রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে কাজে যোগ না দিলে ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে জুনিয়র ডাক্তারদের— বুধবার এভাবেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি এদিন হুমকির সুরে বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও ব্যবস্থা নিলে এরপর ওঁরা কোথাও ‘চান্স’ পাবে না।’’ এরপরই জুনিয়র ডাক্তারদের পালটা বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রথম থেকে দাবি ছিল যে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি প্রদান। এখনও সেই দাবিই রয়েছে আমাদের। দাবি যতক্ষণ না মিটছে ততক্ষণ আমরা কর্মবিররতি থেকে সরবো না। জরুরি অবস্থা আমরা চালু রেখেছি, চিকিৎসা পরিষেবা বজায় রেখেই আমাদের আন্দোলন চলছে।’’
বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূল নেত্রী রীতিমতো প্রশাসনিক প্রধান হিসাবেই বক্তব্য রেখেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য এদিন পরোক্ষে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গ টেনেছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও অ্যাকশন নিইনি। কারণ মনে করেছিলাম ওঁদের আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত। দেশ জুড়ে ধর্মঘট করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, দিল্লিতে ওরা কিন্তু এফআইআর করেছিল। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ওপরে ছেড়ে দিয়েছে।’’ এরপরেই রাজ্য সরকার যে অনেককিছুই করতে পারে, এক এক করে তার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি এদিন প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘আজকে ক’দিন হলো? আজকেও মিছিল আছে জুনিয়র ডাক্তারদের। আপনারা তো দায়বদ্ধ, মানবিক। অনেক মানুষ মারা গেছে পরিষেবা না পেয়ে, গরিব মানুষ যাবে কোথায়। ওঁরা ওদের বন্ধুদের বিচার চাইছেন ঠিক আছে, কিন্তু এখনও কর্মবরতি কেন? আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি এখনও। রাজ্য সরকারের কিন্তু ক্ষমতা আছে ব্যবস্থা নেওয়ার। এফআইআর করলে ওঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে, পাসপোর্ট ভিসা হবে না, কোথাও সুযোগ পাবে না, কেরিয়ার নষ্ট হবে। আমরা সেটা চাই না।’’ এদিন কার্যত এভাবেই তিনি হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কর্মবিরতি পালন করা যাবে না। আর কর্মবিরতি করলেই এরপর অ্যাকশন হবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের কর্মবিরতি উঠছে না। ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ চলতে চলতেই জুনিয়র ডাক্তারদেরও মিছিল চলতে থাকে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে শামিল হন তাঁরা। মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল হয় গোটা পথ। সেন্ট্রাল অ্যভিনিউ ধরে মিছিল যাওয়ার সময়ে রাস্তার প্রতিটি মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা এসে পৌঁছানোর পর জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘আর জি কর হাসপাতালের ওই নৃশংস ঘটনার পর থেকেই আমরা যে বিচার চেয়েছি, এখনও সেই বিচারের দাবিতেই আমরা অনড় আছি।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, ‘ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং ঘটনার সময়ে সেখানে উপস্থিত সমস্ত ব্যক্তিদের তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সিবিআই-কে দ্রুত এই তদন্ত শেষ করতে হবে, প্রমাণ সহ প্রকৃত দোষীদের সামনে আনতে হবে। কঠোর শাস্তি দিতে হবে প্রকৃত দোষীদের। যারা যারা প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত, তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। এমনকি পুলিশ কমিশনারকেও তদন্তের আওতার বাইরে রাখা চলবে না। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কাউকে আড়াল করা চলবে না। সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে- এসব অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এদিন জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, আমাদের এই দাবিগুলি মিটলেই আমরা কাজে যোগ দেবো। ’’
Junior Doctors
মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি দিলেও আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর জুনিয়র ডাক্তাররা
×
Comments :0