শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান
তৃণমূল -বিজেপি’র দুই প্রার্থীর অসৌজন্যবোধ, কুকথার লড়াই বর্ধমান-দুর্গাপুরের মানুষ ভালো চোখে নিচ্ছেন না। এই কেন্দ্রের মানুষই বলছেন, দুই ফুলের মেকি লড়াই চলছে। আসলে বিজেপি’র প্রাক্তন সাংসদ, এবার তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদকে ভোট দেওয়া মানে আরএসএস-কেই ভোট দেওয়া। আবার বিজেপি’র প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে ভোট দেওয়া মানেও সেই আরএসএস-কেই সমর্থন করা। তাই এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে মূল লড়াই বামপন্থীদের সঙ্গে আরএসএস’র দুই প্রার্থীর।
এই লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থী ড. সুকৃতি ঘোষাল দুই ফুলের প্রার্থীদের কুরুচিকর মন্তব্যকে পাত্তা না দিয়ে মানুষের রুজি-রুটি, পেটের লড়াইকে সামনে তুলে আনছেন। ধর্ম বা জাতপাত নয়, নীতির ভিত্তিতে রুটি-রুজির লড়াইকে সামনে আনছেন বামপন্থী কর্মীরা। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই মানুষের কাছে ত্রিমুখী লড়াই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বড়লোকদের দুই পার্টির চেয়ে গরিব, মধ্যবিত্তদের পাড়ায় লাল ঝাণ্ডার প্রতি মানুষের উৎসাহ, সাড়া চোখে পড়ার মতো। দুই ফুলের প্রার্থীই বহিরাগত, তাঁদের সঙ্গে বর্ধমানের বাসিন্দা সুপরিচিত শিক্ষাবিদের নির্বাচনী লড়াই বেশ জমে উঠেছে।
এই কেন্দ্রে তৃণমূল আর বিজেপি দুই দলই তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত। দুই ফুলের প্রার্থীরাই প্রচারে বের হয়ে দলীয় ক্ষোভ ও কোন্দলের মুখে পড়ছেন। অন্যদিকে, বামপন্থীরা শুরু থেকেই গরিব ও সাধারণ মানুষের দাবিগুলি নিয়ে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। এই লোকসভা কেন্দ্রের একসময়ে শিল্প ও কৃষির জন্য ভারতজোড়া খ্যাতি ছিল। কিন্তু তৃণমূল ও বিজেপি’র শাসনে শিল্প যেমন রসাতলে যেতে বসেছে, তেমনই কৃষির সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। গত ১২ বছরে নতুন শিল্প তো হয়নি, উলটে পুরানো শিল্পগুলিও ধুঁকছে। অন্যদিকে, কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়েছে, সরকার ভরতুকি তুলে নিয়েছে সার, বিদ্যুৎ, বীজে। কিন্তু কৃষক সেভাবে ফসলের দাম পাচ্ছেন না। গ্রামে কাজ নেই, খেতমজুর পরিবারগুলিতে হাহাকার। মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের দাম কেন বাড়ছে, সেই প্রশ্নগুলিই তুলে ধরছেন বামপন্থী কর্মীরা। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কর্পোরেটের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল কীভাবে দেশ ও দেশের মানুষের সর্বনাশ করেছে, প্রচারে থাকছে সেই বিষয়গুলিও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বর্ধমান শহরে প্রচার শুরু হয় বিদ্যার্থী গার্লস স্কুলের সামনে থেকে। বামফ্রন্ট প্রার্থী সুকৃতি ঘোষালকে নিয়ে সুবিশাল সুসজ্জিত মিছিল শহরের ১৭, ১৮, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড পরিক্রমা করে। প্রচন্ড রোদ, কিন্তু লাল ঝাণ্ডার কর্মীদের বিশ্রাম নেই। চৈত্রের রোদ মাথায় নিয়েই বাড়ি বাড়ি প্রচার রীতিমতো সাড়া ফেলে। বিকালে পায়ে পায়ে ১০, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পদযাত্রায় হেঁটেছেন তাঁরা। সকাল থেকে বিকাল বাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছেন প্রার্থীকে নিয়ে কর্মীরা, শুনেছেন মানুষের অভাব-অভিযোগ ও জীবন-যন্ত্রণার কথা।
শহরের মানুষের বেশিরভাগেরই আর্থিক অবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। শহরের মধ্য দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে ব্যবসায় মন্দা আরও বেড়েছে। গ্রাম থেকে খরিদ্দার আসতে পারছেন না শহরের বাজারে। বিসি রোড, বিবি ঘোষ রোড সহ একাধিক বাজার ধুঁকছে, যথেষ্ট কেনাবেচা না হওয়ার জন্য। এই প্রচারে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের কাছে শুনতে হচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির কথা, কোষাগার কীভাবে টাকা লুট হয়ে গেল শাসকের মদতে। অপরাধীরা এখনও অধরা। এই নিয়ে মানুষের প্রচন্ড ক্ষোভ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া লাটে উঠেছে, ভর্তি হতে গেলে শাসক দলকে টাকা গুনতে হচ্ছে— অভিভাবকরা সেকথাও বলছেন।
এদিন প্রচারের পুরোভাগে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, পার্টির নেতা তাপস সরকার, অপূর্ব চ্যাটার্জি, নজরুল ইসলাম, সুদীপ্ত গুপ্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য, গণপতি মজুমদার সহ বহু বিশিষ্ট অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ এই নির্বাচনী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।
Campaign Sukriti Ghoshal
রুটি-রুজির কথা, প্রচারই তফাৎ চিনিয়ে দিচ্ছে বাম প্রার্থীর
×
Comments :0