এটিকে মোহনবাগান – ২ (দিমিত্রি (পেনাল্টি)
বেঙ্গালুরু এফসি— ২ (সুনীল, কৃষ্ণ)
টাইব্রেকার — (এটিকে মোহনবাগান— পেত্রাটোস, কোলাসো, কিয়ান, মনবীর)
বেঙ্গালুরু — অ্যালান কোস্টা, রয়, রামিরেজ (মিস), সুনীল, পেরেজ (মিস)
প্রথমবার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল এটিকে মোহনবাগান। টাইব্রেকারে বেঙ্গালুরুকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে। ফাইনালে আবারও গোলরক্ষক বিশাল কাইথের হাতযশ। দিমিত্রি পেত্রাটোসের গোল করার ক্ষমতায় ম্যাচ বের করল এটিকে মোহনবাগান। মাণ্ডবীর তীরে সবুজ মেরুন নৌকা সদর্পে এগিয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন হয়েই কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা খুশিতে এটিকে মোহনবাগানের নতুন নাম ঘোষণা করে দিলেন, ‘মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট’। আনন্দে কোচ জুয়ান ফেরান্ডো সহ ফুটবলাররা, গ্যালারি উপস্থিত মোহনবাগান সমর্থকরা হাততালির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা খুশি। যদিও তাঁর আগেই থেকেই উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রীতম কোটালদের। জেতার পরই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন অধরা প্রাপ্তির আনন্দে। মাঠে ফুটবলাররা ‘স্লাইড’ দিলেন, নানা প্রতিকূলতা টপকে একটা দল চ্যাম্পিয়ন হলে তো আবেগের বাধ ভাঙবেই!
প্রতিযোগিতার শুরুতে খাতায়-কলমে সেরা দল ছিল মোহনবাগানই। তাঁরা চ্যাম্পিয়ন না হলেই সেটা অঘটন ঘটতো। কিন্তু শুরুটা আশানুরূপ হয়নি। হার দিয়ে শুরু করার পর, মাঝপথে একের পর এক ফুটবলারদের চোট পাওয়া, জনি কাউকোর মতো ফুটবলার ছিটকে যাওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল মুম্বাই ও হায়দরাবাদের থেকে। কিন্তু মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্ডো কখনই নিজের দলের উপর থেকে বিশ্বাস হারাননি। দলকে একসূত্রে বাঁধার কাজটা নিপুণভাবে করতে পেরেছেন বলেই শনিবার তাঁর দল চ্যাম্পিয়ন হলো! তাঁকেও কম সমালোচনা শুনতে হয়নি। মরশুমের শুরু থেকেই পজিটিভ স্ট্রাইকার ছাড়া দলকে কেন খেলাচ্ছেন? কিন্তু দেখিয়ে দিলেন একজন নম্বর নাইন ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়! বাগানে এনে দিলেন বসন্ত।
এদিন ফাইনালটা হলো ফাইনালের মতোই। নাটকে ভরা ম্যাচ। পরতে পরতে পট পরিবর্তন। একাধিক ফাউল, হলুদ কার্ড, গোললাইন সেভ, নিঁখুত ট্যাকল, দু’অর্ধ মিলিয়ে চারটি গোল। এই ধরনের হাইভোল্টেজ ম্যাচে যা যা উপকরণ থাকার সবই কিছুই ছিল। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ অবস্থায়।
১৩ মিনিটে মোহনবাগানের প্রাক্তনী রয় কৃষ্ণ কার্যত পেনাল্টি উপহার দেন পুরানো দলকে। বেঙ্গালুরুর ফুটবলাররা পেনাল্টি না দেওয়ার দাবি জানাতে যান রেফারির কাছে। তিনি সুনীলদের কথায় কর্ণপাত করেননি। ম্যাচের ১৪ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করে এটিকে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন দিমিত্রি পেত্রাটোস। গুরপ্রীত সিং সান্ধু ঝাঁপালেও শটে জোর এতটাই ছিল, নাগাল পাননি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে সমতায় ফেরে বেঙ্গালুরু। এত বছরের কেরিয়ারে তিনি বহুবার স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ রেখে দলের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ফাইনালেও অন্যথা হল না! অভিজ্ঞতা কী জিনিস বোঝালেন! স্পটকিক থেকে প্রতিযোগিতায় ১২ ক্লিনশিট রাখা বিশাল কাইথকে উলটোদিকে ফেলে ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠালেন সুনীল।
অথচ প্রথমার্ধে তাঁর নামার কথাই ছিল না। যদি না কার্ল ম্যাকহিউয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে শিবাশক্তি চোট না পেতেন! ম্যাচের দু’মিনিটে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন ছন্দে থাকা শিবাশক্তি। বেঙ্গালুরু পরিকল্পনা ঘেঁটে যায় তাতে। তারপরই পিছিয়ে পড়ে। খেলায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ওই সময়তেই মোহনবাগান আক্রমণের চাপ বাড়িয়েছিলেন। তবে জাভি হার্নান্ডেজ মাঝমাঠের দখল নিয়ে নেওয়ায় প্রথমার্ধের শেষদিকে একটানা আক্রমণ শানিয়ে পেনাল্টি আদায় করে বেঙ্গালুরু।
দ্বিতীয়ার্ধে দশ মিনিটের মধ্যে দু’টি পরিবর্তন করে মোহনবাগান। গ্লেনকে তুলে হামতেকে নামান কোচ ফেরান্ডো। আশিক তুলে কোলাসোকে। তাতে মোহনবাগানের আহামরি কোনও লাভ হয়নি। লিস্টন ও পেত্রাটোসের দু’টি শট দুরন্ত প্রয়াসে বাঁচান গুরপ্রীত। আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে গোল খেয়ে যায় মোহনবাগান। ম্যাচে প্রথমবারের জন্য এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। ৭৮ মিনিটে রয় কৃষ্ণ হামতের ঘাড়ের উপর উঠে দূরূহ কোণ থেকে হেডে গোল করেন, নীরবে জবার দিলেন জুয়ান ফেরান্ডোকে। তবে কৃষ্ণ গোল করে উদ্যাপন করেননি। ৮৫ মিনিটে সমতায় ফেরে মোহনবাগান। নেমেই পেনাল্টি আদায় করেন কিয়ান। বক্সের বাইরে থেকে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলেন দেন বেঙ্গালুরুর পাবলো পেরেজে। পেত্রাটোসই ফের গুরুপ্রীতকে পরাস্ত করে দলকে ম্যাচে রাখেন। নির্ধারিত সময়ে পেরিয়ে ম্যাচ যায় অতিরিক্ত সময়ে। ওই আধঘণ্টা কেউ আর গোলের মুখ খুলতে পারেনি। কিন্তু চেষ্টার খামতি ছিল না মনবীর-পেত্রাটোস, সুনীল-কৃষ্ণাদের। চিত্রনাট্য মেনেই ম্যাচ যায় টাইব্রেকারে। ৪-৩ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান। চার বছর আগে এইদিনেই বেঙ্গালুরু জিতেছিল আইএসএল। এবার আর হলো না! খালি হাতে ফিরতে হলো তাদেরকে। হতাশ মুখে সুনীল টানেলের ভেতরে প্রবেশ করলেন, ট্র্যাজেডির নায়ক হয়ে!
মোহনবাগান: বিশাল, আশিস, প্রীতম, স্লাভকো, শুভাশিস (কিয়ান), ম্যাকহিউ(গালেগো), গ্লেন (হামতে), মনবীর, বুমোস (হামিল), আশিক (কোলাসো),পেত্রাটোস
Comments :0