High Court Job Scam

ইডি চাইলেই সমস্ত নথি দিতে হবে অভিষেককে

রাজ্য

দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে সিপিঅই(এম)'র সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সমস্ত নথি ইডি’র হাতে জমা দিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১০অক্টোবরের মধ্যে এই নথি জমা করতে হবে। অতিরিক্ত কোনো সময় দেওয়া হবে না।  ইডি যা চাইছে তা অভিষেককে দিতে হবে। কোনো ঢিলেমি নয়। তদন্তকারী সংস্থা মনে করলে তাঁকে সমন করতে পারে। তদন্তের কাজ ডিসেম্বরের মধ্য শেষ করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৌমেন সেন তাঁর পর্যবেক্ষণে একথা বলেছে। এদিন বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিসন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়নি। মামলার শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রেখেছে। তবে এদিন ডিভিসন বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে দিয়েছে দূর্নীতির তদন্ত হবে। তদন্তের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বিচারপতি অমৃতা সিনহা তদন্ত শেষ করতে যে নির্দেশ ইডি’কে দিয়েছিল তা বহাল রেখে ডিভিসন বেঞ্চ এদিন বলেছে. অভিষেক ব্যানার্জিকে অতিরিক্ত কোন সময় দেওয়া যাবে না। ইডি যেসমস্ত তথ্য চেয়েছে তাঁকে দ্রুততার সঙ্গে সব জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাঁকে জেরা করতে পারবে তদন্তকারী অফিসাররা। অভিষেককে প্রয়োজন হলেই ডাকতে পারবে তারা। তবে  ১৯ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত রেহাই থাকবে। উল্লেখ্য, ওই সময় রাজ্যে শারদোৎসব।

গত ২৯সেপ্টেম্বর বিচারপতি অমৃতা সিনহা তাঁর নির্দেশে এই মামলার দ্রুত তদন্তের কাজ শেষ করতে বলেছিলেন। অভিষেক ব্যানার্জিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৩ অক্টোবর যে সমন পাঠিয়েছিল তা যাতে কার্যকরী হয় সেবিষয়ে নজর দিতে বলেছিলেন বিচারপতি সিনহা। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে মামলা করেছিলেন অভিষেক ব্যনার্জি। তিনি বিচারপতি সিনহার নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। ডিভিসন বেঞ্চ স্থগিতাদেশের আবেদন গ্রাহ্যের মধ্যে না এনেই বলেছে তদন্তের স্বার্থে অভিষেক ব্যানার্জিকে সমস্ত নথি ইডি’র হাতে তুলে দিতে হবে। 

এদিন অভিষেক ব্যানার্জির আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেলকে মামলায় সঙ্গে যুক্ত না করেই সিঙ্গল বেঞ্চ তার নির্দেশ জারি করেছে। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে, এই মামলার তদন্ত আদালতের নজরদারিতে হচ্ছে। ফলে তদন্তকারী সংস্থার কাজে আদালতের নজর আছে। এখানে মামলার সঙ্গে কাউকে যু্ক্ত করে তবেই তদন্তের কাজ করার নির্দেশ দিতে হবে এমনটা হয় না। কারণ তদন্ত চলছে আদালতের নজরদারিতে। 

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি’র তদন্তে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট। গত ২৯ সেপ্টেম্বর একথা জানিয়ে ইডি’র আইও মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতি তাঁর নির্দেশ বলেছিলেন শুধু নিয়োগ দুর্নীতি নয়, পশ্চিমবঙ্গে কোন মামলার তদন্তে মিথিলেশ মিশ্র থাকতে পারবেন না। 

বৃহস্পতিবার ডিভিসন বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে বলেছে ইডি আধিকারিকদের তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত এই মামলার কাজ শেষ করতে হবে। দুর্নীতি তদন্তে অনুসন্ধান কোনভাবেই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। অমৃতা সিনহা তাঁর নির্দেশে বলেছিলেন তদন্তের স্বার্থে যেকোন পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি। বৃহস্পতিবার ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে যখনই প্রয়োজন হবে তখনই অভিষেককে ডাকতে পারবে ইডি। তবে ৪৮ ঘন্টা আগে সমন করতে হবে। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের ঢিলেমির কারণে অপরাধী যেমন অধরা থেকে যাচ্ছেন অন্য দিকে যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা রাস্তার ধারে দিনের পর দিন বসে রয়েছেন। কোন উৎসবেই তাঁরা সামিল হতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক ব্যানার্জির কোম্পানি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম উঠে আসার পর ইডি এই সংস্থায় তল্লাশি চালিয়েছে। এই সংস্থার একজন প্রাক্তন ডিরেক্টর সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সংস্থার আর্থিক লেনদেনের গতিপথের সন্ধান আদালতকে জানাতে পারেনি ইডি। গত শুক্রবার বিচারপতি সিনহা ইডি’র আধিকারিক মিথিলেশ মিশ্রকে বলেছিলেন, এই সংস্থার ওপর ৮মাস ধরে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। আদালত এই সংস্থার ৬জন ডিরেক্টরের সম্পত্তি এবং সংস্থা সম্পর্কে বিষদে রিপোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু তদন্তের ফলাফল শূন্য। সংস্থার সিইও অভিষেক ব্যানার্জির সম্পত্তির হিসাব এবং তাঁর বাবা অমিত ব্যানার্জি ও মা লতা ব্যানার্জির সম্পত্তির কোন হদিশ দিতে পারেনি ইডি। তদন্তে ঢিলেমি এবং দায়সারা রিপোর্ট আদালতে জমা পড়ছে। বিচারপতি সিনহা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে আদালত ফল আশা করে। কিন্তু এখানেই আদালতকে হতাশ হতে হচ্ছে।’’ ডিভিসন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার তার পর্যবেক্ষণে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর কোন হস্তক্ষেপ না করেই তদন্তের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে বলেছে।

Comments :0

Login to leave a comment