Editorial

আর এক দানবীয় বিল

সম্পাদকীয় বিভাগ

এখনও হয়ে উঠতে না পারলেও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি সরকার যে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ত শক্তি হয়ে ওঠার সাধনায় মগ্ন তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত সংদদে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ। সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ লগ্নে এসে মোদী-শাহরা ভারতের নৈতিক মানদণ্ডকে শক্তিশালী করার ছলনার আড়ালে সংবিধানের মৌলিক ভাবনার গোড়াতেই কুঠারাঘাত করতে উদ্ধত হয়েছেন। দেশের জনমত এবং সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাবছেন দেশের বিধাতা হয়ে উঠবেন। অর্থাৎ নির্বাচকমণ্ডলীর রায়কে গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন নেই। নেই বিচার ব্যবস্থার বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় বিচার শেষ করার অপেক্ষা। সরকার বা শাসক চাইলেই অনায়াসে কেন্দ্র ও রাজ্যের যে কোনও মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার বা শাসক বিরোধী রাজনীতির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নেতাদের অঙ্কুরে বিনাশ করার হাতিয়ার হিসাবে মাথা খাটিয়ে আবিষ্কার করেছে এমন একটি বিল। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যে কোনও মন্ত্রী ‘গুরুতর’ অভিযোগে ৩০ দিন জেলবন্দি থাকলেই তার মন্ত্রিত্ব চলে যাবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করার প্রয়োজন নেই, আদালতে বিচারেরও প্রয়োজন নেই। একটা তথাকথিত ‘গুরুতর’ অভিযোগ এনে শাসকের পক্ষে ভয়ের ও বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে এমন মন্ত্রীদের বদনাম করে সরিয়ে দিলে শাসকের রাস্তা পরিষ্কার। ক্ষমতার স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে।
মোদীরা দেশবাসীকে নৈতিকতার পাঠ শেখাচ্ছেন। অসততার বিরুদ্ধে তারা কতটা নীতিনিষ্ঠ সেটা জাহির করতে সংবিধান সংশোধন করে অপরাধে অভিযুক্তদের মন্ত্রীপদ কেড়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এটা আড়াল করছেন যে তারা আসলে সংবিধানটাকেই অর্থহীন করে দিতে চাইছেন। ভারতের বিচার ব্যবস্থা সারা বিশ্বে সম্মানিত এই কারণে যে এখানে কোনও অবস্থাতেই নিরাপরাধী যাতে সাজা না পায় তার সর্বোচ্চ গ্যারান্টি আছে। হাজার অভিযোগ থাকলেও যতক্ষণ না বিচার প্রক্রিয়ার শেষে কোনও অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ তাকে নিরাপরাধী বলেই মান্যতা দিতে হবে। কিন্তু মোদীর ভারতের সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার এই অনন্যতাকেই নস্যাৎ করে অভিযুক্তকেই অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা দেবার ব্যবস্থা করছেন।
কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সিবিআই, ইডি, এনআইএ, আয়কর ইত্যাদি তদন্তকারী সংস্থা আছে। এদের মাথায় যাদের বসানো হয় সকলেই কেন্দ্রীয় শাসকের অনুগত, অনেক ক্ষেত্রে আরএসএস’র ঘনিষ্ঠ। সরকারের পছন্দ মতো না চললে এদের পদ যে বেশিদিন থাকবে না সবাই জানেন। তাই সরকার চাইলে যে কোনও বিরোধী দলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠুকে দিতে পারে। তারপর সাজানো তদন্তে মন্ত্রীকে ফাঁসিয়ে জেলে ভরতে পারে। নানা অজুহাত খাড়া করে ৩০ দিন আটকে রাখতে পারলেই কাজ হাসিল। অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ বসে অতি সহজে বিরোধী শাসিত রাজ্যের যে কোনও মন্ত্রীকে অপরাধী সাজিয়ে অপসারণ করে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নষ্ট করার অতি কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা পেয়ে গেছেন মোদী-শাহরা। প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এই আইনের আওতায় থাকলেও কোনও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করবে না। কারণ তাদের নির্দেশেই চলে তদন্ত সংস্থাগুলি। তেমনি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তদন্ত হবে না বা জেলে ঢোকানো হবে। ফ্যাসিস্তসুলভ এমন আধিপত্যকামী আইন প্রয়োগ হবে কেবলমাত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে। বিরোধী করার এটা একটা অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার।

Comments :0

Login to leave a comment