মণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
তাবুতে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলো ছিটে ফোঁটা করে। আমরা ক্যাম্প ল্যাম্প জ্বেলে যে যার ক্যাম্পে ঢুকে পড়লাম। আমাদের ক্যাম্পগুলো তিনজনের ক্যাম্প। আমাদের দুজনের সাথে জুটে গেল আরও এক বাঙালি ছেলে, নাম সুপ্রতিম। এই পুরো যাত্রাতে আমাদের দুজনের সাথে সুপ্রতিম তাবু ভাগ করে নেবে। আমরা হালকা চালে গল্প করতে করতে এক সময় স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়লাম। ঠাণ্ডা ভালই আছে। তার উপর বৃষ্টি। এযে বড় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। রাতের সাথে সাথে বৃষ্টির বেগও বাড়তে শুরু করলো। এক সময় জলের তোড় আমাদের তাবুর দুই পাশ দিয়ে যেতে লাগলো মহাবেগে। মনে হলো যেন সারা তাবু ও আমাদের সাথে করে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এই পর্বত প্রসারী জলধারা। উন্মত্ত মাতঙ্গীর মত বারে বারে আছড়ে পড়তে লাগলো আমাদের খড়কুটো প্রমাণ তাবুর উপর।
রাত পোহালে সবুজ উপত্যকা আরও সবুজ হলো। আজ আমাদের পথ মোটামুটি ৬ কিলোমিটার। তবে এই পথ একটু শক্ত হবে গতকালের চেয়ে। পাহাড় আরও বেশি করে মাপতে শুরু করবে আমাদের। আমরা ধীরে ধীরে দুই পাহাড়ের মাঝখান বরাবর চলতে শুরু করলাম সবুজ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে। দুপাশে প্রচুর নাম না জানা ফুলের মেলা। হাতে আঁকা পাহাড়ের গায়ে নিপুণ তুলির টানে এঁকে যাওয়া কারিগর একটু জিরিয়ে নিয়ে যখন আবার তুলি ধরে, সেই নরম সস্নেহ স্পর্শে ফুটে ওঠে পৃথিবী তথা এই নক্ষত্র মন্ডলের সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। সে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা হোক বা সিস্টিন চ্যাপেলের গায়ে শয়ে শয়ে ফ্রাস্কো।
সবুজ উপত্যকা ছোট ছোট নদী আর পাহাড়ের পথ ধরে একে একে আমরা সবাই পৌঁছলাম বালু কে গেরা ক্যাম্প সাইটে এ। এবারের ক্যাম্পে কিন্তু আমরা রোদ পেলাম। সুন্দর আকাশে মেঘের কোনো লেশ মাত্র নেই। রোদের আলোতে আমরা গা সেকতে দেখতে প্রকৃতিকে আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে লাগলাম। এ এক অন্য ভালো লাগা। বুক ভরে আকন্ঠ পান করতে লাগলাম সেই ভালো লাগাকে।
চলবে
Comments :0