Vande Bharat

বন্দে ভারতের ঢক্কানিনাদে সুরক্ষাই উধাও

জাতীয়

 ‘বন্দে ভারত মোদীর ভারত’- দেশজুড়ে বিজেপি’র এই প্রচারই শুক্রবার রাতে বাস্তব হয়ে উঠলো বালেশ্বরের রেল লাইনে। বিপুল অর্থ খরচে প্রচারের ঢক্কানিনাদ সপ্তমে তুলে উচ্চবিত্তের সুবিধের জন্য রাজ্যে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে চলেছেন ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের। আগামী বছর শুরুতে লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত এই কাজ চলবে বলে রেলসূত্রই জানাচ্ছে। আমজনতার ট্রেন ‘মোদীর ভারত’র ট্রেন নয়, যাতে সফর করেন হতদরিদ্ররা। ট্রেনই এই দেশের গায়েগতরে খেটেখাওয়া জনতার সস্তার যান। সেই পরিবহণ ব্যবস্থার সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের গাফিলতির চূড়ান্ত নজির হয়ে উঠলো করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন, যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের কারোকে ছাড়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
শনিবার প্রাথমিক তদন্তে রেল জানিয়েছে সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি কেন, তার কারণ স্পষ্ট করতে পারেনি। দুর্ঘটনা ঘটেছে বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে। সেখানে সব মিলিয়ে চারটি লাইন রয়েছে। হাওড়া থেকে চেন্নাইমুখী ‘আপ মেন লাইন’। দ্বিতীয়টি হাওড়ামুখী ‘ডাউন মেন লাইন’। এই দুটি লাইনের সঙ্গে সমান্তরালে রয়েছে আরও দুটি লুপ লাইন। আপ লুপ লাইন এবং ডাউন লুপ লাইন। চেন্নাইমুখী আপ মেন লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। ডাউন মেন লাইন দিয়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল হাওড়ার দিকে। দুটি ট্রেনের কোনোটিরই বাহানগা বাজার স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়। দুই দিকের লুপ লাইনেই দাঁড়িয়েছিল মালগাড়ি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুটি ট্রেনই বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছাকাছি আসে। দুটির জন্যেই সবুজ সিগন্যাল দেওয়া ছিল। নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যায় দুটি ট্রেনেই। জানা গেছে, ১৭এ পয়েন্টে আপ লাইন থেকে লুপ আপ লাইনে ঢুকে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে ধাক্কা মারে ইঞ্জিন উঠে যায় তার মাথায়। কামরাগুলি বেলাইন হয়ে ছিটকে পড়ে। বেশিরভাগ কামরা আপ লুপ লাইনের দিকে পড়লেও কয়েকটি ছিটকে যায় ডাউন মেন লাইনের উপরে। সেই লাইন দিয়েই ১১৬ কিমি গতিতে ছুটে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস লাইনের ধারে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলির সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় এবং দুটি কামরা বেলাইন হয়। 
এখন প্রশ্ন উঠেছে কেন মেন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস? তাহলে কি গাড়ির চালক সিগন্যাল লক্ষ্য করেননি ঠিক করে? এই বিষয়ে প্রাক্তন রেলকর্তা সুধাংশু মণি যিনি প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনে তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে না ট্রেনের চালক সিগন্যাল অতিক্রম করে ঢুকে গেছেন লুপ লাইনে। ডেটা লগার থেকে দেখা যাচ্ছে সিগন্যাল সবুজই ছিল। কিন্তু শনিবার রেলের কাছে হাতে লেখা যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে যদি মেন আপ লাইনের সিগন্যালই সবুজ থাকবে, তাহলে করমণ্ডল লুপ লাইনে ঢুকলো কি করে? রেলের প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, ১৭এ পয়েন্টটি লুপ লাইনে ঘোরানো ছিল। ফলে করমণ্ডল সেখানে ঢুকে পড়ে। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের রেকর্ড রাখা হয় যেখানে, যাকে সাধারণভাবে প্যানেল বলে সেখানে কোনও ত্রুটি নেই। প্যানেলের হিসাব অনুযায়ী করমণ্ডলের সিগন্যাল মেনলাইনের জন্যেই দেওয়া ছিল। কিন্তু শনিবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের পরে রেলের পর্যবেক্ষণ দলের বক্তব্য, ১৭এ পয়েন্ট ঘোরানো ছিল লুপ লাইনে। ১৭ এ পয়েন্ট ঠিক দেখাচ্ছে না প্যানেল ঠিক বলছে- এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিগন্যালের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করেছে কি না, সেই গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, সেগুলির দেখভাল বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে কি, উঠেছে সেই প্রশ্ন। 
এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে বলছেন, কারোকে ছাড়া হবে না। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। এই ঘটনার প্রকৃত দায় তাহলে কার? শাস্তি কাকে দেবেন প্রধানমন্ত্রী?   
 

Comments :0

Login to leave a comment