প্রিতম ঘোষ
ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু নেই। কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে প্রতারণার তদন্তে ফের কথাটা মনে করালো পুলিশ। কিন্তু প্রতারণা চলছে।
আবার ওডিশা পুলিশ কটক থেকে সম্প্রতি একজনকে ধরেছে। জালিয়াতির শিকার কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণা সংস্থায় যুক্ত এক বিজ্ঞানী। তাঁর থেকেও কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফোনে ভয়েস কল বা ভিডিও কল আসছে। পুলিশ বা তদন্ত সংস্থার নাম করে বলা হচ্ছে ফোন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই নম্বর থেকে বেআইনি কাজ হচ্ছে। সমাধানের রাস্তা দেখানো হচ্ছে। টাকা অনলাইনে পাঠাতে বলা হচ্ছে। কখনও লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। পরের পর নির্দেশ পালন করলে জালিয়াতির খপ্পরে পড়া অবধারিত। গচ্চা যাবে টাকা।
অনেক ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে সন্তান এবং তার বন্ধুদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টাকা চাওয়া হচ্ছে। ভয় পেয়ে বা সন্তানের কথা ভেবে হয়তো তাৎক্ষণিক বেশ কিছু টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। আবার কয়েক লক্ষ থেকে কোটি টাকার মাদকদ্রব্য রয়েছে অভিযোগ তুলেও প্রতারণা চলছে। গুজরাটের এক ব্যবসায়ীর সর্বস্ব লুট হয়েছে এই কায়দায়। এখন আবার প্রতারণা হচ্ছে ‘হোয়াটসঅ্যাপ অ্যারেস্ট’ বলে। ফোন করে বলা হচ্ছে যে কাস্টমস অফিসার অথবা কোনও পুলিশ কর্মীর কল। কোনও অভিযোগ তুলে ‘হোয়াটসঅ্যাপ অ্যারেস্ট’ করার ঘোষণা করা হচ্ছে। ছাড়া পেতে বড় অঙ্কের টাকার দাবি করা হচ্ছে। বিখ্যাত জামাকাপড়ের ব্র্যান্ড মালিকও সাত কোটি টাকা লুটের শিকার হয়েছেন।
এরকম ফোন এলে ডায়াল টোনের পরিবর্তে একটি সতর্কবার্তা শুনত থাকবেন। এমনও বলা হয় যে ফোনের ওপরে থাকা ব্যক্তি কোন বিচারক বা কোন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা বা পুলিশের কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। তারপর জানানো হয় যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা আধার কার্ডের মতো ব্যক্তিগত নথি ব্যবহার করে জালিয়াতি হয়েছে। নারকোটিকস ব্যুরো থেকে সিবিআই, শুনলেই ধুকপুকানি হয় এমন সংস্থার নাম করা হচ্ছে।
অনলাইন জালিয়াতি যদিও একেবারেই নতুন নয়। বিশেষ করে ‘জামতাড়া গ্যাং’ বহু আলোচিত। তা নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। কিন্তু এখন ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টের নামে যে জালিয়াতি চলছে তার উৎস, সব ক্ষেত্রে, দেশের মাটিই নয়, বলছেন তদন্তে যুক্ত আধিকারিকরা।
আপনি বুঝবেন কী করে যে এই সব ফোন, ভিডিও বা ভয়েস কল, আসছে বিদেশ থেকে? যেমন ভারতের ফোন এলে নম্বরের আগে ‘+91’ লেখা থাকে। তেমনি যদি পাকিস্তান থেকে ফোন আসে তাহলে তার আগে ‘+92’ লেখা থাকবে, বাংলাদেশ থেকে ফোন এলে লেখা থাকবে ‘+880’, সৌদি আরব থেকে ফোন এলে তার আগে থাকবে ‘+966’, ইয়েমেন থেকে ফোন এলে লেখা থাকবে ‘+967’। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চালু করেছে হেল্পলাইন ১৯৩০। সেখানে সতর্কবার্তা শোনানো হচ্ছে। অবশ্য এমন ঘটনাও আছে যে সন্দেহজনক নম্বর থেকে ফোনের অভিযোগ দায়ের করতে গেলে নেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করতে। টাকা উধাও হওয়ার পর অভিযোগ নেওয়া হবে এই হেল্পলাইনে।
ওপরের উদাহরণ দেখলেই বোঝা যাবে যে কেবল ইন্টারনেটের সঙ্গে স্বল্প পরিচিতেরা শিকার নন। নেট দুনিয়ায় অভ্যস্তরাও জালিয়াতির খপ্পরে পড়ছেন। অপরাধীরা ধরা পড়লেও টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।
ফলে সরকারি স্তর থেকে ডিজিটাল জালিয়াতিতে নজরদারি কতটা জোরালো তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
Comments :0