অলকেশ দাস
যে তৃণমূল লোকসভা নির্বাচনের মধ্যপথে ইন্ডিয়া ব্লককে ডজ করে সাইড লাইনের বাইরে ফেলতে চাইছিল সে এখন ইন্ডিয়া ব্লকে ব্যাপক উৎসাহী। লোকসভায় সদ্য হওয়া তৃণমূলের দলনেতা এসআইআর বিরোধিতা করে নির্বাচনে গণতন্ত্র নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেছেন। ঢাকার ঘোড়ারাও হাসছে। নিজের কেন্দ্রের গত লোকসভা নির্বাচনে ইভিএমে নিজের নামের বোতামের ওপর সেলোটেপ আটকানো ছিল বলে অভিযোগ। বিরোধী প্রার্থীর নামের উপর ব্ল্যাকটেপ। যাতে নাম অন্য কেউ না দেখতে পায়। এমনই মহামানব ৯৯ শতাংশ করে ভোট পান ১৯টি বুথে। এইভাবে ৭ লাখ ভোটে জেতা। অভিযোগ এরকমই। বিস্তীর্ণ এলাকায় পঞ্চায়েতে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। তিনি এবং মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যের গণতন্ত্রহীনতার নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদের শীর্ষে। কলেজ নির্বাচন বন্ধ। সমবায় থেকে, পঞ্চায়েত, পৌরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা— মনোনয়নপত্র প্রদান থেকে শুরু করে একেবারে গণনা কেন্দ্র— এদের নেতৃত্বে বাহুবলি, পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসন, পুলিশের দাপাদাপির মধ্য দিয়ে লুট হয়ে যায় গণতন্ত্র। ধান্দার ধনতন্ত্রের, কর্পোরেট হিন্দুত্বের প্রযোজনায় দুর্নীতির আধারে থেকে যায় সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষমতা। কিন্তু এবার ভয় পেয়েছে তৃণমূল। ক্ষমতা হারানোর ভয়।
আমাকে বাঁচাও প্রকল্প
সবাই জানে তৃণমূলের সংসদীয় ক্ষমতা তাসের ঘরের উপর প্রতিষ্ঠিত। লোভ, ভয়, অর্থ, প্রশাসন, পুলিশ ছাড়াও রয়েছে বুথে বুথে অস্তিত্বহীন ভোটার, মৃত ভোটার, একই ভোটারকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নাম তুলিয়ে রাখা। গড়ে বুথ প্রতি কমপক্ষে পঁচিশ জনের এরকম অনস্তিত্বর অস্তিত্ব। সংখ্যায় কমপক্ষে কুড়ি লাখ। বিশেষ বিশেষ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা পৌঁছাতে পারে প্রায় ৪০ লাখে। রাহুল গান্ধীর দেখানো ভোট চুরির ৫ পন্থা এ রাজ্যে তৃণমূলের সৌজন্যে ১০ পন্থা। চুরির সৃজনশীলতা। এসআইআর যদি এই জায়গায় ধাক্কা দেয়? এটাইতো ক্ষমতার প্রাণভোমরা। সেই জন্য গণতন্ত্র ইত্যাদি ভেক। আসলে এদের আন্দোলনটা হলো— 'আমাকে বাঁচাও প্রকল্প' ।
জনবিরোধী, কর্পোরেটমুখী, সাম্প্রদায়িক, জাতিবাদী, কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার এখন কর্পোরেট-হিন্দুত্বের রূপায়ণে তীব্র আগ্রাসী। নয়া উদার অর্থনীতির পূর্ণ প্রয়োগ চলছে। বহুত্ববাদ হটাও। বহুত্ববাদের বদলে এককেন্দ্রিকরণ। তারই নমুনা ছিল ' এক দেশ- এক নির্বাচন'। ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন সেই লক্ষ্যে।
প্রযুক্তি নির্ভর সর্বভারতীয় একটি সংহত নির্বাচক তালিকা লক্ষ্য।
আগলি স্টেশন পশ্চিম বঙ্গাল
৩০ দিনের মধ্যে ভোটার যাচাই-করণের প্রক্রিয়া ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ নির্বাচকের সম্পন্ন হলো বিহারে। তার চার দিনের মাথায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়ে গেল। ৬৫ লক্ষ লোকের নাম বাদ গেল। তার কোনও তালিকা প্রকাশ হলো না নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। এদের মধ্যে কারা মৃত, কারা স্থানান্তরিত, কাদের ফরম জমা পড়েনি ইত্যাদি জানতেই পারলো না বাদ যাওয়া ভোটারেরা। পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা এবং বৈষম্যহীনতা—ভোটার তালিকা তৈরির সময় এইটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অথচ ঘটেছে তার উল্টো। ভোটার তালিকায় মৃত বলে ঘোষিত ২ জন পায়ে হেঁটে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বলে এসেছেন— আমরা বেঁচে আছি গো। তালিকায় সদ্য মৃত সাতজন নয়াদিল্লিতে রাহুল গান্ধীর বাসভবনে চা খেয়ে এসেছেন। যে লোকটা কাজের টানে বাড়িতে নেই দু’মাস, তার নাম বাদ দিয়ে দেবে? ভোটার লিস্টে নাম থাকাটা একজনের বিধি সম্মত অধিকার। বাদ দিতে গেলে যথেষ্ট কারণ দেখিয়ে বাদ দিতে হবে। মানছে তা ? যে হিন্দুদের মুসলমান বাদ যাবে বলে উত্তেজিত করা হচ্ছিল নাম বাদ যাওয়াদের মধ্যে তারা ৮৩.৭ শতাংশ। মুসলিম ১৬.৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় দশ লাখ। গত নির্বাচনে ৮৭ টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিল ৫০০০-এর কম ভোটের ব্যবধানে। ৬৫ লক্ষ বাদ যাওয়া ভোটারদের ২৪৩ টা বিধানসভা কেন্দ্র দিয়ে ভাগ করলে গড়ে প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিযুক্ত ভোটার ২৬,৭৪৮ জন। আর এখন বিধানসভায় এনডিএ ১৩১। ইন্ডিয়া ১১১। সুতরাং পাশার দান উলটে দিয়ে বিজেপি’র পক্ষে নিয়ে আসার জন্যই যে এত কিছুর আয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এসআইআর মানে ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ নয় -Policy, Propoganda, Prosecution. পরিকল্পিত নীতি, পরিকল্পিত প্রচার, পরিকল্পিত বিচার। বর্জনমূলক এক পাইলট প্রজেক্ট। বিহার আসলে ট্রেলার। পিকচার আভি বাকি হ্যায়। কোথায় হবে? আগলি স্টেশন পশ্চিম বঙ্গাল।
আপাতত সর্বোচ্চ আদালত কান মুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের। বলেছে এই ৬৫ লক্ষের নাম প্রকাশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কারণ দর্শাতে হবে কেন এদের নাম বাদ গেল। নিজস্ব ওয়েবসাইটে এবং অন্যান্য জায়গায়। যাতে জনগণ জানতে পারে। যে আধার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এত নাক সিটকানো ছিল তাকেও পরিচিতি ও বাসস্থানের নথি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। আপাতত স্বস্তি। পরে ফলে পরিচয় পাওয়া যাবে।
খড়ের মধ্যে আলপিন খোঁজা
উদ্বাস্তুদের এরাজ্যে অস্তিত্ব কে অস্বীকার করবে? চোখের জলে এরা এদেশে এসেছে। স্বাধীনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করে,বাংলাভাগের কারিগর নেতা শ্যামাপ্রসাদকে মাথায় তুলে নাচে তারাই এখন কার্যত এসআইআর’র মাধ্যমে এদের রাষ্ট্রহীন করতে চাইছে। এরা যখন পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছে বা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, যেভাবে এসেছে তাতে এদের হাতে কোনও কাগজ নেই। জড়তা এতটাই ছিল যে ন্যাচারালাইজেশনে ১২ বছরের পর নাগরিকত্বের আবেদনও করেনি। ভোটার লিস্টে নাম তুলতে ভয় পেয়েছে। এদের কাছে জন্ম শংসাপত্র? খড়ের মধ্যে আলপিন খোঁজা।
আসামের এনআরসিতে ১৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল। ১৩ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ গিয়েছিল। ১ লক্ষ গোর্খা। সুতরাং মুসলমানকে সামনে রেখে যে ক্লিনসিং পরিকল্পনা হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হবে গরিব, প্রান্তিক, সংখ্যালঘু, তফসিলি, আদিবাসী। আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ডারের ৯ গুণ লম্বা এদেশের বাংলাদেশ সীমান্ত। আসামের জনসংখ্যার ৩ গুণ জনসংখ্যা এ রাজ্যে। কত জায়গায় যে সীমান্ত ফাঁকা তার ঠিক নেই। বিএসএফ ঠিক সময়মতো জেগে ঘুমায়।
জন্ম সার্টিফিকেট লাগবে না বলে যারা কেন্দ্রের সরকারের পাহারাদার হয়েছেন তাদের বোঝানো দরকার কিভাবে একজন মানুষ প্রমাণ করবে তার জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, বা ২০০২ সালের আগে বা ২০০২ সালের পরে? ক'জন সরকারি কর্মচারী? ক’জনের পাসপোর্ট আছে? ক'জন তফসিলি বা আদিবাসীর বনাঞ্চলের পাট্টা আছে? ক'জনের নিজের নামে জমি আছে?হাতে রইলো বংশতালিকা। অন্য কোনও কাগজ না থাকলে এই বংশতালিকা হাতে পেলেই ম্যাপের বাইরে ফেলে দেওয়ার অনেক সুযোগ। সুতরাং শেষ অবধি নিজের জন্মক্ষণ ,জন্মস্থান ১৯৮৭ এর আগে জন্ম হলে। '৮৭ এর পর থেকে ২০০২ সালের মধ্যে জন্ম হলে নিজের সঙ্গে বাবার বা মা'র জন্মক্ষণ বা জন্মস্থান। ২০০২-এর পর জন্ম হলে নিজের সঙ্গে বাবার এবং মা'র জন্মক্ষণ বা জন্মস্থানের শংসাপত্র। বাবা বা মা কারোর যদি শংসাপত্র না থাকে বা তিনি যদি এদেশের নাগরিক না হন তাহলে তার পাসপোর্ট লাগবে। প্রত্যেক ভোটারকে যেমন এই তথ্যগুলোর সঙ্গে এনুমারেশন ফরম জমা দিতে হবে সঙ্গে তিনি যে এ দেশের নাগরিক তার একটা সেল্ফ অ্যাটেস্টেড দরখাস্ত জমা দিতে হবে। বলা হচ্ছে বটে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলে ১/১১ তথ্য দিলেই হবে । কিন্তু আদতে তা জন্মশংসাপত্র অবধি পৌঁছাবে। যে সঙ্ঘীরা বলেন এসআইআর’র সঙ্গে সিএএ,এনআরসি'র কোনও সম্পর্ক নেই তারা বোকা নয়, লোক ঠকানো মহাচালাক। '৮৭ সাল, ২০০৩সাল, মা, বাবার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া,নতুন স্মার্ট ডিজিটাল কার্ডের পরিকল্পনা সব কিছুর মধ্যেই তা লুকোনো আছে। এনআরসি পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল আসাম। এসআইআর’র পরীক্ষা কেন্দ্র বিহার। দুটোরই লক্ষ্য হলো ভোটার বিয়োজন, অস্থিরতা উৎপাদন, বিজেপি’র স্বার্থপূরণ। অমিত শাহ বলেছিল-পহলে হোগা সিএএ, উসকে বাদ এনআরসি। আভি জুড় গয়া এসআইআর।
এ বাংলায় এসআইআর-এ বিজেপি’র আসল মতলব কি? নির্বাচন কমিশন পরিযায়ী শ্রমিকদের অর্ডিনারি রেসিডেন্সে ভোটার করতে চাইছে। অর্থাৎ তার কর্মস্থলে। এরাজ্যে ২০১১ -র পর থেকে কাজের খরা চলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। ২০১১-য় যা ছিল ৫.৮ লক্ষ, বর্তমানে তা ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মমতা এরাজ্যে যে কাজ নেই সেটাকে ঢাকার জন্য পালটা বলেন অন্য রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করে। ৫০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে যদি রাজ্যের ভোটার হতে না দেওয়া হয় বিজেপি মনে করছে তাহলে এতে তৃণমূল ধাক্কা খাবে। এদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলমান। আবার অন্য রাজ্য থেকে এ রাজ্যে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা যদি এ রাজ্যের ভোটার হয় তাহলে তাদের নিজ ভূমি থেকে চাপ দিয়ে বিজেপি’র পক্ষে ভোট করাতে সুবিধা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এরাজ্যের ৪৫ টি বিধানসভা ক্ষেত্র আছে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় কিন্তু তাদের ভোটে প্রার্থী জেতে ১৫ হাজারের কম ভোটে। সেটা হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটের এই অঙ্কের প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
এসআইআর’র পরে…
রাজ্যের ১ কোটি ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৯১১ জন নিরক্ষর। এরা কিভাবে অনলাইনে ফরম তুলবে বা জমা দেবে, বা অনলাইনে দেখবে ভোটার তালিকায় নিজের নাম? রাজ্যের ১৪.৮৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে। কাজের সন্ধানে দিশাহারা। ঘরের বাইরে। ১ লক্ষ ৩৪ হাজারের নিজের ঘর নেই, ৮১ হাজার ২৪৪ জন ভিক্ষাবৃত্তি করেন। যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাইরের রাজ্যে কাজে যুক্ত তারা কিভাবেই বা সাত তাড়াতাড়ি রাজ্যে ফিরবে? এদের বাড়িতে না দেখলে তাদের নাম তো কেটে দেবে বিএল ও। এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের ভবিষ্যৎ ধেয়ে আসছে এ বাংলায়। যার উদ্দেশ্য- ডিটেক্ট, ডিলিট, ডিপোর্ট। এসআইআর শেষ করতে পারলে ডিটেনশন ক্যাম্প শুরু করতে বেশি সময় লাগবে না।
ধুবড়ির চান্দের ডিঙ্গা। এনআরসি থেকেই এই অঞ্চলের মানুষদের উপর নজর। এদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল যে জমি ছাড়তে হবে। তারপর বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো। রাজি না হলে তখন বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ। অথচ চার দশক ধরে এখানে বসবাস করছিল মুসলিম এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এখন সরকার থেকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে যেতে হবে না, ব্রহ্মপুত্র নদীর পাশে যাও। সরকার এক কাঠা জমি দেবে, ৫০ হাজার টাকা দেবে। ঘর করে থাকো। এত গরম নরম কেন? কেন এত তৎপরতা? জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া সমীক্ষা করে দেখিয়েছে মাটির নিচে ১০০ কোটি ৮ লক্ষ টন আকরিক লৌহ আছে। এটা শুনে আদানি ওখানে খনি খুঁড়তে চায়। সে জন্যই উচ্ছেদ। আদানি তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পও করতে চায়। এনআরসি, বাংলাদেশি, মুসলমান— এসব সামনের কথা, পিছনের সার সত্য হচ্ছে— পুঁজি আদি, পুঁজি অন্ত, পুঁজিই ওঙ্কার। তারই চরণে সেবা লাগে।
ঢাক ও ঢাকিদের একসঙ্গে বিসর্জন
তৃণমূল ভোটার তালিকায় জালিয়াতি করে তাকে ব্যবহার করে সংসদীয় ক্ষমতায় জোর করে টিকে থাকতে চায়। এসআইআর যদি প্রকৃত প্রয়োগ হতো তাহলে এই জালিয়াতি আটকানো যেত। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার-বিজেপিরা ওদের ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যের ষড়যন্ত্রের লাইনে হাঁটছে। বর্জনমূলক, বিভাজনের এক ষড়যন্ত্রমূলক প্রকল্পে। সুতরাং ভোটার তালিকায় ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া বিকৃতির বিরুদ্ধে সরব যেমন হতে হবে ঠিক তেমনি মুসলমান, বাংলাদেশি, অনুপ্রবেশকারী স্লোগানকে সামনে রেখে যাতে নিজেদের স্বার্থকে চরিতার্থ করতে না পারে তারও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দু’দলেরই মুখের সামনে মুখোশ রয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় মোদীর বক্তৃতায় আরএসএস’র প্রশংসা ঝরে পড়েছে। সঙ্ঘেরই আঙ্গুলি হেলনে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিভাগের পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে। লালকেল্লার ছবির সামনে সবার উপরে বিশ্বাসঘাতক, ব্রিটিশের দালাল সাভারকর। তার নিচে, একটু পাশে গান্ধী। গান্ধীর নিচে সুভাষ বসু। তার পাশে ভগৎ সিং। সহনশীলতার সুযোগ নিচ্ছে। ইতিহাস বিকৃতির দিকে এগচ্ছে। এসআইআরও এক বিকৃতি। আম্বেদকর ১৯৫০- এ সংবিধানে যখন এ দেশের জনগণকে সর্বজনীন ভোটাধিকার দিচ্ছেন তখন পৃথিবীর কোনও উন্নত দেশে সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। সর্বজনীন ভোটাধিকার সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। তাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার বিকৃতি এসআইআর। এর ঢাক ও ঢাকিদের একসঙ্গে বিসর্জন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
Comments :0