INDIA

দেশবাসীর মনে আস্থা জাগাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ

জাতীয়

INDIA


‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের তৃতীয় বৈঠকের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। দু’দিনের এই বৈঠক শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের শহরতলির ‘গ্র্যান্ড হায়াত’ হোটেলে। বুধবার ওই হোটেলেই বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) প্রধান উদ্ধব থ্যাকারে জানিয়ে দেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো বহু ‘মুখ’ আছেন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের। বরং বিজেপি’রই নরেন্দ্র মোদী ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি নেই। তাঁকেই আমরা দীর্ঘ ৯ বছর ধরে দেখছি।’’ এরই পাশাপাশি সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক সর্বভারতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দলগুলির রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতির নিরিখে আসন সমঝোতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ‘এই মঞ্চ ভারতবাসীর মনে আস্থা জাগাচ্ছে।’
মুম্বাইয়ের বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র লোগো প্রকাশ করা হবে এটা চূড়ান্ত। আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করা হবে কীনা তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও কে হতে পারেন তা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। মঞ্চের সর্ববৃহৎ দলের সভাপতি হিসাবেই মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম বিবেচনা করা হয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে, মুম্বাইয়ের বৈঠকে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হতে পারে। এমনিতে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হবে মূলত প্রচার পরিচালনার দিকটি দেখভালের জন্য। আবার ১১ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যদের নামও সম্ভবত ঘোষণা করা হবে মুম্বাইয়ের বৈঠকে। আহ্বায়কের নাম ঘোষণা প্রসঙ্গে উদ্ধব থ্যাকারে সাংবাদিকদের এদিন বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। দেখুন বৈঠকে কী আলোচনা হচ্ছে।’’ উলটে জানতে চান, ‘‘আচ্ছা আপনারা কি এনডিএ’র আহ্বায়কের নাম বলতে পারবেন?’’ আহ্বায়ক বা সমন্বয়ের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে মুম্বাইয়ের বৈঠকে বলে জানিয়েছেন ইয়েচুরিও। তিনি বলেন, ‘‘মঞ্চের দলগুলির মধ্যে কীভাবে সহজতর সমন্বয় বজায় রাখা যায়, সে নিয়ে বিশদে আলোচনা হওয়ার কথা।’’
মুম্বাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠকের দায়িত্বে রয়েছে শিবসেনা (উদ্ধব)-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মহাবিকাশ আগাড়ি। এদিন প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। পাটনায় প্রথম বৈঠকে ১৭ দল, বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বৈঠকে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমারের মতো বিরোধী মঞ্চের বহু নেতা মনে করছেন, মুম্বাইয়ের বৈঠকে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। নীতীশকুমারের দাবি, এনডিএ’র সঙ্গে থাকাও কয়েকটি দল ‘ইন্ডিয়া’য় আসার জন্য যোগাযোগ করছে। এখনই না হলেও লোকসভা ভোটের আগেই তারা যোগ দেবে বিরোধীদের শিবিরে। মুম্বাইয়ের বৈঠকে যেসব দলের নেতৃবৃন্দ যোগ দিতে চলেছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা এদিন প্রকাশ করা হয়েছে। কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধীর পাশাপাশি রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে ও কেসি বেণুগোপাল উপস্থিত থাকবেন। বামপন্থী দলগুলির মধ্যে সিপিআই(এম)’র সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে অশোক ধাওয়ালে, সিপিআই’র ডি রাজা, বিনয় বিশ্বম ও বি কানগো, আরএসপি’র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক’র জি দেবরাজন থাকবেন বৈঠকে। তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে ডেরেক ও ব্রায়েনের থাকার কথা। এই বৈঠকে যোগ দেবে; শিবসেনা (উদ্ধব), কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, আপ, জনতা দল (ইউ), আরজেডি, জেএমএম, এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, আরএলডি, আপনা দল (কামেরাওয়াড়ি), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেএমডিকে, সিপিআই(এম-এল), এমএমকে, আইইউএমএল, কেরালা কংগ্রেস (এম), কেরালা কংগ্রেস (জে) এবং পেজ্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি অব ইন্ডিয়া। এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার এদিন জানিয়েছেন, ‘‘মুম্বাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে ২৮ দলের ৬৩ জন নেতা-নেত্রী যোগ দেবেন।’’ তবে বৈঠকে যোগ দিতে ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃবৃন্দ মুম্বাইয়ে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এদিন পৌঁছে গিয়েছেন ওখানে। তবে মঙ্গলবারই পৌঁছে গিয়েছেন আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব এবং তেজস্বী যাদব। বুধবার সন্ধ্যায় পৌঁছেছেন দক্ষিণ ভারতের দলগুলির অধিকাংশ নেতা।
‘ইন্ডিয়া’ যে আগামী লোকসভা ভোটে তীব্র চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে এনডিএ’র দিকে, সেব্যাপারে আশাবাদী মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। সীতারাম ইয়েচুরি, শারদ পাওয়ার থেকে অখিলেশ যাদব—সবাই একবাক্যে ‘ইন্ডিয়া’ দেশের বর্তমান শাসক দলের জোরদার বিকল্প হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করছেন। ইয়েচুরি যেমন বলেছেন যে, ‘‘এই মঞ্চ আস্থা জাগাচ্ছে মানুষের মনে। বহু বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে পেরেছে বিরোধীরা। এরা প্রত্যকেই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রক্ষার বিষয়ে একমত। সংবিধানে বর্ণিত অধিকারগুলি রক্ষা করতেই হবে। এটাই মঞ্চের মূল লক্ষ্য। বিরোধীদের সরকার গঠন হলে তখন অবশ্যই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করা হবে।’’ আবার আসন সমঝোতার প্রশ্নে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘বিরোধী ভোটের ভাগাভাগিতে যাতে বিজেপি কোনওভাবেই সুবিধা পেয়ে না যায় সেই লক্ষ্যে আলোচনা হবে আসন সমঝোতার বিষয়টি।’’ উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘যেন কেরালায় মঞ্চে থাকলেও ওখানে কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি লড়াই হবে বামপন্থীদের। বিজেপি’র ওখানে কোনও বিধায়কই নেই, ফলে সাংসদ হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য। আবার পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস সহ অন্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একযোগে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ওই রাজ্যে যদি বিজেপি বিরোধী শক্তি এক মঞ্চে এলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ফায়দা লুটে নেবে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই একমাত্র বিজেপি’র শক্তি কমাতে সমর্থ হবে। ফলে রাজ্য ধরে ধরে আসন সমঝোতার বিষয়টি নজর দিতে হবে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের চাপেই আমরা বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। জরুরি অবস্থা পরাস্ত হয়েছিল মানুষের সমর্থনে। একইভাবে পতন ঘটেছিল বাজপেয়ী সরকারের। মোদী সরকারেরও একই হাল হবে। ফলে মানুষের চাহিদার বিপক্ষে যাওয়া অসুবিধা আছে বিরোধী দলগুলির।’’
তাঁকে ঘিরে নানা ধরনের জল্পনা তৈরি করা হলেও শারদ পাওয়ার এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জোর দিয়েই বলেছেন যে, ‘‘দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসাবে উঠে আসবে বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। এই মঞ্চে আসন সমঝোতা বা অন্য বিষয় নিয়ে তেমন কোনও মতভেদ নেই।’’ এই মঞ্চে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীকে শামিল করা হবে কীনা জিজ্ঞাসা করা হলে পাওয়ার বলেন, ‘‘উনি বিজেপি’র দিকে আছেন কীনা এটা স্পষ্ট না করলে ওঁর সঙ্গে কথা বলার প্রশ্নই আসে না।’’ উদ্ধব থ্যাকারে এদিন বলেছেন, ‘‘এই মঞ্চে বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী দল একজোট হয়েছে গণতন্ত্র রক্ষার মতো অভিন্ন ভাবনাচিন্তা থেকে।’’ আর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী ঐক্যের হার মানবে মোদী সরকার বলে জোর দিয়ে বলেছেন সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশ পরিবর্তন চাইছে। একারণেই ‘ইন্ডিয়া’ পরাস্ত করবে বিজেপি-কে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment