613 killed at Gaza

গাজায় ত্রাণের লাইনে হত ৬১৩, উদ্বিঘ্ন রাষ্ট্রসঙ্ঘ

আন্তর্জাতিক

গাজায় ত্রাণের ট্রাক অথবা কেন্দ্রের কাছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় গত ২৭ মে থেকে শুরু করে ২৭ জুন পর্যন্ত ৬১৩ জন প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে এই কথা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ইজরায়েল ও আমেরিকার সাহায্য প্রাপ্ত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় সামান্য পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী বিলি শুরু করে। তার পর থেকেই শুরু হয় পরিকল্পিত হত্যালীলা। এদিন দাইর আল-বলাহতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ত্রাণ সংস্থার মুখপাত্র রভিনা শামদাশানি জানান, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজার বিভিন্ন অংশে ত্রাণের ট্রাক অথবা ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন কেন্দ্রের কাছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী বিভিন্ন সময়ে গুলি চালিয়েছে। পাশাপাশি ট্যাঙ্ক, ড্রোন এবং যুদ্ধ বিমান থেকেও বোমা ফেলা হয়েছে।

এক্ষেত্রে তিনি আরও বলেন, গাজার পরিস্থিতি এই খবরে বোঝা সম্ভব না। সমগ্র পরিস্থিতি হয়তো জানা সম্ভবও না। এর মূল কারণ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকদের ইজরায়েলের সেনাবাহিনী যথাযথভাবে গাজায় কাজ করতে দিচ্ছে না।

এদিকে শুক্রবার গাজায় ইজরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৫২ জনের বেশি। শুক্রবার ভোরে বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফায় একটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর গুলিতে আরও ২০ জন প্রাণ হারান। স্থানীয় হাসপাতালের তরফে এই কথা জানানো হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে ৮ জন মহিলা এবং ১টি শিশু রয়েছে। সকালে আক্রান্তদের নাসের হাসপাতালে আনা হয়। বাস্তবে যা গত ২১ মাস ধরে চলা আগ্রাসন বন্ধে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে চলা আলোচনার ওপরে ছাপ ফেলেছে। এরই মাঝে শুক্রবার হামাসের তরফে মিশর এবং কাতারের দেওয়া ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনা খতিয়ে দেখার কথা জানান হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবারই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প দাবি করেন হামাসের সঙ্গে ৬০ দিনের সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাবে ইজরায়েলের সরকার রাজি হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সময় থাকতে থাকতে প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য হামাসের ওপরেও তিনি চাপ দেন।

রাতে গাজা থেকে পাওয়া খবর অনুসারে হামাসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন। সেই আলোচনার পরেই মিশর এবং কাতারের প্রতিনিধিদের হামাসের অবস্থানের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, গত ২১ মাসে ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর লাগাতার আক্রমণে গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে নিহতদের মধ্যে কতজন নাগরিক এবং কারা হামাসের সদস্য বা যোদ্ধা তা পরিষ্কার করা হয়নি। কিন্তু এটা জানা গেছে নিহতদের অর্ধেকের বেশি মহিলা এবং শিশু।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ ইজরায়েলে বড়সড় অভিযান চালায়। সেই আক্রমণে ১,২০০ বেশি ইজরায়েল সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক নিহত হন। আহত হন কয়েক হাজার। হামলার পর ২৫০ জনের ইজরায়েলী ও অন্যান্য দেশের লোকেদের হামাসের সদস্যরা গাজা তুলে নিয়ে আসে। তেল আভিভের অনুমান, ওই অপহৃতদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২৪ জন জীবিত আছেন। এছাড়া বেশি কিছু অপহৃতের বিভিন্ন সময়ে ইজরায়েলী হামলা অথবা অন্যভাবে মৃত্যু হয়েছে।

তাছাড়া গত জানুয়ারির শেষ থেকে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষবিরতি চলার সময় বেশি কিছু অপহৃতকে হামাসের তরফে ছাড়া হয়। সেই পর্বে দীর্ঘ দময় ইজরায়েলের জেলে বন্দি থাকা অনেক প্যালেস্তিনীয় গাজায় ফিরে আসেন।

কিন্তু গত ১৮ মার্চ সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় ইজরায়েলের সেনাবাহিনী একতরফাভাবে সংঘর্ষবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে। বর্তমানেও যার বিরাম ঘটেনি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অভিযোগ, শেষ এক মাসের ওপর গাজায় ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই প্যালেস্তিনীয়দের হত্যা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় চলা ইজরায়েলের অবরোধকেও দায়ী করেছেন। যদিও ইজরায়েলের সেনাবাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইজরায়েলেী সেনার যুক্তি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে মোতায়েন রক্ষীদের প্যালেস্তিনীয়রা গুলি ছুঁড়তে বাধ্য করেছেন। 

Comments :0

Login to leave a comment