Illegal Immigration

অনুপ্রবেশ জিগিরই শেষ সহায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

আগামী বছর যে ক’টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে তার মধ্যে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে রেখে বিভাজন ও মেরুকরণকেই যে বি‍‌জেপি প্রচারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে সেটা লালকেল্লা থেকে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ইস্যুটাকেই এক বছর আগে ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মহড়া চালানো হয়েছিল। যদিও তাতে বিশেষ কোনও সুবিধা হয়নি। মোদী-শাহর দলকে গোহারা হারতে হয়েছিল। তথাপি এই ইস্যূটাকেই প্রধান হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বিজেপি-কে নির্বাচনে ঝাঁপাতে হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ এছাড়া আর কোনও জবরদস্ত ইস্যু তাদের হাতে নেই যাকে সামনে রেখে জোর টক্কর দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে দেশের জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে দেবার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। গত ১১ বছরের শাসনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে এমন ‘গভীর ষড়যন্ত্রের’ কথা মোদী আগে কখনও বলেননি। যদিও বিষয়টি নিয়ে গত বেশ কয়েক বছর ধরে আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী আতঙ্ক ছ‍‌‍ড়িয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারাও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলে চিলচিৎকার করে যাচ্ছেন। অবশ্য এই অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে সবচেয়ে মুখর ছিলেন অমিত শাহ। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী হবার আগে দলের সভাপতি থাকার সময় থেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা হিসাবে চিহ্নিত করে বিতাড়নের নিদান দিয়েছিলেন। কারও পক্ষেই এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে এই উইপোকা, রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশকারী ইত্যারদি শব্দবন্ধের মাধ্যমে আসলে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরই টার্গেট করা হচ্ছে। আগ্রাসী ও কৌশলী প্রচারের মাধ্যমে এটা বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে মুসলিম মানেই অনুপ্রবেশকারী। তাদের বিতাড়িত করা না গেলে এবং নতুন করে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যেই জনবিন্যাবস বদলে যাবে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা হচ্ছে হিন্দুরা কোণঠাসা হয়ে মুসলিমরা আধিপত্য করবে। হিন্দুত্ববাদীরা তাদের মুসলিম বিদ্বেষী রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে হিন্দুদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরির জন্য এই ধরনের প্রচার বরাবর করে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকেই আজকের বিজেপি’র অভিভাবক আরএসএস এমন বস্তাপচা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রায় আট দশক কে‍‌টে গেলেও জনবিন্যাসের তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। আগামী আরও আট দশক পরেও বিশেষ কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা ১৭ কোটি। ভারতে বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা ২৩ কোটির মতো। আর ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা ১১৪ কোটি। যদি বাংলাদে‍‌শের সব মুসলিমও ভারতে চলে আসে তাহলে তাদের সংখ্যা ৪০ কোটি। অবাস্তব গালগপ্পের গুজব ছড়িয়ে রাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যুগুলিকে আড়াল করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী গভীর ষড়যন্ত্রের কথা হাওয়ায় ভাসিয়েছেন। কে ষড়যন্ত্র কীভাবে করছে বলতে পারেননি। তাঁর রাজত্বে কয়জন বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে বলতে পারেননি। কারণ তেমন কোনও সরকারি তথ্যই নেই। তার চেয়ে বড় কথা সীমান্তে কড়া প্রহরার মাধ্যমে অনুপ্রবেশ আটকানোর দায় তো তাঁর সরকারের। সেই দায়িত্ব পালন না করে তিনি ষড়যন্ত্রের গল্প শোনাচ্ছেন। এতো নিজের থুতু নিজের মুখে ছেটানোর অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অনুপ্রবেশকারীরা দে‍‌শের যুবকের কাজ কেড়ে নিচ্ছে, মহিলাদের বিয়ে করছে আর জমি কিনে নিচ্ছে। কিন্তু এমন কোনও সরকারি তথ্য হাজির করতে পারেননি। এই কম-বেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা কম-বেশি সব দেশে ঘটে। আমেরিকায় সবচেয়ে বে‍‌শি। আর আমে‍‌রিকায় অবৈধ ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বাধিক গুজরাটের মানুষ। ট্রাম্প যে অবৈধ ভারতীয়দের হাতে শেকল পরিয়ে ভারতে চালান করেছিলেন তাঁর মধ্যে গুজরাটের মানুষ বেশি।

Comments :0

Login to leave a comment