বিচার চায় গোটা রাজ্য, বিচার চায় শহীদ কমরেড রিন্টু শেখের পরিবার, রবিবার অপরাধীদের শাস্তি দাবি জানিয়েছে রিন্টু শেখের ছোট্টো ছেলে জসিমুদ্দিন ইসলাম। খুনিদের উপযুক্ত শাস্তির জানিয়ে আসছেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দারা। রবিবার সকালে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পাশে দাঁড়িয়ে বাবার খুনিদের বিচার চাইলো রিন্টু শেখের ছেলে জসিমুদ্দিন ইসলাম। মাইক হাতে নিয়ে তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আমি বিচার চাই। আমার বাপকে যারা মেরেছে তাদের শাস্তি চাই’’। সাফ উচ্চারণ হরিহরপাড়ার শহীদ কমরেড রিন্টু শেখের কিশোর সন্তান জসিমুদ্দিন ইসলামের।
এদিন সকালে হরিহরপাড়ার নিয়ামতপুর গ্রামে শহীদ কমরেড রিন্টু শেখের বাড়িতে পৌচান সিপিআ(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। শহীদ কমরেড রিন্টু শেখের পরিবারকে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর দুই ছেলের লেখাপড়ায় সাহায্য ও পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, ভবিষ্যতের জন্য এই লুটেরাদের সাম্রাজ্য শেষ করতে হবে। শহীদ কমরেড রিন্টু শেখের খুনিদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় থানা, এসপি, শীর্ষ প্রশাসনিক মহলে, হাইকোর্ট, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবো, কমরেড রিন্টু শেখের অপরাধীদের আমরা শাস্তি দেয়াবো। তিনি গ্রামের মানুষকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
শাসক তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাত থেকে নিজের জন্মভিটের বুথ রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন কমরেড রিন্টু শেখ। গত ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকালে বুথের ১০০মিটারের মধ্যেই লোহার রড, লাঠি দিয়ে নৃশংসভাবে পেটানো হয়েছিল। ছিল না কেন্দ্রীয় বাহিনী, বুথে মোতায়েন ছিল মাত্র একজন পুলিশকর্মী। শাসক দলের বিধায়ক ও তার পুত্রের মদতে চলে এই নৃশংস আক্রমণ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রিন্টু শেখ(৪৩)কে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৬ জুলাই দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।
কমরেড রিন্টু শেখ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামে কাজ নেই। তাই পরিবারকে গ্রামে রেখেই চেন্নাই গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজে। একেবারে গরিব পরিবার। এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
কমরেড রিন্টু শেখের মৃত্যুর খবর পেয়ে শহীদ কমরেডের স্ত্রী জান্নাতন বিবি বলছিলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর? ভোটে তো পাশ-ফেল আছেই। ওরা দিনদুপুরে পিটিয়ে মেরে দিল। আমি শাস্তি চাই ওদের। আমার সংসার শেষ করে দিল’। এই নৃশংস খুনের ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘৃণা উগড়ে দিয়ে গোটা গ্রামের মানুষ খুনিদের উপযুক্ত শাস্তির জানিয়েছেন। এদিন ছোট্ট কিশোরের মুখেও শোনা গেলো তার বাবার খুনিদের শাস্তি চাই।
গত ৮ জুলাই, ভোটের দিন হরিহরপাড়ার নিয়ামতপুর এসএসকে’তে দু’টি বুথে চলছিল ভোটগ্রহণ পর্ব। সকাল দশটা নাগাদ বুথ লুটের উদ্দেশ্যেই নিয়ামতপুরে ঢোকে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নিয়ামত শেখ, তৃণমূল নেতা মীর আলমগীর পলাশ ও জেলা পরিষদের প্রার্থী বিধায়কপুত্র জিল্লার রহমান। বুথ জ্যাম শুরু করে দেয় শাসক তৃণমূলের বাহিনী। বুথের সামনে যেতেই তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বচসা বাধে রিন্টু শেখের। গ্রামের সিপিআই(এম)’র পরিচিত মুখ তিনি। তৃণমূলের বুথ লুটের চেষ্টায় বাধা দেন তিনি। বুথ লুটের চেষ্টায় বাধা দিতেই তৃণমূলী বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর ওপরে। লোহার রড, লাঠি দিয়ে বুথের তিনশো মিটারের মধ্যেই নির্বিচারে পেটানো শুরু হয় তাঁকে। বুথ রক্ষায় নিধিরাম সর্দার কেবল একজন পুলিশ কর্মী। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তখন দর্শক। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন কমরেড রিন্টু শেখ। স্থানীয় গ্রামবাসী ও সিপিআই(এম) কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বহরান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান, সেখানে অবস্থার অবনতি হতে নিয়ে যাওয়া হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হওয়ায় তাঁকে সেদিনই নিয়ে আসা হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। ১৬ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
Comments :0