শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত গত ৬ মাস ধরে। দমদম থেকে প্রতিটি লোকাল ট্রেন শিয়ালদায় ঢুকতে সময় নিচ্ছে ৩০ মিনিটের বেশি। যেখানে সময় লাগে ১৫ মিনিট। আবার কখনও শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ছে না সময় পেরিয়ে গেলেও।
প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী নেই রেলে। নিয়োগ হচ্ছে না। পড়ে রয়েছে শূন্যপদ। তার জন্যই এই দুর্ভোগ বলে মনে করছেন নিত্যযাত্রীদের বড় অংশ। রেলকর্মীদেরও অভিজ্ঞতা হলো, কর্মীর সঙ্কটে মারাত্মক বাড়ছে কাজের চাপ।
শুক্রবারই ট্রেনের বিভ্রাটের জেরে বিধাননগর স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। মাঝেমধ্যেই যাত্রীদের ক্ষোভ এমন ফেটে পড়ছে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব যদিও দাবি করছেন যে গত পাঁচ বছরে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার নিয়োগ হয়েছে রেলে। গত ডিসেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে এই দাবি জানান তিনি। গত সপ্তাহে আবার রেলমন্ত্রী বলেছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার পদ পূরণের ‘কম্পিউটার বেসড টেস্ট’ নেওয়া হয়েছে।
ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলছেন, ‘‘ট্রেনের সমস্যার সঙ্গে কর্মীর অভাবের বিষয়টি অবশ্যই জড়িত। নিয়োগ হয়েছে বলা হলেও জমিতে বাস্তব অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা।’’
তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পূর্ব রেলে যদি ৪০ হাজার কর্মী অবসর নিয়ে থাকেন, বড়জোর দীর্ঘ ব্যবধানে, তার জায়গায় ২০ হাজার নিয়োগ হয়েছে। অবসরের তথ্যটা জানানো হচ্ছে না।’’
উল্লেখ্য, রেলমন্ত্রীই ২০২২’র ডিসেম্বরে সংসদে জানিয়েছিলেন যে রেলে শূন্যপদ ৩ লক্ষ ১২ হাজার। ২০২৩’র জুনে তথ্যের অধিকার আইনে একটি আবেদনে রেল জানায় যে ২ লক্ষ ৭৪ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার সুরক্ষা ক্ষেত্রে।
গত মাসেই রেলের পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কলকাতায় পূর্ব রেলের দপ্তরে। এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল গতবারের লোকসভা নির্বাচনে আগে। প্রধানমন্ত্রী সেই বিজ্ঞপ্তি সামনে রেখে প্রচারও চালিয়েছিলেন!
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা হলো, বিশেষ করে, শনিবার ও রবিবার যেন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রত্যেক সপ্তাহেই ট্রেন বাতিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতেই বনগাঁ শাখার ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। বিশাল অংশের মানুষের যাতায়াতের ভরসা রেল। কর্মক্ষেত্রে বা স্কুল-কলেজে সময়ে পৌঁছাতে নাকাল হচ্ছেন তাঁরাই।
গত তিন বছরে রেলে বিভিন্ন পদে মোট অবসর নিয়েছেন ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৮৬। সমস্যা হলো, নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় বহু পদ ফাঁকা পড়ে থাকে। ২০১৯’র পর নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি বলেও ক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের।
বৈষ্ণব বলেছেন, এবার থেকে প্রতি বছর নিয়োগ হবে। নিয়োগের ক্যালেন্ডার করে এগনো হবে। যাতে ফাঁকা পদে দ্রুত নিয়োগ করা যায়।
ঘোষ বলছেন, ‘‘বাস্তবে অবসরের তথ. যেমন সরকারি ঘোষণায় বলা হয় না, তেমনই চেপে যাওয়া হয় পদ অবলুপ্তির তথ্যও। পূর্ব রেলে এক বছরেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পদ অবলুপ্ত হয়েছে। শিয়ালদহ ডিভিশনে বেডরোল দেওয়ার কাজ বেসরকারি হাতে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ঠিকাদারকে দিয়ে নামমাত্র টাকায় দাস শ্রমিকের মতো কাজ করানো হচ্ছে। কেবল বেডরোলের কাজ ছেঁটে বেসরকারিকরণ করে প্রায় ১০ কোটি টাকা বাঁচিয়েছে পূর্ব রেল।’’
ইস্টার্ন রেল মেনস ইউনিয়নের নেতা জানাচ্ছেন যে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হলে পরিবারের কারও চাকরি বরাবরই হতো। এমন চাকরির কাগজকে নতুন নিয়োগ বলে ‘রোজগার মেলা’ করে হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে নতুন নিয়োগ কিন্তু হচ্ছে না। আরআরবি বা আরআরসি’র মাধ্যমে নিয়োগ প্রায় বন্ধ। বাড়ছে যাত্রী বা ট্রেন। কর্মীদের চাপ ভয়াবহ মাত্রায়। সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরাও।
Comments :0