক বছরে তৃণমূলের ছাত্রনেতা হয়ে চাকরি পেয়েছেন ডেজন খানেক। এদের আবার অনেকের বড় বড় ফ্ল্যাট সহ দুচাকা থেকে চার চাকার গাড়ীও রয়েছে। পিএইচডি'র আসন চক্রের খপ্পরে পড়া দম্পতি, প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খুইয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়। 

দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেছেন প্রতারিত দম্পতি। জানা যায়, কলকাতার টালা এলাকার বাসিন্দা শুভঙ্কর মান্না ও তাঁর স্ত্রী-কে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ (MBA) বিভাগে  ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি'র সুযোগ করিয়ে দেওয়ার নামে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দুই প্রতারক। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়ো রসিদ ও স্ট্যাম্প ছাপিয়ে তাঁদের দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। চলতি মাসের (এপ্রিলের) দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁরা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে  এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুরোটাই ভুয়ো! তাঁরা প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন। এরপরই, বুধবার (১৯ এপ্রিল) ওই দম্পতি এফআইআর  দায়ের করেন সিঁথি থানায়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। 

শুভঙ্কর মান্না জানান, কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠা‌ন থেকে ২০০৮ সালে এমবিএ করেন তিনি। সেখানে শিক্ষকতা করতেন মণিগ্রীব বাগ নামে এক ব্যক্তি। পাশ করে বেরোনোর পরেও ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। মণিগ্রীবই এক দিন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন শুভঙ্কর পিএইচডি করতে ইচ্ছুক কি না! এর পরই তিনি পিন্টু রানা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শুভঙ্করকে যোগাযোগ করতে বলেন। শুভঙ্করকে বলা হয়, পিন্টু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। শুভঙ্কর এও বলেন, "মণিগ্রীব স্যার বলায় সন্দেহ হয়নি। স্যারও ওই  বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি করেছেন বলে জানান। প্রথমে অল্প কিছু টাকা পিন্টুকে পাঠাতে বলা হয়। এর পরে কয়েক দফায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা দিই।" 

এরপর, মণিগ্রীব তাঁকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাম্প সহ একটি রসিদ দেন বলে অভিযোগ। এরপর, তাঁর স্ত্রী-কেও ম্যানেজমেন্টের একটি সংরক্ষিত আসনে পিএইচডি করাতে চান কিনা জানতে চাওয়া হয়! তিনি রাজি হলে ফের ৭০ হাজার টাকা দিতে হয় পিন্টু রানাকে। যদিও, সেই টাকার রসিদ দেওয়া হয়নি। এরপরই, চলতি মাসের  দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৩এপ্রিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এসে তাঁরা (ওই দম্পতি) সত্যিটা জানতে পারেন! 

এই বিষয়ে শুক্রবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "হ্যাঁ, ওঁরা এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। আমাদের ওই রসিদটিও দেখান এবং পুরো বিষয়টি বলেন। আমরা বুঝতে পারি ওঁরা প্রতারিত হয়েছেন। সেকথা ওঁদের জানাই। ইতিমধ্যে ওঁরা থানায় অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি। আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য সহ লিখিতভাবে জানালে, আমরাও থানায় একটা এফ আই আর করতে পারি। কারণ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। আপাতত আমরা তদন্তে সবরকম সাহায্য করবো।" 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এও জানা যায়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়-তে পিএইচডি'র ক্ষেত্রে ভর্তির সময়ে দিতে হয় ১০,১০০ টাকা। কোর্সওয়ার্কের জন্য ৮ হাজার টাকা এবং থিসিস জমার সময়ে আরও ১৭ হাজার। সবমিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে, এভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে পিএইচডি-তে সুযোগ পাওয়া যায় না বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।  

Comments :0

Login to leave a comment