International Working Women's Day

৮ মার্চ - রঙিন বর্ণমালায় সংগ্রামের দিনলিপি আঁকার দিন

উত্তর সম্পাদকীয়​

কনীনিকা ঘোষ
প্রত্যেক বছর দিনপঞ্জিতে  আসে  ৮ মার্চ, আর সমাজে হই হই পড়ে যায়, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যেন তেন প্রকারেন আজ মেয়েদের কথা উচ্চারণের দিন, মেয়েদের ব্যথায়, যন্ত্রণায়  সংবেদনশীল হবার দিন। নানান আয়োজনে একে উৎসবে পরিণত করার কি আপ্রাণ চেষ্টা! কখনও বা শাড়ি-গয়না-প্রসাধনীর দামের ছাড়ে, কখনও বা আলোর রোশনাইয়ে ঝাঁ চকচকে বিপণিতে একদিনের জন্য মেয়েদের প্রতিভাকে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। ভাবখানা এমন, এই যে দেখো আমরা আছি— এই শ্রেণিবিভক্ত পুঁজিবাদী সমাজে ধান্দার ধনতন্ত্রও মেয়েদের জন্য আছে! 
আসলে এই আলোর শামিয়ানার বিপরীতে অসহনীয় যন্ত্রণা, আর আত্মত্যাগ দিয়ে গড়ে ওঠা এদিনটা। আমরা এদিনটিকে বহমান লড়াইয়ের আঙ্গিকেই দেখি। তাই এদিন আমাদের যাপনে, মননে।
নারী অবদমিত যুগে যুগে 
শ্রেণি বিভক্ত সমাজের সমগ্র ইতিহাসই তো নারী জাতিকে অবদমিত করে রাখার ইতিহাস। এঙ্গেলস কথায়, “পুরুষ কর্তৃক নারীর শোষণ প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণি শোষণের দৃষ্টান্ত” সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, পরিবার প্রথা, শ্রেণি বিভাজনের জন্যই উচ্ছেদ হয়েছিল মাতৃ অধিকারের। এঙ্গেলস  বলেছেন – “মাতৃ অধিকারের উচ্ছেদ (মাতৃ অধিকার অনুযায়ী বংশধারা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে) হচ্ছে স্ত্রী জাতির এক বিশ্ব ঐতিহাসিক পরাজয়” - সেদিন থেকেই নারীরা হয়েছে পদানত, শৃঙ্খলিত।  সামান্যতম অধিকারের জন্যও তাদের করতে হয়েছে সংগ্রাম, দিতে হয়েছে আত্মবলিদান। তবুও মেয়েরা প্রমাণ করেছে, ‘আমায় নইলে মিথ্যে হতো সন্ধ্যাতারা ওঠা / কাননে ফুল ফোটা’। প্রমাণ করেছে মাতৃজঠর থেকে লড়াই শুরু হলেও বারে বারে জন্ম নেবে মেয়ে।
শ্রেণিবিভক্ত সমাজে এক শ্রেণির দ্বারা অন্য শ্রেণির শোষণের যেমন অন্যতম মাধ্যম ছিল ধর্মের অপব্যবহার, তেমনই নারীকে শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট করার জন্যও 'ধর্ম' ব্যবহৃত হয়েছে। প্রচারিত হয়েছে নারীরা পুরুষদের তুলনায় কেবল নিম্নস্তরেরই নন তারা মূর্তিমতী পাপ। যুগে যুগে প্রত্যেক সভ্যতারই ধর্ম অনুশাসনে নারীদের জন্য এটাই ছিল বিধান।
বিদ্রোহিনী নারী  
আজন্ম সংগ্রামী নারীরা যদিও এ দাসত্ব মেনে নেননি বিদ্রোহ করেছেন বারে বারে। না এ বিদ্রোহ প্রধানত পুরুষের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল সমাজের চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাইতো নানান যুগে তাদের লড়াই ছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ক্রীতদাস ভিত্তিক রোম সভ্যতায় দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যই হোক অথবা সামন্ততন্ত্রের যুগে কৃষক বিদ্রোহে পুরুষের সাথে তারাও তো ছিলেন বিদ্রোহিনী । একইভাবে লড়েছেন, মরেছেন আবার জিতেছেন।
বহমান নারী মুক্তির দাবি
১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত টমাস মুর তার  'ইউটোপিয়া' গ্রন্থে শোষণমুক্ত এক কাল্পনিক সমাজের চিত্র এঁকেছিলেন যেখানে ছিল নারী মুক্তির কল্পনাও। তেমনই ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের ধারা থেকে স্বতন্ত্র টমাস মুঞ্জারের নেতৃত্বে স্থানীয় রাজতন্ত্র ও চার্চের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষকদের লড়াইয়ের ইশ্‌তেহার 'লেটারস অব আর্টিকেল' স্বীকৃতি দিয়েছিল নারী মুক্তির যথার্থতাকে। 
১৭৭৬-৮২ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমেরিকার জনগণ বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুক্তি বিপ্লব সফল করে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল মেয়েদের। শিল্প বিপ্লবের পর নারীরা ধনতন্ত্রের উৎপাদনধর্মী শ্রমে অংশগ্রহণ করেন ও উৎপাদিকা শক্তির অংশে পরিণত হন। এরপর আসে মহান ফরাসি বিপ্লব। এই বিপ্লবে অভিজাত বুর্জোয়া নারীদের ভূমিকা থাকলেও সর্বহারা অংশই প্রকৃত বিপ্লবী ভূমিকা নিয়েছিল। এই সময় বিশ্ব নারী আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদী লেখিকা মেরি উলস্টোন ক্রাফট ১৭৯০ সালে রচনা করেন ‘A vindication of the rights of women’। এখানে তিনি অসামান্য যুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রের নারীদের প্রতি অসাম্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ,পরবর্তীতে ১৭৯২ সালে মেরি তাঁর  ‘A vindication of the rights of women with strictures on moral and political subjects’  বইয়ে মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বনের পরামর্শ দেন, সমানাধিকারের কথা বলেন। এই স্বাধীনচেতা নারীকে এর জন্য কম লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু তাতেও মেরি বা মেয়েরা কেউই  দমে যাননি। চলতে থাকে লড়াই । ফরাসি বিপ্লব দারুণ প্রভাব ফেলে সমগ্র ইউরোপে। ইংল্যান্ডে প্রসার ঘটে নারী চেতনার, উত্থাপিত হয় নারী শিক্ষার দাবি, সমানাধিকারের দাবি।
১৭৬০ সাল থেকে শিল্প বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রবল শক্তিশালী শ্রেণি হিসাবে শ্রমিক শ্রেণি আবির্ভূত হয়। নানান ধরনের শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে। নারীরাও থাকেন এই লড়াইয়ে। সংগ্রামের পথে চলতে চলতেই ১৮৪৮ সালে বুর্জোয়া মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করে ঘোষিত হয় এক অমোঘ ঘোষণাপত্র, মার্কস এঙ্গেলসের ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’, যেখানে তারা উচ্চারণ করেন শিকল ছেঁড়ার স্লোগান, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ - এই আহ্বান তো ছিল নারীদের জন্যও। শুরু হয় এক অন্য অধ্যায়।  
১৮৪০-এর দশকে ল্যাঙ্কশায়ারে বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকরা প্রথম গড়ে তুললেন নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন যা বিশ্বে নারী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে সর্বপ্রথম। ১৮৬৪ সালে শ্রমিক শ্রেণির প্রথম  আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে মার্কস এর চেষ্টায় নারীরা ট্রেড ইউনিয়নের সভ্য হওয়ার অধিকার পায়। এগতে থাকে সংগ্রাম।
১৮৭১ - প্যারি কমিউন, যা বিশ্বে আলোর মশাল জ্বালিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য, সেখানে বিপ্লবী নারীরা নিয়েছিলেন অকুতোভয় ভূমিকা। অন্যতম নেত্রী নাথালি লেমেল-এর উদাত্ত ঐতিহাসিক আহ্বান, "We have come to the supreme moment, when we must be able to die for our Nation, No more weakness ! No more uncertainty!  All women to arms! All women to duty! Versailles must be wiped out!" (অবশেষে সেই চরম মুহূর্ত উপস্থিত, এখন আমাদের জাতির জন্য মরতে তৈরি থাকতে হবে। আর কোনও দুর্বলতা নয়! আর অনিশ্চয়তা নয়! সমস্ত নারী অস্ত্র ধরো! সমস্ত নারী কর্তব্য পালনে এগিয়ে এসো! ভার্সাই নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে!)
এরকমই আরেক নেত্রী লুই মিশেল, যাকে প্যারি কমিউনের অন্যত্ম শ্রেষ্ঠ নেত্রী বলা যায়, তিনি সামরিক পোশাকে ব্যারিকেডের পেছন থেকে সশস্ত্র লড়াইয়ের অন্যতম নেতৃত্ব দেন। জীবন মরণ তুচ্ছ করে বীরাঙ্গনা নারীরা অংশগ্রহণ করেন প্যারি কমিউনে। উত্তাল প্যারি কমিউন সফল হয়নি বটে তবে পৃথিবীর সংগ্রামে  রেখে যায় চিরচিহ্ন।
চলমান সংগ্রামের দিনপঞ্জি 
সমাজতন্ত্রী আন্দোলন এগনোর সাথে সাথেই নারী আন্দোলন চলে অগ্রগতির  পথে।
১৮৮৯ সালে বিপ্লবের সূতিকাগার প্যারি শহরেই অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের শ্রমিক সম্মেলন। সেখানে বিশ্ববরেণ্য কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন সমাজে আলোড়ন তুলে বললেন, নারী পুরুষ সমানাধিকারের কথা, যা অবাক হয়ে শুনল সমগ্র বিশ্ব, আর মহিলারা মর্মে মর্মে অনুভব করল এ দাবি, যা তাদের স্বপ্ন, তা বাস্তবে মূর্ত হতে পারে। অনুপ্রাণিত হল মেয়েরা। বিপ্লব স্পন্দিত বুকে রচিত হলো সংগ্রামের নতুন ইতিহাস।
১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ক্লারা জেটকিন। তাঁর অবিসংবাদী নেতৃত্বে, সমাজতন্ত্রীদের নেতৃত্বে এগিয়ে চলল নারী আন্দোলন। এই একই সময়ে এই দেশগুলিতে মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবিও জোরালো হয়েছে। এই আন্দোলনের পথেই এল ৮ মার্চ, ১৯০৮, যেদিন নিউইয়র্কের দর্জি শ্রমিক মেয়েরা ঐতিহাসিক ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেন। বয়ে চলা স্রোতোধারায় তখন দেশে দেশে এই  ভোটাধিকারের আন্দোলন, মেয়েদের কথা, সংগ্রাম। সমাজ তাদের জঙ্গি চেহারা-লড়াকু মেজাজ স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
১৯১০, ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে ২৭ আগস্ট দুই কিংবদন্তী নেত্রী ক্লারা জেটকিন ও আলেকজান্দ্রা কোলনতাই এর প্রস্তাব গৃহীত হয়। মহিলা আন্দোলনের মাইল ফলক এই প্রস্তাবেই  সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, প্রতি বছর একটি দিন পালিত হবে পূর্ণ বয়স্কা নারীর ভোটাধিকার দিবস হিসাবে। তীব্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই মেয়েদের লড়াই 'ফুলের সৌরভে সবার গৌরবে ভরে' উঠেছিল। 
১৯১১-১৩ সালে মার্চ মাস - ফাগুনের মাস, তার বুকের ভেতরের আগুন নিয়ে পরিণত হলো অধিকারের মাসে- নানান দিনে পালিত হলো 'নারী দিবস' আর এই গতিধারাতেই ঠিক হয়, শ্রমিক মেয়েদের ভোটাধিকার দাবি করার যে দিন ৮ মার্চ— সেদিনই পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে।
তারপর, ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালিত হওয়া শুরু হয়। ১৯২১ সালে লেনিন প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিকের তৃতীয় কংগ্রেসের ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স সেক্রেটারিয়েটের সভাতে সারা বিশ্বে সর্বজনীনভাবে ৮ মার্চ 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস 'পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। তারপর থেকে ৮ মার্চ আমাদের দিন, কাঞ্চন মুর্মু, ইলিনা জোনস, সাবিনা পারভীন, মিলি বোসের দিন, ৮ মার্চ সব মেয়েদের দিন।
এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের রাস্তাতেই লেনিন এর কথার,  বিপ্লবের সাফল্য নির্ভর করে নারীরা কতটা পরিমাণে অংশগ্রহণ করছেন, তার ওপর। সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন। আর এই অন্তবিহীন লড়াইয়ের পথে ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চ-কে রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। আমাদের দেশে বামপন্থীরা ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করলেও সারাদেশ জুড়ে ২০০০ সালে বেইজিঙ নারী সম্মেলনের পরে এই দিবস পালন করা শুরু হয়।
ওই পথেই আজও দৃপ্ত পদচারণা   
আজ যখন আমরা দেখি দেশের বিজেপি আরএসএস সরকার মুখে মেয়েদের জন্য বড় কথা বললেও, মনে তাদের মনুবাদী দর্শনেরই চাষ, আর ওই নীতির প্রতিফলনেই আজও লিঙ্গ বৈষম্য আশমান জমিন। মোদী শাসনের দশ বছরে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। কত অপরাধ তো নথিভুক্তই হয় না। যা নথিভুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় মহিলাদের বিরুদ্ধে গড়ে ৫০টি অপরাধ সংঘটিত হয়, ধর্ষিত হন ৮৮ জন মহিলা। দেশে অভিযুক্তদের ১০০ জনের মধ্যে ৭৫ জনই ছাড়া পেয়ে যায়। তাহলে অনেকেই কি অভিযোগ জানাতে আতঙ্কিত হবেন না? 
আমরা তো দেখেছি হাথরসের ধর্ষক বা বিলকিস বানোর ধর্ষকদের জন্য বিজেপি’র উচ্ছ্বাস। নারী দিবসের নাছোড় লড়াইয়ের উত্তরসূরি হিসাবে আমরা তো প্রতিবাদ করবোই, যখন ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় হলেও তাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ায় বিজেপি আরএসএস। আমরা, ‘we the people of India’ বলি, আমরা তো জানি, ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে / অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে’। এদেশেই তো লালন, চৈতন্য। এ দেশ যে মাতঙ্গিনীর আবার অরুণা আসফ আলির। সাম্প্রদায়িকতার সাথে কর্পোরেটের স্বার্থকে মিলিয়ে যারা কেড়ে নেয় আমাদের কর্মসংস্থান, মেয়েদেরও  করে দেয় পরিযায়ী শ্রমিক,  শ্রম কোড করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চায় শ্রমিকের অধিকার, মেয়েদের কাজের বড় জায়গা, এমএন রেগায় প্রতিদিন বরাদ্দ কমায়, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দিনই তো ৮ মার্চ। 
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি আরএসএস’র জুজু দেখিয়ে সব অন্যায়কেই ন্যায় হিসাবে প্রতিপন্ন করতে চাইছেন, অথচ বাস্তবায়িত করছেন ঐ নীতিরই পরিপূরক। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, কর্ম সংস্থানে শুধুই নেই আর নেই, আছে শুধু তোলাবাজি, কাটমানি, লুম্পেন রাজ। NCRB জানাচ্ছে ‘বাংলার নিজের মেয়ের’ রাজ্য নারী নির্যাতনে চতুর্থ। বাড়ছে নারী পাচার, বাল্যবিবাহ। সর্বত্র নৈরাজ্য দুর্নীতির এক বিশাল সাম্রাজ্য।  নিয়োগে দুর্নীতি, বালি-কয়লা খাদান, জল, জমি, জঙ্গল সর্বত্র কেলেঙ্কারি আর লুট। প্রশ্ন তুলব না এই দিনে? লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প তো মহিলাদের প্রাপ্য। সরকার তো আমাদের টাকাতেই আমাদের দিচ্ছে, সে তো থাকতেই হবে। তাই বলে যার যেমন যোগ্যতা সে তেমন কাজ পাবে না? উচ্চশিক্ষিত হলেও জুটবে না চাকরি, হবে না স্কুল সার্ভিস কমিশন?  ‘ওরা যত বেশি জানে তত কম মানে’, তাই দরকার নেই পড়াশোনার! 
সারা রাজ্য নারী নিরাপত্তার দাবিতে  আর জি করের নৃশংস ঘটনার বিচার চেয়ে উত্তাল গণআন্দোলনে তোলপাড় হলেও ঘটবে একের পর এক নারী নির্যাতন, আর সরকার বাঁচাতে চাইবে দুষ্কৃতীদের। তাহলে ৮ মার্চে তো ঐ দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের লেলিহান শিখা জ্বালাতেই হবে। বলতেই হবে দেশ ও রাজ্যের সরকার  ব্যর্থ মেয়েদের প্রকৃত দাবি মেটাতে, তাদের মর্যাদা দিতে। তাই মর্যাদাপূর্ণ  জীবন যা আমাদের অধিকার, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করতে, সব মহিলার জীবনের জন্য, ভালোবাসার জন্য মিলনের গান গাইতে, সমানাধিকার ছিনিয়ে আনার স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করতেই আমরা উদ্‌যাপন করবো আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৮ মার্চ।
 

Comments :0

Login to leave a comment