মধূসুদন চ্যাটার্জি: বাঁকুড়া
ছেলে প্রার্থী। প্রস্তাবক? মা — রিজিয়া খাতুন।
যেখানে সিপিআই(এম)’র অফিস তিনদিন ঘিরে রেখেছে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী, যেখানে ‘প্রার্থী হলে খুন করে দেব’ — স্পষ্ট হুমকি অভিষেক ব্যানার্জির ভক্ত কর্মীদের, সেখানে সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম ‘প্রার্থী হবোই’ শপথ নিয়েছেন।
ছেলের পাশে যে দাঁড়াবে, জীবন সংশয় আছে তাঁরও। তাই বৃদ্ধা রিজিয়া খাতুন টানটান দাঁড়িয়েছেন। ছেলের সঙ্গে ব্লক অফিসে গেছেন, বুধবার। ছেলে মার খেয়েছে ব্লক অফিসেই — বৃদ্ধা দেখেছেন। শুনেছেন — ছেলের বয়সী, নাতির বয়সি তৃণমূলের ছেলেগুলো তাঁকে নোংরা ভাষায় গালাগালি করেছে। ঘৃণা? নিশ্চই হয়েছে।
লজ্জা? পাননি রিজিয়া খাতুন। ছেলে লড়তে নেমেছেন ‘মা মাটি মানুষের’ নাম নেওয়া জঘন্য একটি দলের বিরুদ্ধে। ছেলের পাশে তাই মা রিজিয়া। তৌহিদুলের সাহস কে দিল? কাজের দাবিতে মিছিলে আসা মইদুল ইসলামকে কলকাতার রাস্তায় পুলিশ পিটিয়ে মেরেছিল। যখন অসহ্য যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন কমরেড মইদুল, সেদিন তাঁর ঠিক পাশে ছিলেন তৌহিদুল। তিনি তখন ডিওয়াইএফআই’র কর্মী।
তাঁর কাছে এবারের লড়াই মইদুলের জন্যও অনেকটা।
কোতুলপুরে বুধবার পর্যন্ত বামফ্রন্টের একজন প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। বুধবার মনোনয়নপত্রের ডিসিআর কেটে মনোনয়নপত্র তুলে নিয়ে এলেন কোতুলপুরের খেতমজুর নেতা সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকেই তৃণমূলবাহিনী কোতুলপুর থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে মস্তানবাহিনী জড়ো করে কোতুলপুর গঞ্জ এলাকাজুড়ে টহল দিতে থাকে। বামফ্রন্টের প্রার্থীদের কোথাও ফোন করে, কোথাও সরাসরি গিয়ে হুমকি দিতে থাকে। হুমকি দেওয়া হয় কোনোমতেই লাল ঝান্ডার প্রার্থী হওয়া চলবে না।
এর পর সোমবার সকাল থেকেই কোতুলপুরে সিপিআই(এম) কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করে রাখে তৃণমূলবাহিনী। বামফ্রন্টের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাঁদের সশস্ত্র বাহিনী আটকায়। তিনজন সিপিআই(এম) কর্মীকে মারধর করা হয়। সমস্ত ঘটনাটিই ঘটে পুলিশের সামনে। পুলিশকে বারে বারে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হলেও তারা নীরব ছিল। এই অবস্থাতেই সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম যিনি কলকাতা রাজপথে যুবনেতা মইদুল ইসলামের উপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার সময় তাঁর পাশেই ছিলেন তিনি সেই প্রাক্তন যুব নেতাই বুধবার তাঁর বৃদ্ধা মা রিজিয়া খাতুনকে সঙ্গে প্রস্তাবক হিসাবে নিয়ে গিয়ে কোতুলপুর পঞ্চায়েতের ১১৫নম্বর সরোজবাসিনী বুথে মনোনয়নপত্র তোলেন।
ডিসিআর কাটার সময়ই ব্লকের ভেতরে থাকা তৃণমূল বাহিনী কোতুলপুর থানার ওসির সামনেই তৌহিদুলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁকে ধরে আছাড় মারে। তাঁর মা-কে লক্ষ্য করে অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ চলতে থাকে। কোতুলপুর থানার ওসি এই অবস্থায় জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেবে তৌহিদুল। তখন তৃণমূলেরই একটি অংশ হুমকি দিয়ে জানায়,‘ও সি বাঁচাতে পারবে তো।’ নিজে রক্তাক্ত হয়ে সামনে মায়ের অপমান দেখেও তিনি পালিয়ে আসেননি। ডিসিআর কেটেছেন, মনোনয়নপত্র তুলে এনেছেন। তাঁর মাও সাহসের সঙ্গে ছেলের পাশে ছিলেন। যতই বাধা আসুক, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেনই কোতুলপুরের তৌহিদুল ইসলাম।
অন্যদিকে এদিন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই কোতুলপুরে তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক মারপিট শুরু হয়। এদিন শাসকদলের কোতুলপুর কার্যালয়ে একে অপরকে মাটিতে ফেলে মারধর করতে থাকে। দু’পক্ষই মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জির জয়গান করতে করতে একে অপরকে পেটাতে থাকে। শুক্রবার থেকে কোতুলপুর অবরোধ করে রাখা তৃণমূলের মস্তানবাহিনীর নেতা সাদেক আলি খাঁকে বেধড়ক পেটায় দলের কর্মীরাই। ভাঙা হয় অফিসের টিভি, চেয়ার টেবিলও। কোতুলপুরের মানুষের সামনেই প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটে।
Comments :0