Demand for Justice

পুঞ্জীভূত ক্ষোভই ফুটে বেরোচ্ছে বিচারের দাবিতে

উত্তর সম্পাদকীয়​

নন্দিনী মুখার্জি
নয়ই আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর। এক মাস সাত দিন পার হয়েছে আর জি কর কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার তিলোত্তমাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর। এই একমাসে কলকাতা, তথা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে এমন এক আন্দোলন যা বাংলার বুকে বহুদিন দেখা যায়নি। একটানা এক মাসের বেশি সময় ধরে সর্বস্তরে আন্দোলন গড়ে উঠছে। বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন অংশের এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ যে কোনও ফর্মে হোক, একত্রিত হচ্ছেন, মিছিল করছেন, প্রতিবাদ সভা করছেন। রাত দখলের আন্দোলন ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো শহরে, শহর থেকে মফস্বলে, গ্রামে। মধ্যবয়সি মহিলা যে কখনো মিছিলে হাঁটেনি, বেরিয়ে পড়ছে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। সবসময়, যে কোনও প্রতিবাদ সভা থেকে দূরে থেকেছে যে তরুণী, সেই হাত তুলে স্লোগান দিচ্ছে। রোজ সকালে সেক্টর ফাইভে অফিসে ঢোকা আর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরা ছাড়া যে আইটি কর্মী জীবনে অন্য কোনও ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার সময় পায় না, সেও নেমেছে রাস্তায় প্রতিবাদীর ভূমিকায়। এ কথা বলতেই হবে এই ধরনের আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কখনো দেখেনি যেখানে বিরাট সংখ্যক সাধারণ মানুষ সোৎসাহে অংশগ্রহণ করছেন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো সাধারণ মানুষ যেখানেই রাস্তায় নামছেন, সেখানেই নেতৃত্বে থাকছেন মহিলারা।

শোনা যায় চারণ কবি মুকুন্দদাস যখন গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন স্বদেশি মেলায় ঘুরে “ফেলে দাও রেশমি চুড়ি বঙ্গনারী, কভু হাতে আর পোরো না” গাইতেন, মেয়েরা এগিয়ে এসে শখ করে কেনা তাদের হাতের কাচের চুড়ি ভেঙে ফেলে দিত। যাদের “বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না” – বাংলার সেই মেয়েরা তখন আড় ভাঙতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আগল ভেঙে বেরিয়ে এসেছে, যুক্ত হয়েছে স্বদেশি আন্দোলনে সাথে। কেউ পা রেখেছে নতুন জন্ম নেওয়া কমিউনিস্ট মতাদর্শের পথে, দেখেছে সমাজ বদলের স্বপ্ন। বাংলার নারী সমাজের ক্ষমতায়নের সেই প্রথম লগ্নে সাধারণ মেয়েদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়া নিশ্চিতভাবে পরবর্তী নারী জাগরণের পথকে অনেকটাই মসৃণ করেছিল।

আজকে তিলোত্তমার ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে যে গণআন্দোলন সেটাও নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে দাঁড়িয়েই আন্দোলন। সাধারণভাবে রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে না চাওয়া মেয়েরাও অনুভব করছে যে কলেজ হাসপাতালের নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে যদি একজন মহিলা ডাক্তার নির্যাতিতা এবং খুন হন, তাহলে এই পশ্চিমবঙ্গে কোনও অবস্থাতেই মহিলারা নিরাপদ নন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর বিগত কয়েক বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ নারী নির্যাতনের সংখ্যার নিরিখে ভারতবর্ষের শীর্ষ রাজ্যগুলির অন্যতম। আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও বলে যেরকম সংখ্যক নারী নির্যাতনের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে ঘটছে তা আশঙ্কার। আবার বহুক্ষেত্রেই এই নির্যাতনের ঘটনাগুলি চাপা পড়ে যায় কখনো পরিবার অভিযোগ করতে ভয় পায় বলে বা পুলিশ অভিযোগ নথিবদ্ধ করাতে চায় না বলে। তিলোত্তমার ধর্ষণের ঘটনার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে আরও বেশ কয়েকটি নারী নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে আছে পূর্ব বর্ধমানে একটি চার বছরের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ও হরিপালে এক ছাত্রীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণের ঘটনা।
মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসক দলের বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীরা অন্যান্য রাজ্যে ঘটা ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনাকে উল্লেখ করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে এই ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে, সুতরাং এই ঘটনাকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মুখে এই ভাষ্য নতুন কিছু নয়। অতীতেও নারীনিগ্রহের মতো ঘৃণ্য ঘটনাকে তাঁরা “ছোট ঘটনা” বলেই পার পেতে চেয়েছেন। এবং বহু ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে হয় দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি, বা পড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেমন ২০১৩ সালে ঘটা কামদুনীর দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ট্রায়াল কোর্টে তিনজনের ফাঁসি এবং তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তিবিধান হলেও, ২০২৩সালে কলকাতা হাইকোর্ট তিনজনের ফাঁসি মকুব করে তার মধ্যে দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন, এবং বাকি চারজনের শাস্তি পুরোপুরি মকুব হয়। মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মন্তব্য করেন যে রাজ্য এই অপরাধীদের অপরাধ সম্পর্কে যথাযথ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এটি ভয়ঙ্কর গাফিলতি ছাড়া আর কি। কিন্তু এই গাফিলতি যে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত তা যাঁরাই নিয়মিত খবর রাখেন তাঁরা বলতে পারবেন, কারণ এই রাজ্য সরকার বাস্তবে দুষ্কৃতীদের পালক।

তবে রাজ্যে ঘটা বিভিন্ন নারী নিগ্রহের ঘটনায় সব জায়গাতেই সেই অঞ্চলের মানুষ প্রতিবাদ করলেও এতটা ব্যাপকতার সঙ্গে সেই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েনি বা এইভাবে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান দেখা যায়নি। তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে কারণ ঘটনাটি ঘটেছে হাসপাতালের নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে। এইরকম জায়গায় যদি একজন মহিলা ডাক্তার নিরাপদ না হন, তাহলে কোথায় নিরাপত্তা? খুব স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে থাকা  মহিলারা মনে করছেন যে এই ঘটনাটি মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপরই একটা বড় আঘাত।

আমাদের সমাজে এখনও বহু সামন্ততান্ত্রিক উপাদান মজুত রয়েছে। এখনও সামাজিকভাবে নারী ও পুরুষের সমান অবস্থান বহু ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে স্বীকৃত নয়। সুতরাং, এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলে, সমাজের পশ্চাৎগামী অংশ থেকে বাধা আসে নারীর অগ্রগতির পথে। নারীর এগিয়ে চলা, শিক্ষা লাভ করা, সামাজিক উৎপাদনে অংশগ্রহণ করা  বা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে যাওয়া– এইসব বিষয়েই নারীকে পেছন থেকে টেনে ধরা হতে থাকে। সমাজ শিখিয়ে দিতে থাকে নারী কিভাবে চলবে, কোন ধরনের পোশাক পরবে, কখন কখন বাইরে বেরোবে বা আদৌ ঘরের বাইরে পা রাখবে কি না। পুরুষ শাসিত সমাজে রাজনৈতিকভাবেও নারীর চারদিকে লক্ষণের গণ্ডি টেনে দেওয়ার চেষ্টা হতে থাকে।রাজনৈতিকভাবে নারীকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমরা দেখলাম তিলোত্তমার নৃশংস হত্যার পরবর্তী সরকারি নির্দেশিকায়। সরাসরি নারীকে কর্মক্ষেত্রে রাতে ডিউটি দিতে নিষেধ করা হলো। অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাও রাখা হলো, যাতে নারী কখনোই কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমকক্ষ না হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় পরিকাঠামো এবং ডাক্তারের অভাবের কথা তো বহুদিন ধরেই জানা ছিল। এখন বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সামনে আসছে এই সমস্ত জায়গায় পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির কথা। একই সঙ্গে জানা যাচ্ছে এইসমস্ত কলেজ হাসপাতালগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীরা কি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে চলেছে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে। রাজ্যে ২৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে যেখানে প্রত্যেক বছর ৩৮২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়। এ ছাড়া ১৫৬১ জন সুযোগ পায় উচ্চতর ডিগ্রি, অর্থাৎ এম ডি বা এম এস পড়ার সুযোগ। এই ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে থাকে ইন্টার্নরা এবং হাউসস্টাফরা। অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া উচ্চতর পর্যায়ে পঠনপাঠনরত ছাত্র-ছাত্রী এবং জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালের বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তিলোত্তমার ঘটনার পরে প্রকাশ্যে আসছে এই সমস্ত কলেজগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ভীতিপ্রদর্শনের সংস্কৃতি। এই ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু করার জন্য মূল দায়ী হলো শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কিছু ক্ষমতাবান প্রশাসক, অধ্যাপক, এবং আন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ডাক্তারি পড়ুয়া বা জুনিয়র ডাক্তারদের পেশাগত জায়গায় নানাধরনের সমস্যা তৈরি করার ভয় দেখিয়ে তাঁরা নানারকম চাপ সৃষ্টি করে থাকেন বলে এখন জানা যাচ্ছে। এমনকি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে দুর্নীতি এবং শাসকদলের সমর্থকদের বিশেষ সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে। কয়েকদিন আগেই একটি কলেজের কয়েকজন ছাত্রীকে অভিযোগ করতে শোনা যায় যে মৌখিক পরীক্ষার সময়ে তাদের কি ধরনের অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হয়। শুধুমাত্র প্রশাসক বা অধ্যাপকরা নন, শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার, বা সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রী, বা সদ্য ডাক্তারি পাশ করা কয়েকজন ব্যক্তি একইভাবেসমস্ত ডাক্তারি পড়ুয়াদের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকেন। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে ওঠা সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে এইসমস্ত ব্যক্তিদের আয়ত্তাধীন এবং এঁদেরই হুকুমমত চালিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই যে দুর্নীতি সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে গ্রাস করেছে তার পোষক হচ্ছে এই ব্যক্তিরা। সুতরাং তিলোত্তমা খুনের ঘটনার সঙ্গে যে এদেরই মধ্যে কেউ কেউ যুক্ত সেটাই মনে করা হচ্ছে। 
রাজ্যজুড়ে তাই যে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ঢেউ উঠেছে, যা ছড়িয়ে গেছে দেশের সর্বত্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায়, তা সামগ্রিকভাবে যেমন নারী নিগ্রহের প্রতিবাদী আন্দোলন, তেমনি নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশেষ বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে এক বৃহত্তর জায়গায় দাঁড়িয়ে এই লড়াইটার অন্য লক্ষ্য থাকছে পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিতরে যে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে তা সমূলে উৎপাটন এবং ভীতিপ্রদর্শনের সংস্কৃতিকে ভেঙে দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষা ও চিকিৎসার পরিবেশ তৈরি করা।   
সাধারণ মানুষের আবেগ যখন আটকানো যাচ্ছে না, তখন অতি সন্তর্পণে একটি সতর্ক বার্তা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে– বলা হচ্ছে এই আন্দোলনে যেন রাজনীতির রং না লাগে। মনে রাখা দরকার এইরকম একটি ন্যক্কারজনক ঘটনাকে প্রশাসন এবং শাসক দলের পক্ষ থেকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। বারবার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের নিগ্রহ এবং মৃত্যুর কথা বলে। আরও নানান কথা ছড়িয়ে শাসক দলের পক্ষ থেকেই শাসক দলের সাংসদ সহ অনেকেই ডাক্তার ও জনগণের এই আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। শাসক দলের নেতৃত্ব তিলোত্তমার বাবা-মা-কে মিথ্যাবাদী বানানোর চেষ্টা করেছেন। এই সমস্ত ঘটার পরে এই আন্দোলন আর অরাজনৈতিক থাকে না। যে কলুষ রাজনীতি আজ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ছেয়ে ফেলেছে, যে রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে তছনছ করে দিতে চাইছে, যে রাজনীতির দরুন বর্তমানে রাজ্যজুড়ে লুম্পেন শক্তি রাজ করছে, তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ফেটে বেরোবেই। একেবারে আগ্নেয়গিরির লাভার মতই সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ফুটে বেরোচ্ছে যাকে আটকাতে পারছে না বর্তমান শাসক দল। এমন কি আরএসএস, যারা প্রচ্ছন্নে থেকে এই শাসক দলের রাজনীতিকে মদত দিয়ে যাচ্ছে এবং এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারাও এই আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে। তাদের নেতৃত্ব মোহন ভাগবত এই সরকারের যে কোনও পদক্ষেপকে সমর্থন করবেন বলেছেন। মনে রাখতে হবে তিলোত্তমার খুনের ঘটনার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা কোন নিচু তলার পুলিশ কর্মী নয়, উপর থেকেই করা হয়েছিল। তাই এই আন্দোলন শাসকদল এবং তাদের সহায়ক শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত এক রাজনৈতিক আন্দোলন।

শাসক দল এবং তার চাটুকার মিডিয়া এই কথাটা বুঝে গেছে বলেই বামেদের উপর নামিয়ে এনেছে আক্রমণ। বাম যুব সংগঠনের নেতৃত্ব যেহেতু ৯ আগস্ট পুলিশের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিল, তাই যুব নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার মিথ্যা অভিযোগ এনে শাসক দলের মদতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য এক কর্মীকে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ ফরওয়ার্ড করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাল একটি চ্যানেলে শুনলাম “আজাদীর” স্লোগান কেন দেওয়া হচ্ছে তাই নিয়ে অন্য এক রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র এবং তার সাথে সঞ্চালিকা স্বয়ং তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। এই নৃশংস ঘটনা ঘটার পরেও যিনি বললেন “ ‘মনুবাদ সে আজাদী’ এই স্লোগান কেন দেওয়া হলো”, তিনি যে অবশ্যই মনুবাদের কট্টর সমর্থক সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ আছে? যে মনুবাদ সমাজে বর্ণবিভেদ বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে এবং নারীর ক্ষমতায়নের বিপক্ষে, সেই মনুবাদের সমর্থকদের থেকে নিস্তার পাওয়া এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

যখনই শাসকের কোনও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়ান, তখন সেই আন্দোলন হয়ে ওঠে এক রাজনৈতিক আন্দোলন। পৃথিবীর ইতিহাসে বারেবারে তাই দেখা গেছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই এইভাবেই বারে বারে ফিরে এসেছে। সমাজ এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নীত হয়েছে এইরকম জনগণের রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই। আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনও কোনও অরাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই লুম্পেন রাজের অবসান ঘটবে কিনা সেটা পরের প্রশ্ন। আপাতত “তিলোত্তমার খুনের বিচার চাই”– এটাই লক্ষ্য। তার সাথে উঠে আসুক সরকারি শিক্ষা, ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং নারীর সমানাধিকারের লড়াইয়ের কথা।

তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে কারণ ঘটনাটি ঘটেছে হাসপাতালের নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে। এইরকম জায়গায় যদি একজন মহিলা ডাক্তার নিরাপদ না হন, তাহলে কোথায় নিরাপত্তা? খুব স্বাভাবিকভাবেই মহিলারা মনে করছেন যে এই ঘটনাটি মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপরই একটা বড় আঘাত।

Comments :0

Login to leave a comment