High Court SSC

১৯১১ শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ দুর্নীতিতে, স্বীকার করে চাকরি বাতিল এসএসি’র

রাজ্য

আদালতের নির্দেশের পর চুরি করা চাকরির প্রথম দফায় ১৯১১ জনের নাম স্বীকার করে নিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। এই তালিকা প্রকাশের পরই শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্ট গ্রুপ-ডি পদে এই ১৯১১ জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিল। এদিন বিচারপতি এই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়ে মন্তব্য করেছেন,‘‘ আমার পর্যবেক্ষণে এই নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ 
হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছে, বেআইনি চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। এদের বেতন বন্ধ হবে। এতদিন যে বেতন পেয়েছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। কয়েক দফায় বেতন ফেরাতে হবে। এসএসসি এদিন তাদের ওয়েবসাইটে ১৯১১ জনের নাম প্রকাশ করে জানিয়েছে এই প্রার্থীদের চাকরির সুপারিশ প্রত্যাহার করা হলো। রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা এসএসসি যখন একথা আদালতে জানিয়েছে তখন সরকার চুপ করে ছিল। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে গত ২০১৪ সাল থেকে যে দুর্নীতি চলছে তৃণমূল সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সবকিছু জেনেবুঝে বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে চাকরি দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে সরকার ‘রা’ কাটছে না। শুক্রবার শুধু শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য। কিন্তু হাজার হাজার যুবক-যুবতীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রির ব্যাপারে সরকার কোনও কথা বলছে না।
এদিনই কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে মুখ খুলতে বলেছেন। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের পরিবারকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, সুবীরেশ ভট্টাচার্য যতদিন না নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন ততদিন তিনি তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না। ওএমআর শিট বিকৃত করে যখন চাকরি দেওয়া হয়েছে তখন ভট্টাচার্যই ছিলেন এসএসসি’র চেয়ারম্যান। ফলে এই মামলার সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করা হচ্ছে।  
রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ এবং গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা আদালতের পর্যবেক্ষণেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সিবিআই আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিচ্ছে তা সবটাই গোপন থাকছে। রিপোর্টের যেটুকু অংশ এজলাসে সিবিআই’র আইনজীবী ব্যবহার করছেন তা প্রকাশ পাচ্ছে। বাকি অধিকাংশ রিপোর্ট শুধু আদালতের হাতেই রয়েছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা সেই রিপোর্টে জানতে পারছেন না। আদালত তার পর্যবেক্ষণে যেটুকু জানাচ্ছে তা জনমানসে এসেছে। 
নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের একটি বড় অংশ আদালতের হাতেই রয়েছে। যেমন, সিবিআই জানিয়েছে গ্রুপ-ডি পদে মোট যে নিয়োগ হয়েছে তার ৫০ শতাংশের বেশি বেআইনিভাবে হয়েছে। এই ৫০ শতাংশকে এখনও চিহ্নিত করেনি এসএসসি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ প্রথম দফায় মাত্র ১৯১১ জনের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে তারা। হাইকোর্ট বেআইনিভাবে এই নিয়োগ বাতিল করার পর বলেছে যোগ্যপ্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। একথা বলে এসএসসি’কে সতর্ক করে আদালত বলেছে ওয়েটিং লিস্টে যে সমস্ত প্রার্থীরা রয়েছেন, এখনই সেখান থেকে নিয়োগ করা যাবে না। কারণ ওই ওয়েটিং লিস্টে যাদের নাম আছে সেখানেও ওএমআর বিকৃত করে নাম ঢোকানো রয়েছে। 
এদিন মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, বৃহস্পতিবার আদালত ২৮২৩জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসএসসি ১৯১১জন বেআইনি নিয়োগ প্রার্থীর নাম খুঁজে পেয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক নাম তারা খুঁজে পাবে। সামিম বলেন, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বর্তমান প্রভাবশালীরা এই কাজে যুক্ত রয়েছেন। শুক্রবার আদালত সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে মুখ খোলার নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে তা প্রাক্তন চেয়ারম্যানের অজানা নয়। কারণ এসএসসি’র সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই নিয়োগপত্রে সই করতেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি। তিনি জেলে রয়েছেন। কোন কোন জেলায় কতজনকে নিয়োগ করা হবে তার জন্য দর ঠিক করার লোকও থাকতো। রাজ্য সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি এই গোটা বিষয়টি পরিচালনা করার জন্য পাঁচজনকে বেছে নিয়েছিলেন। এই পাঁচজনের মাথায় ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। তিনি মন্ত্রীর কাছে নিয়মিত দুর্নীতি  নিয়োগের রিপোর্ট জানাতেন। এর সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ এবং বিএড কলেজে তৈরি এবং সেখানে ভর্তির পরিকল্পনার মধ্যে ছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। এই পাঁচজনের বাইরে একটি বিরাট বৃত্ত রয়েছে। যার খোঁজ সিবিআই পেয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা তার অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কিন্তু আদালত এখনও বলছে কার নির্দেশে এই চরম বেআইনি কাজে মদত দিয়েছে জেলে থাকা ব্যক্তিরা। 
এদিন চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের পক্ষ থেকে ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ধর্মতলায় অবস্থানরত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তিনি বলেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় আন্দোলনে রয়েছেন। আদালতের রায়ে তাঁদের জয় হয়েছে। এসএসসি’কে দ্রুততার সঙ্গে যোগ্যপ্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment