Editorial

গণহত্যা আড়াল করতে

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত ২২ মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি নিরপরাধ প্যালেস্তাইনবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে মানব রক্তের হোলি খেলায় মেতে থেকেও তৃপ্তি মেটেনি জায়নবাদী ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। আধুনিক সভ্যতার বর্বরতম ও নৃশংসতম গণহত্যার এই নায়ক এবার দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছেন তার গণহত্যার অভিযানে যারা ন্যূনতম বিঘ্ন ঘটাতে চায় তাদেরও খুন করতে তিনি দু’বার ভাববেন না। গাজার সেই নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড তিনি ঘটিয়েছেন একেবারে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে। প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা ভূখণ্ডে এখনো যে কয়জন সাংবাদিক নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে ইজরায়েলি গণহত্যার ভয়াবহ দৃশ্য ও বর্ণনা সারা পৃথিবীকে দেখাচ্ছেন ও জানাচ্ছেন তাদেরকে এক সঙ্গে ড্রোন হামলা চালিয়ে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এমনকি স্বগর্বে এই হত্যায় দায়ও ঘোষণা করেছেন।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে আধুনিক পুঁজিবাদী গণতন্ত্রে স্বীকৃত সংবাদমাধ্যম। ইজরায়েল তাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে। বিশ্বের স্বঘোষিত সেরা গণতন্ত্র আমেরিকা আবার গণহত্যাকারী ইজরায়েলের সবচেয়ে মিত্র সমর্থক দেশ। তাই সাংবাদিক হত্যা করে ইজরায়েল উল্লাস করে আমেরিকা নীরবে তাদের বাহবা দেয়। ইজরায়েল যেমন হামাসকে নির্মূল করার নাম করে ৭৫ হাজার অতি সাধারণ মানুষ, বি‍‌শেষ করে শিশু ও মহিলাকে হত্যা করেছে এবং এখনও প্রতিদিন খুন করে চলেছে তেমনি হামাসের সহযোগী তথ্য প্রমাণহীন মনগড়া অজুহাত খাড়া করে সাংবাদিকদেরও হত্যা করে চলেছে। নরপিশাচ নেতানিয়াহু হামাস সদস্যদের থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বেশি বিপজ্জনক মনে করেন সাংবাদিকদের। কারণ তার বর্বরতা, নৃশংসতা, ধ্বংসলীলার যাবতীয় সংবাদ, চিত্র প্রতিদিন দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেন এই সাংবাদিকরা। বস্তুত সাংবাদিকরা যদি প্রাণকে হাতের মুঠোয় না নিয়ে ধ্বংসস্তূপে হাজির না থাকতেন তাহলে গাজায় মার্কিন সহায়তায় ইজরায়েল যেভাবে মানুষকে মানুষের সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে তার কোনও কিছুই কেউ জানতে পারত না।
গাজার বেশিরভাগ মানুষকে মেরে এবং বাকিদের বিতাড়িত করে সম্পূর্ণ গাজা দখল করা ইজরায়েলের লক্ষ্য। এটা ইজরায়েলের পক্ষ থেকে একাধিক বার ঘোষণা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে যে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে সেটা দুনিয়ার সামনে ধরা পড়লে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে দেশে দেশে। তাতে বেকায়দায় পড়ছে বা কোণঠাসা হবার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই গণহত্যা অভিযানের সঙ্গে গণহত্যার সংবাদ যাতে বাইরে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা হিসেবে সাংবাদিক হত্যাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এপর্যন্ত অন্তত ২৩০জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইজরায়েলি বাহিনী। গোড়া থেকেই বাইরের সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের আটক, হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু অদম্য সাংবাদিকরা সত্য ও বাস্তবকে দুনিয়ার সামনে হাজির করতে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে যাচ্ছেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প দে‍‌শেকি যুদ্ধ বন্ধ করছেন। যুদ্ধে নাকি নিরীহ মানুষের অকারণে মৃত্যু হয়। পাক-ভারত যুদ্ধ বন্ধে তিনি কৃতিত্ব দাবি করে যাচ্ছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে চাইছেন। কিন্তু গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যা বন্ধে তার কোনও তাড়া নেই। তিনি বরং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইজরায়েলকে সব ধরনের সাহায্য করে যাচ্ছেন। ইজরায়েলের লক্ষ্য পূরণের আগে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হোক ট্রাম চান না। আসলে ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যাকারী

Comments :0

Login to leave a comment