অভীক ঘোষ
১৫ বছর ধরে মরনোত্তর চক্ষুদানের কাজে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছে জাঙ্গিপাড়ার এক যুবক। নাম সুরজিৎ শীল। সুরজিতের বাড়ি জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কর্নিয়া সংগ্রহ করে যাচ্ছে সে। তার এই ইচ্ছা শক্তিই বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামে নিরন্তর চক্ষু দানের সচেতনতা ও সংগ্রহ করে চলেছে সুরজিৎ। সাইকেল নিয়ে হুগলি , আবার হুগলি থেকে হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে পৌঁছে যায় আই কালেকশনের যন্ত্রপাতি নিয়ে। এব্যাপারে প্রথাগত শিক্ষা না থাকলে, সরকারি হাসপাতালের ট্রেনিং নেওয়ার পরই এই কাজ শুরু করে সুরজিৎ।
২০০৭ থেকে চক্ষু সংগ্রহের কাজে যুক্ত হয় সে। বর্তমানে পাঁচশোর বেশি কর্নিয়া কালেকশন করেছে সে নিজেই। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর এক মাত্র লক্ষ। আয় বলতে, তেমন কিছুই নয়, বাবার তাঁতের কাজ। পাশাপাশি সংসার সামলাতে ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করে সুরজিৎ। তবে সুরজিৎ একাই নন, সুরজিতের সঙ্গে রয়েছে আরও কয়েকজন যুবক। যারা সুরজিতের সঙ্গে গিয়ে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে। এছাড়াও তাঁরা রাজবল হাটের কালচারাল সার্কেল বলে একটি সংস্থা চলায়। যেখানে চক্ষু পরীক্ষা রক্ত পরীক্ষা সহ নানা ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজ হয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চক্ষু দানের প্রচার ও কর্নিয়া কালেকশন করাই তাঁর লক্ষ্য। সরকারি ভাবে সেভাবে স্বীকৃতি না পেলেও বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থার তরফে নানা সম্মান দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
সুরজিতের দাবি, তুলছেন মেডিক্যাল কলেজ গুলি ছাড়াও জেলা হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করুক সরকার। গোটা ভারতের ৩০ লক্ষ মানুষ কর্নিয়াজনিত কারণে অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। বছরের ৮০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষের কর্নিয়া সংগ্রহ হয়। পশ্চিমবঙ্গের কর্নিয়া সংগ্রহ হয় ২ হাজারের মতো। এব্যাপারে তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে অনেকটাই এগিয়ে সরকারি সাহায্য ও সচেতনতা পেলে বহু মানুষের দৃষ্টি ফিরবে বলে আশা এই সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গুলির।
সুরজিৎ শীল আরও বলেন বর্তমানে সাড়ে ছয় শো জোড়া চোখ সংগ্রহ মেডিকেল কলেজে পাঠাতে পেরেছি। যার জেরে অনেকেই দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। আমি একা এই কাজ বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। সকলে মিলে করতে হবে। আমি সরকারি স্বীকৃতি কিছু পায়নি। আর্থিক সুবিধা বা উৎসাহ মূলক সহযোগিতা পাওয়া যায় না। মেডিকেল কলেজগুলিতে আই ব্যাঙ্ক তৈরি করা মতো সচেতন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ্ত সরকার বলেন, বর্তমান সমাজে এমন কাজ করার জন্য কেউ এগিয়ে আসতে চায়না। সুরজিৎ এই এলাকার ছেলে ওকে নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। সমাজের প্রতি ওদের টিমের অবদান প্রচুর। বিজ্ঞানকে সম্বল করে মানুষের জন্য কাজ করছে ওরা।
চিকিৎসক ও সংগঠনের সভাপতি প্রভাস দাস বলেন, সাইকেল নিয়ে সুরজিৎ ও টিম এই কাজ করে যাচ্ছে। রাজবল হাটের মতো প্রত্যত্ন জায়গা থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পৌঁছানো খুবই কঠিন। সরকারি ভাবে আর্থিক ভাবে সাহায্য করা উচিত। সুরজিতের মতো ছেলেদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গের ২ লক্ষ থেকে তিন লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত অন্ধ মানুষ হাহাকার করছে। সেটা শুধুমাত্র আমাদের মতো সংস্থার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় ২ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ হয় মাত্র।
Comments :0