অনিল কুণ্ডু – বারুইপুর
লাল ঝান্ডার মিছিলে অবরুদ্ধ হলো বারুইপুর। মিছিলের জনস্রোত আছড়ে পড়ে বারুইপুরে পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে রাস্তা। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দপ্তরে তৃণমূলী দুস্কৃতীদের হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার পুলিশ সুপারের অফিস অভিযান করা হয়। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির আহ্বানে বারুইপুর রেল ময়দান থেকে এদিন শুরু হয় মিছিল। বারুইপুরের কুলপি রোডের চওড়া রাস্তা জুড়ে লাল ঝান্ডার মিছিল পুলিশ সুপারের অফিস অভিমুখে যতো এগিয়েছে মিছিলের দীর্ঘ সারি ততোই দীর্ঘতর হয়েছে।
পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে মিছিল শেষে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পড়া উদ্বেল সেই জনস্রোতের সমাবেশে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, অবিলম্বে দোষীরা গ্রেপ্তার না হলে আরো ব্যাপক জমায়েতে পুলিশ সুপারের দপ্তর লাগাতার অবরুদ্ধ করে রাখা হবে। এই সমাবেশেই যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি পুলিশের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্র না থাকলে উর্দির সন্মান থাকবে তো ! গণতন্ত্র না থাকলে আপনি খাকি উর্দি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনাকে কেউ ভয় পাবে তো। গণতন্ত্র আছে বলে খাকি উর্দির সন্মান আছে। গণতন্ত্র না থাকলে আপনাদেরকে কুকুরের মতো দৌড়তে হবে। আপানদের সিভিক গুলো গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করে দিচ্ছে। এরপর তিনি বলেন, আপনাদেরকে পিঠের সাথে বাঁশ বেঁধে দিতে হবে। না হলে আপনাদের মেরুদন্ড সোজা থাকছে না খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, মানি। মানি। মানি। আমরা সংবিধান মানি। তাই আপনাদেরকে মানি। আর আপনারা যদি সংবিধানকে মানানোর মতো পরিবেশ না তৈরি করতে পারেন তাহলে মানানোর দায়িত্ব আমরা নেব না। বারুইপুরে পার্টির জেলা দপ্তরে তালা লাগানোর ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি কলিজায় দম থাকে যাও সন্দেশখালি, নারায়ণগড়ে তালা দিয়ে এসো। যেখানে মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের নাম যদি পার্টি অফিসে তালা দেওয়া হয় এই গণতন্ত্র আমরা মানবো না। এরপর পার্টি অফিসে হাত লাগালে মানুষ বুঝে নেবে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদল হয়েছিল। আজকে যারা সরকারে আছে তারা বলেছিল দলতন্ত্র নয় গণতন্ত্র চাই। গণতন্ত্রের নাম যদি পার্টি অফিসে তালা দেওয়া হয় এই গণতন্ত্র আমরা মানি না। গণতন্ত্রের নাম যদি ওদের পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকে মায়েদের ধর্ষণ করা হয় তাহলে আমরা গণতন্ত্র মানবো না। গণতন্ত্রের নাম যদি কলেজের ক্যাম্পাসের ভোট চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নিজে ছাত্রর মাথার উপর গাড়ি চালিয়ে দেয় তাহলে এই গণতন্ত্র মানবো না। দায়ী কিন্তু পুলিশকে থাকতে হবে। তৃণমূল একটি রাজনৈতিক দল। এরা কি অন্য গ্রহ থেকে আসা জিব নাকি। যে এদেরকে দেখলে পুলিশ জুতো খুলে খিচুড়ি বিলি করতে যায়।
মীনাক্ষী মুখার্জি পুলিশকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সবচেয়ে বড় শক্তি মানুষের। সব চেয়ে বড় শক্তি জনগণের, সংবিধানের, গণতন্ত্রের। সামনে ২০২৬। কালের নিয়মে রাজনীতির নিয়মে চাকা ঘুরবে। সেদিন কি হবে। মনে রাখবেন মানুষের রক্ত ঘামের পয়সাতে আপনার উর্দি। আর আমরা তো খেটে খাওয়াদের দল। ঘামের দাম বুঝি। তাই ঘামের দাম নিতে ঘামের দামকে রক্ষা করতে পার্টি অফিসে যদি হাত লাগে বাকিটা মানুষ বুঝে নেবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষ বুঝে নেবে।
পার্টি কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কমরেড আরো শক্ত হন। বুকের পাটা কোমড়ের জোড় শক্ত করুন। লাল ঝান্ডা ধরা অতো সহজ নয়। লাল ঝান্ডা যারা ধরে তাঁদের অনেক দায়িত্ব। তাঁদের অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। তিনি এই লড়াইয়ে সমস্ত মানুষকে একত্রিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ লড়াই লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়াদের সংগ্রাম। এ লড়াই দলতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রাম। এই সংগ্রামে সমস্ত মানুষকে একত্রিত করতে হবে।
এই সমাবেশে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রতন বাগচী, প্রতিকউর রহমান, অলোক ভট্টাচার্য, অশোক ভট্টাচার্য, মিলি চক্রবর্তী, লাহেক আলি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এদিনের মিছিলে তাঁরা ছাড়াও সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী, পার্টি নেতা কান্তি গাঙ্গুলি, রাহুল ঘোষ, তুষার ঘোষ প্রমুখ নেতৃত্ব ছিলেন সামনের সারিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ এই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন পার্টি নেতা প্রভাত চৌধুরী। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক রতন বাগচীর নেতৃত্বে ৬ জনের এক প্রতিনিধি দল ডেপুটেশনে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপারের কাছে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির এই কর্মসুচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল।
Minakshi Mukherjee at Baruipur
গণতন্ত্র না থাকলে উর্দির সন্মান থাকবে তো! বারুইপুরে মীনাক্ষী

×
Comments :0