ভোটের আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশাকে পুঁজি করে আর একটি খুড়োর কলে গাজর ঝুলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অতীতে পরিযায়ীদের জন্য ঘোষিত প্রচেষ্টা, পরিযায়ী সহায়তা, স্নেহের পরশ-র মতো সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া প্রকল্পটিও চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যে কোনও সরকারি প্রকল্পই তৈরি বাস্তব ভিত্তির উপর। মনগড়া কল্পনার উপর দাঁড়িয়ে প্রকল্প তৈরি হলে তার অঙ্কুরেই বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।
নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের। প্রধানত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী এরাজ্যের মানুষরা নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে এলে তাদের ভাতা দেবার প্রকল্প শ্রমশ্রী। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ছাপ লাগিয়ে পুলিশ আটক করে নানাভাবে অত্যাচার ও হয়রানি করছে। অনেকেকে জোর করে সীমান্তের ওপারে তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের সর্বত্র বাংলাভাষী এরাজ্যের পরিযায়ীদের মধ্যে প্রবল ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে আতঙ্কে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বারবার ভিন রাজ্যে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ীদের ফিরে আসার কথা বলছেন। ফিরে এলে তাদের জন্য রাজ্যের মধ্যেই কাজের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা করে দলে দলে ফিরে আসছেন এমন তথ্য সরকারের কাছেও নেই। সরকারের হিসাব অনুযায়ী সম্প্রতি বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে রাজ্যে ফিরেছে এমন পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩০। অর্থাৎ পরপর হয়রানি, অত্যাচার, আটক করে নির্যাতন, অপমান ইত্যাদির কারণে যারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রাজ্যে ফিরেছেন তাদের কেউ কেউ আবার কর্মস্থলে ফিরেও গেছেন। পরবাস ছেড়ে নিজভূমে ফেরা নিঃসন্দেহে আনন্দের কিন্তু তাতে পেট ভরে না। কারণ তো কাজ নেই। তাই পেটের দায়ে তাদের পরিযায়ী হওয়াই ভবিতব্য।
করোনার সময় মমতা ব্যানার্জির সরকারের হিসাব অনুযায়ী ৪০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এসেছিলেন। তারা যাতে রাজ্যে থাকেন, পরিযায়ী না হন তার জন্য অনেক প্রকল্প সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা যথারীতি রুজির টানে পরিযায়ী হয়ে গেছেন। পরবর্তীকালে সরকার মাইগ্রান্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন করে তার অধীনে ২২ লক্ষ পরিযায়ীর নাম নথিভুক্ত করেন। অর্থাৎ ৪০ লক্ষের মধ্যে ২২ লক্ষের হদিশ সরকারের কাছে আছে। বাকি ১৮ লক্ষের কোনও খোঁজ নেই। এখন সরকার ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প ঘোষণা করে ভিন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ীদের রাজ্যে ফিরে তার সুবিধা নিতে বলছে। ফিরে এই প্রকল্পে আবেদন করলে যাতায়াতের খরচ হিসাবে এককালীন ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তারপর এক বছর পর্যন্ত মাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। তার আগেই অবশ্য রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাবে। তখন আর ভাতা দেবার দায় থাকবে না।
ন্যূনতম যারা খোঁজ খবর রাখেন তারা জানেন পাঁচ-দশ হাজার টাকা রোজগারের জন্য কেউ পরিযায়ী শ্রমিক হবে না। তাই অনেক বেশি রোজগার ছেড়ে দু’-একজন ছাড়া কেউ ৫ হাজার টাকা ভাতা নিতে রাজ্যে ফিরবে না। রাজ্যে কোনোভাবে একটা কাজ জুটলেও ভিন রাজ্যের আয় থেকে অনেক কম আয় হবে। মানুষ একটু ভালভাবে বাঁচার জন্য বেশি রোজগার ও বেশি কাজ করেন। আয় কমাতে কেউ চান না। তাই পাঁচ হাজার টাকার অনুদানে কাউকে আকৃষ্ট করবে না। আসলে রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। কাজ নেই। যে কাজ আছে তাতে অতি সামান্য মজুরি। বেশি মজুরির ভালো কাজ দিয়ে পরিযায়ীদের রাজ্যে ফেরানোর ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। তিনি কিছু নগদ ভাতা দিয়ে ভোট কিনতে পারদর্শী। তবে এই প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হবে তাতে সন্দেহ নেই।
Another 'Shri'
আরও একটি ‘শ্রী’
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0