লোকসভায় ‘অভিবাসী ও বিদেশী বিল, ২০২৫’ পাস হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিজেপি এই বিলকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা দৃঢ় করার পদক্ষেপ হিসেবে প্রচার করছে।’
উল্লেখ্য, দেশে চারটি চালু আইনে অবৈধ অভিবাসন এবং ভিসার মেয়াদ ফুরানোর পর থেকে যাওয়া বিদেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে তবু অবৈধ অভিবাসন রোধের নতুন বিল এনেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
লোকসভায় বিলের ওপর আলোচনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের খোলা সীমান্তকে দেশে অভিবাসনের জন্য দায়ী করেছেন। কেবল তাই নয়, লোকসভায় মন্ত্রীর ভাষণে শাহ বলেছেন, পরের নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা আসবে। তখন এই অংশে কাঁটাতারের কাজ হয়ে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র প্রচারের প্রধান উপাদান হয়ে উঠছে ‘বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা’ অনুপ্রবেশ। বাস্তবে সেই সুরেই ভাষণ দিয়েছেন শাহ।
বিরোধীরা এই বিলে কেন্দ্রের হাতে একতরফা ক্ষমতার ব্যবস্থা দেওয়ার জন্য সমালোচনা করেছে। অবৈধ অভিবাসন চিহ্নিত করার জন্য প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের হাতে একতরফা ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবে প্রশ্ন তুলেছে। বিলটির সব প্রস্তাব খুঁটিয়ে পরীক্ষার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তার পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলের স্বপক্ষে বলেন, "এটি ভারতে অভিবাসন এবং বিদেশীদের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবে ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং পর্যটনকে বাড়াবে।"
তিনি আরও বলেন, "শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা এবং ব্যবসার জন্য যারা পর্যটক হিসেবে ভারত আসতে চান তাঁদের সকলকে আমি স্বাগত জানাই। তবে যারা দেশের জন্য ক্ষতিকর, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা করা হবে।"
বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলি প্রত্যাখ্যান করে বিলটি ধ্বনিভোটে পাস হয়। অমিত শাহ বলেন, "কেউ কেন ভারতে আসছেন এবং তারা কতক্ষণ থাকতে চান তা জানা প্রয়োজন"।
এই বিলকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাংসদ কে রাধাকৃষ্ণণও। কংগ্রেস সাংসদ মনোজ কুমার বলেছেন, "বিলটি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটিতে পাঠানো হোক অথবা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হোক।’’
অভিবাসন বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী জাল পাসপোর্ট বা ভিসা নিয়ে দেশে কাউকে পাওয়া গেলে তার ৭ বছর জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
হোটেল, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মেয়াদ পেরনোর পর থেকে যাওয়ার বিষয়ে তথ্য দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।
দেশে বরাবরই অবৈধ অভিবাসন রোধে আইন ছিল। এখন চারটি আইনে তা রোধ করা হয়। এই চার আইন- পাসপোর্ট আইন, বিদেশী নথিভুক্তি আইন, বিদেশী আইন এবং অভিবাসন আইন। নতুন বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী বাতিল হবে এই চার আইনই।
আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র অভিবাসন বিরোধী সুর এদিন স্পষ্ট হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের ভাষণে। সেই সঙ্গে স্পষ্ট বুঝিয়েছেন যে এই বিলের অন্যতম উদ্দেশ্য পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনও। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৪৫০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার দায়ী। ১১ বার চিঠি এবং দফায় দফায় আলোচনা করেও জমি পাওয়া যায়নি। কাঁটাতারের কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে। পরের নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হবে। তখন এই অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে।
শাহ রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে রাজ্যের সরকার। জাল আধার কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার সীমান্ত দিয়েই অবৈধ অভিবাসন হচ্ছে। আগে আসাম দিয়ে হতো, তখন ওই রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ছিল।
বিজেপি’র এই বক্তব্য নতুন নয়। সিপিআই(এম) বারবারই বলেছে যে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারের গাফিলতি না থাকলে আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন হওয়া সম্ভব নয়। রাজ্যের সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রের গাফিলতি রয়েছে। বিএসএফ তার সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিজের দায় স্বীকার করছে না।
Immigration Bill
অভিবাসন বিল: লোকসভায় শাহের ভাষণে সরাসরি ভোটের প্রচার

×
Comments :0