Delhi police

বিরোধী স্বর আটকানোর চেষ্টা ব্যর্থ দিল্লি পুলিশের

জাতীয়

আবার বিরোধী ভাষ্যের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা নরেন্দ্র মোদী সরকারের! যেকোনও ধরনের বিরোধিতাই এই সরকারের না-পসন্দ। সেকারণেই শনিবার জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের বিকল্প এক সেমিনার বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে দিল্লি পুলিশ। কোনও ‘অনুমোদন’ নেই অজুহাত দেখিয়ে বন্ধও করে দেওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত হারে মেনেছে দিল্লি পুলিশ, বিরোধী ভাষ্যকাররা প্রশাসনিক চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করেই নির্দিষ্ট সূচি মেনে চালিয়ে যান সেমিনারের কাজ। তবে কোনও সভাগৃহে রুদ্ধদ্বার সেমিনারের পুলিশি অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে না বলে স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন উদ্যোক্তরা। এরই সঙ্গে দিল্লি পুলিশের এই ধরনের একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণের তীব্র বিরোধিতা করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এদিন পলিট ব্যুরো স্পষ্টই বলেছে, রাজধানীতে আলোচনাসভা কিংবা সেমিনার করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে নাগরিকদের। দিল্লি পুলিশ দিয়ে নাগরিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করা উচিত মোদী সরকারের।
আসন্ন জি-২০ বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ রক্ষা, জীব বৈচিত্র এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত মানবাধিকার নিয়ে কি আদৌ আলোচনা করবে মোদী সরকার? এই আশঙ্কা থেকেই জি-২০ বৈঠকের বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার লক্ষ্যেই সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজন করেছিল ‘উই ২০ পিপিলস্‌ সামিট’। এই মঞ্চে শামিল হয়েছিলেন জনআন্দোলন, শ্রমিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি। তিনদিন ধরে চলার কথা এই সেমিনারের। রবিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই শেষ হবে সমগ্র অনুষ্ঠান। সেমিনারের জন্য হরকিষান সিং সুরজিৎ ভবন নিয়েছিলেন উদ্যোক্তরা। এই ভবনটি পরিচালনা করে সিপিআই(এম)। উদ্যোক্তরা ভবনের পরিচালন গোষ্ঠীর অনুমোদন নিয়েছিলেন, প্রকাশ্য আলোচনাসভা নয় বলে পুলিশের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি। 
এদিন সকাল এগারোটা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির হয় হরকিষান সিং সুরজিৎ ভবনের সামনে। যাঁরা হলে প্রবেশ করছিলেন তাঁদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এমনকি যে দর্শক বা শ্রোতারা তখন হলে ঢুকে গিয়েছিলেন বা উদ্যোক্তাদের বাইরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ বলে এদিন অভিযোগ করেন সেমিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা লেখিকা-রাজনীতিবিদ কবিতা কবীর। শুধু তাই নয়, সভাগৃহের বাইরে পুলিশ ব্যারিকেড করে ঢুকতে বাধা তৈরি করে। দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি উর্দিপরা নিরাপত্তা রক্ষীদেরও দেখা যায় ভবন চত্বরে। তারা সেমিনার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে উদ্যোক্তাদের হুমকি দেয়। তবে পুলিশ কোনও লিখিত ফরমান দেখাতে পারেনি উদ্যোক্তাদের। শুধু মৌখিক যুক্তি দেখায় যে, সেমিনার করার কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি পুলিশের কাছ থেকে। তখন আলোচনাসভায় অংশ নিতে উপস্থিত হয়েছেন জয়রাম রমেশ, অনিল হেগড়ে, মেধা পাটেকর, বন্দনা শিবা, অঞ্জলি ভরদ্বাজ, নিখিল দে, টমাস ফ্রাঙ্কো, শক্তিমান ঘোষ সহ অন্যান্যরা। তবে পুলিশের হুমকি মানতে চাননি উদ্যোক্তরা। তাঁরা এবং আলোচকরা স্পষ্ট বলে দেন যে, সেমিনার কিংবা আলোচনাসভায় বলা বা জনগণের স্বার্থবাহী বিষয় সুরক্ষিত রাখা তাঁদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এরপর অত্যন্ত মসৃণভাবেই নির্দিষ্ট সূচি মেনে সেমিনার চলে বলে পুলিশি হামলার পর এক বিবৃতিতে জানানো হয় ‘উই ২০ পিপলস্‌ সামিট’র পক্ষ থেকে।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জি-২০ শীর্ষ বৈঠককে ঘিরে আমন্ত্রিত দেশ হিসাবে ৫১ কোটি টাকার বাইরের বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করছে। এরই পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যায়ন বাবদ বিপুল অর্থ খরচ করা হচ্ছে। ঢেকে দিয়ে গরিবদের ঘর লুকিয়ে রাখা হচ্ছে না, তাঁদের সমূলে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বুলডোজার চালিয়ে।
দিল্লি পুলিশের আচরণকে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত এবং বিরোধী স্বরকে চেপে দেওয়ার প্রয়াস বলে অভিযোগ করেছে এদিন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুরজিৎ ভবন সিপিআই(এম)’র মালিকাধীন। ওখানে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়, যার মধ্যে পার্টির শিক্ষা শিবির এবং সেমিনারও আছে। আসন্ন জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের আলোচনার বিকল্প হিসাবে ‘উই ২০’ মঞ্চের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ওই সেমিনারের আয়োজন করেছিল। অনুমোদন নেই বলে সেই সেমিনার বন্ধ করে দিতে চায় দিল্লি পুলিশ। বেসরকারি মালিকাধীন বড়িতে সেমিনার, আলোচনাসভা আয়োজনের জন্য কোনও পুলিশি অনুমতির প্রয়োজন হয় না। দিল্লি পুলিশের এই একতরফা আচরণের তীব্র বিরোধিতা করে মোদী সরকারের এধরনের হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
দিল্লি পুলিশের আচরণ সম্পর্কে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন যে, ‘‘কোনও ধরনের প্রকাশ্য রাস্তায় সমাবেশ হচ্ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবেই সেমিনার চলছিল হলে। আমাকে ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয়। এটাই ভারতের নব্য গণতন্ত্র।’’ সিপিআই নেত্রী অ্যানি রাজা মনে করেন, ‘‘এটা শুধুমাত্র সেমিনার বন্ধের চেষ্টা নয়, ভারতবাসীর ভাবপ্রকাশের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।’’

Comments :0

Login to leave a comment