Alipore zoo

চিড়িয়াখানার জমিতেও প্রোমোটারের থাবা!

কলকাতা

সত্যব্রত ভট্টাচার্য

আমাদের চারপাশের মাটি, গাছপালা, প্রাণী, জল ও বাতাস পরিবেশের উপাদান। এই পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ চিন্তিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এর একটি আবশ্যিক অঙ্গ। কিন্তু এই সবের মধ্যেই আমরা আমাদের চারপাশের খোলা জায়গা, গাছ ও বন, জলাভূমি ও প্রাণী হারিয়ে যেতে দেখছি। চারপাশের অতি পরিচিত পাখি, কীটপতঙ্গ, জন্তু ও জলজ প্রাণী দ্রুত কমে যাচ্ছে। এর সাথে দ্রুত হারে বাতাস ও জল দূষিত হচ্ছে। বাস্তুতন্ত্রের এই বিপর্যয়ের প্রভাব বসতি এলাকার বাসযোগ্যতা সঙ্কটপূর্ণ করে তুলছে ও সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সঙ্কট ঘনাচ্ছে জীবন জীবিকার। বাস্তুতন্ত্র তথা পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা, পর্যবেক্ষণে, সচেতনতা বৃদ্ধিতে চিড়িয়াখানা বা প্রাণী উদ্যানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইন 
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা আগেই তাঁদের রায়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সংবিধানের ৪৮এ ধারার অনুচ্ছেদের নির্দেশিকা যেখানে বলা হয়েছে যে ‘রাষ্ট্র পরিবেশ রক্ষা ও উন্নতি করতে এবং দেশের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে চেষ্টা করবে’ এবং ৫১ এ (ছ) অনুচ্ছেদের ঘোষণা যেখানে বলা হয়েছে ‘বন, হ্রদ, নদী এবং বন্যপ্রাণী সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও উন্নতি করা এবং জীবন্ত প্রাণীর প্রতি করুণা করা’ ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।’ পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালে বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইন সংশোধিত হয়ে সমস্ত প্রাণী উদ্যান, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি’ ও চিড়িয়াখানা সংক্রান্ত নিয়মাবলী তৈরি হয়। ১৯৯৮ সালে ‘জাতীয় জু পলিসি’ প্রণীত হয়। এই আইনে চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ, প্রাণী সংখ্যা, প্রাণী চিকিৎসা, সুরক্ষা ও উদ্ধার সংক্রান্ত প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রতিবছর চিড়িয়াখানার সমস্ত কর্মকাণ্ডের বার্ষিক প্রতিবেদন হিসাব ইত্যাদি দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রাণীর সংখ্যা, জন্ম মৃত্যু, স্থানান্তকরণ ও বন্য প্রাণী যোগ করার প্রতিটি সংখ্যার সাথে মৃত্যুর কারণ বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এই আইন লঙ্ঘিত হলে চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দিতে হবে। আলিপুর চিড়িয়াখানায় এই আইন কি মেনে চলা হচ্ছে?

চিড়িয়াখানার জমি বিক্রির উদ্যোগ 
সংবিধানের যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত বন্য পশুপাখির সুরক্ষা এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণ, তাই কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের হাতে রয়েছে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। ১৯৮০ সালে আলিপুর রোডের পূর্ব দিকের চিড়িয়াখানার জমি ৩৪, বেলভিডিয়ার রোড, দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর ৩৪এ, বেলভেডিয়ার রোড ঠিকানায় লিজের শর্ত হিসাবেই অবশিষ্ট জমিতে আবশ্যিক পরিকাঠামো নির্মিত হয়। আদালতের স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে শুধুমাত্র সরকারি তহবিলে অর্থ আহরণ সরকারি জমি বিক্রির কারণ হতে পারে না, আরও বৃহত্তর জনস্বার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখন হিডকোর মাধ্যমে কেবল টাকা তুলতে সরকার জমি বিক্রি করতে নেমেছে। চিড়িয়াখানার প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়েছে।
গতবছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই কলকাতা পৌর সংস্থার মেয়র পরিষদের প্রস্তাবে বলা হয় যে কোন এক উচ্চতর কর্তৃত্বের নির্দেশে ৯ জুলাই, ২০২৪ কলকাতা পৌর সংস্থার মহানাগরিক, রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব, পূর্ত বিভাগের সচিব, পৌর কমিশনার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিস্ট্রিক্ট ল্যান্ড রেভিনিউ অফিসার, আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর ও রাজ্য সরকারের বন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তারা যৌথভাবে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে গিয়েই ঠিক করে ফেলেন ৩৪এ, বেলভেডিয়ার রোডের সম্পূর্ণ ২৫৪ কাঠা জমি বিক্রি করে দেবেন। শুধু মনে হওয়ার ভিত্তিতে ঐ জমি পৌরসংস্থার বলে দাবি করা হলো মেয়র পরিষদের সভায়। সেই জমিতে বর্তমানে অ্যাকোয়ারিয়াম, প্রেক্ষাগৃহ, পশু চিকিৎসাকেন্দ্র, নার্সারি, কর্মী আবাসন আছে স্বীকার করেও হিডকোর মাধ্যমে জমিটি ফ্রি-হোল্ড হিসাবে বিক্রির প্রস্তাব মেয়র পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। বেগমবাড়ির জমি বিক্রির প্রসঙ্গে বন দপ্তর একটি ‘নোট’ পাঠিয়ে জানায় কেন্দ্রীয় জু অথরিটির নির্দেশিকা অনুসারে চিড়িয়াখানার বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনায় বহিরাগত প্রাণীদের জন্য একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টার, উদ্ধার করা প্রাণীদের জন্য একটি রেসকিউ সেন্টার এবং কর্মী আবাসনের জন্য ১ থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে ২০০০ বর্গ মিটার জমি প্রয়োজন। এগুলি চিড়িয়াখানার মাস্টার প্ল্যানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কলকাতা চিড়িয়াখানার জমি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় জু অথরিটি। মেয়র পরিষদের ঐ সিদ্ধান্ত কলকাতা পৌরসভার মাসিক বৈঠকে ৩০ আগস্ট, ২০২৪ অনুমোদিত হয়। অথচ তার আগেই ২ আগস্ট, ২০২৪, রাজ্যের ‘কমিটি অব সেক্রেটারিজ (অন মনিটাইজেশন অব ল্যান্ড)’ বন দপ্তরের কিছু আপত্তি অগ্রাহ্য করে ৩৪এ, বেলভেডিয়ার রোডের সম্পূর্ণ ২৫৪ কাঠা জমি বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

টাউন প্ল্যানিং আইনের ও অন্যান্য আইনের অবমাননা
বেঙ্গল পার্ক আইন ও টাউন প্ল্যানিং আইন অনুযায়ী চিড়িয়াখানা একটি ‘উদ্যান’ বা ‘পার্ক’।  ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের টাউন প্ল্যানিং আইনের অধীনে প্রকাশিত ল্যান্ড ইউজ অ্যা ন্ড ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যানের সিডিউল ৬-এর ক্রমতালিকায় ১৬২তম স্থানে আলিপুরের চিড়িয়াখানার উল্লেখ আছে ও সেই প্ল্যান অনুযায়ী ঐ জমির চরিত্র পরিবর্তন করা যায় না, ঐ জমিতে কোনও বাণিজ্যিক ভবনও নির্মাণ করা যায় না। রাজ্যের মুখ্য নগর-পরিকল্পনাবিদ ২৪ জুলাই, ২০২৪ তারিখের নোটে জানিয়েছিলেন, “চিড়িয়াখানার ঐ জমির প্রস্তাবিত ব্যবহার নগরপরিকল্পনা আইনের অধীনের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জমি বিক্রি করতে হলে কেএমডিএ-কে ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ডেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যান সংশোধন করতে হবে।” কেএমডিএ’র এই বক্তব্য মেনে নিয়ে ল্যান্ড ইউজ অ্যা ন্ড ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যানকে পরিবর্তন করতে কলকাতা পৌরসংস্থাকে ৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সমগ্র চিড়িয়াখানার জমির জরিপ করে পাঠাতে বলে। ল্যান্ড ইউজ অ্যা ন্ড ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যান পরিবর্তন করতে গেলে গেজেট নোটিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক ও মানুষের আপত্তি জানানোর সুযোগ আছে। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে হঠাৎ নগরোন্নয়ন দপ্তর হিডকোকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে একটি চিঠি দিয়ে জানায় যে ১৪৮.৬৭ কাঠা জমির চরিত্রের ব্যবহারে কোনও আপত্তি নাই। আসলে এর আগেই ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল যে, চিড়িয়াখানার এই জমি বিক্রি করতে হবে।

সাংবিধানিক দায়, বন সংরক্ষণ ও বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইন
ভারতের সংবিধানের ৪৮এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রকে পরিবেশ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় ও উন্নতিতে প্রচেষ্টা চালানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে। আবার ৫১এ অনুচ্ছেদের (জি) উপধারা অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের বন্য প্রাণী রক্ষা করা মৌলিক কর্তব্য। ১৯৯১ সালে বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইন সংশোধন করে সেন্ট্রাল জু অথরিটি (সিজেডএ) গঠিত হয় ও চিড়িয়াখানার প্রাণী সংরক্ষণের নিয়মাবলী প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮ সালে জাতীয় প্রাণীউদ্যান নীতি (জু পলিসি) প্রণীত হয়। এই সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই সেন্ট্রাল জু অথরিটি কি নিজের দায়িত্ব পালন করছে? নিয়ম লঙ্ঘিত হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও বন সংরক্ষণ আইনের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী বনাঞ্চল বা বন সম্পর্কিত জমির চরিত্র পরিবর্তন করা যায় না। চিড়িয়াখানাকে ‘বন সম্পর্কিত’ কর্মকাণ্ড বা বনের অংশ হিসাবে আইনে চিহ্নিত করা হয়েছে ও সেই কারণে চিড়িয়াখানার জমির চরিত্র পরিবর্তন করার এই প্রস্তাব আইনানুগ নয়।
২০০৯ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানার একটি মাস্টার প্ল্যান সেন্ট্রাল জু অথরিটি ওয়াইল্ড লাইফ সুরক্ষা আইনে অনুমোদন দেয় যাতে চিড়িয়াখানার মোট জমি ২০.৪৯ হেক্টর বলে উল্লেখিত আছে। এই মাস্টার প্ল্যানে ৩৪এ, বেলভেডিয়ার রোডের জমিতে অবস্থিত পরিকাঠামো চিড়িয়াখানার অঙ্গ হিসাবেই দেখানো আছে। এর পরিবর্তন করতে গেলে আইন ভঙ্গের প্রশ্ন আসবেই। ১৯৯৮ সালের ন্যাশনাল জু পলিসি অনুযায়ী প্রতিটি চিড়িয়াখানায় বাধ্যতামূলকভাবে একটি প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র রাখতে হবে। আলিপুর চিড়িয়াখানার উদ্ধার কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে মূল চিড়িয়াখানা বন্ধ হয়ে যাবে। চিড়িয়াখানায় নবাগত প্রাণী সাময়িকভাবে এই উদ্ধার কেন্দ্রে ও কোয়ারেন্টিন সেন্টারে অন্য প্রাণীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখাও বাধ্যতামূলক। এছাড়াও কোনও প্রাণীকে সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত করে রাখতে ও গবেষণার কাজে এই সেন্টারের প্রয়োজন। চিড়িয়াখানা যেহেতু একটি প্রাণী বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র, তাই এর সব প্রাণী প্রদর্শনীতে রাখা হয় না। অতিরিক্ত বয়সের কারণে, অসুস্থতার কারণে, মাতৃহারা শাবক, কিংবা অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রাণীর জন্মের কারণে স্থানের অভাব হলে আলাদা করে রাখতে হয়। আবার পারস্পরিক লড়াই থেকে সরিয়ে রাখতেও আলাদা করতে হয়। মূল কথা কোয়ারেন্টিন সেন্টার ও রেসকিউ সেন্টার ছাড়া আলিপুর চিড়িয়াখানা টিকতে পারে না।

বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হবে
কলকাতা পৌর এলাকার আয়তন প্রায় ২০৫ বর্গ কিলোমিটার। এই অঞ্চলের সবুজের অংশ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন প্রতি শহরে জনপ্রতি নূন্যতম ৯ বর্গ মিটার সবুজ রাখার কথা বলেছে। কলকাতা শহরে সেটা জনপ্রতি ১ বর্গ মিটারের সামান্য বেশি। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে এই শহরের বন বিভাগের জমিকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নির্মাণে দেওয়া যেতে পারে? শহরের পার্কগুলির অন্তত ২০% বা তার বেশি বিভিন্ন নির্মাণে সবুজ হারিয়েছে। আলিপুর জেলের প্যারেড করার মাঠ প্রোমোটারের কাছে বেঁচে দেওয়া হয়েছে। আলিপুরের সবুজ অঞ্চল ও জলাভূমি বুজিয়ে ধনধান্য, উত্তীর্ণ ইত্যাদি নির্মাণ হয়েছে। সাধারণভাবে উন্মুক্ত সবুজ না থাকলেও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিপুল সবুজ জমি থাকার কারণে ঘন বসতিপূর্ণ কলকাতার মধ্যে আলিপুর অঞ্চল পরিবেশগত দিক থেকে এক মরুদ্যানের মতো। চিড়িয়াখানা ও তার সংলগ্ন অংশে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির গাছ আছে, যার মূল্যও অসীম। প্রথম থেকেই আলিপুরের প্রাণী উদ্যানের জলাশয়ে প্রচুর পরিযায়ী পাখি ভিড় করতো। আজ সেই পাখিদের দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। তবুও জুলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে ২০১০ সালে প্রকাশিত শ্রীমতী সুচিত্রা ঘোষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আলিপুরের চিড়িয়াখানার প্রায় ২১ হেক্টর জমির খোলা পরিবেশে এখনও অসংখ্য পাখি ও অন্যান্য প্রাণী ও বৈচিত্রপূর্ণ পতঙ্গের আনাগোনা দেখা যায়। এরা বাসা বাঁধে ও জন্ম বিস্তার করে এই পরিবেশে। তাঁর পর্যবেক্ষণ এই জমিতে গাছের আড়ালে আবডালে অন্তত ৬৩০ প্রজাতির ফুলগাছ আছে, ২৩০ টি প্রজাতির পাখি দেখা গেছে ও ২০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী দেখা গেছে। শুধুমাত্র প্রজাপতি চিহ্নিত করা গিয়েছিল ৩৮টি প্রজাতির। ২০০৫ সালের পর্যবেক্ষণেও ৪৮টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি চিহ্নিত হয়েছিল। গতবছরের অর্থাৎ ২০২৩-২৪ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে সংরক্ষিত প্রাণীর বাইরের পরিবেশে ৪টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩০টি প্রজাতির পাখি, ১২টি প্রজাতির সরীসৃপ, ৬টি প্রজাতির উভচর প্রাণী ও ৫০টি প্রজাতির প্রজাপতি ও সমগোত্রীয় পতঙ্গ চিড়িয়াখানার দুই অংশ মিলিয়ে রয়েছে। এখন চিড়িয়াখানার প্রাণীদের যে বন্য পরিবেশে রাখার কথা, তার পরিবর্তন করা হলে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

চিড়িয়াখানার জমি ও প্রাণী বাঁচান 
আলিপুর জু একটি ‘বৃহৎ চিড়িয়াখানা’ গোত্রের মধ্যে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছিল, যদিও এর মোট জমির পরিমাণ প্রয়োজনের থেকে অনেক কম। এর কারণ ছিল বিরল প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা, মোট প্রাণীর সংখ্যা ও বার্ষিক দর্শকের সংখ্যা। এই বছর সেন্ট্রাল জু অথরিটির চিঠিতে অদ্ভুতভাবে গোত্রের উল্লেখ করেনি। ইনভেন্টরি প্রকাশ তালিকায় আলিপুর চিড়িয়াখানাকে ‘মিডিয়াম জু’ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ এই ঐতিহাসিক চিড়িয়াখানার মানের অবনমন হয়েছে। ক্রমশ প্রাণী উধাও হয়ে যাওয়ার তথ্য দেখে অনেকেই মনে করছেন এর সাথে যুক্ত রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচার চক্র। অপরদিকে চিড়িয়াখানায় কর্মীদের নিয়োগ বন্ধ। ঠিকা কর্মী দিয়ে চিড়িয়াখানা পরিচালনায় সেন্ট্রাল জু অথরিটি আপত্তি জানিয়েছে। সাধারণ মানুষের অতি জনপ্রিয় এই আলিপুর চিড়িয়াখানা হয়তো হারিয়ে যেতে বসেছে ইতিহাসের অন্ধকারে। রক্ষা করতে গেলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এমনকি চিড়িয়াখানা অন্যত্র নিয়ে গেলেও শহরের বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যাওয়ার কারণে বনবিভাগের এই জমি বন সৃজনের জন্যই রাখার প্রয়োজন। হাতে হাত ধরে রক্ষা করতে হবে ঐতিহ্য, সাধারণ মানুষের শিক্ষার, গবেষণার কেন্দ্র, শহরের বনাঞ্চল ও বিরল প্রাণীদের।

Comments :0

Login to leave a comment