আদানি গোষ্ঠীর মালিকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক কী। কেন নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে উল্কার গতিতে সম্পদ বাড়ছে গৌতম আদানির। লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেই বক্তব্যের জন্য রাহুলকে ‘সভা অবমাননার’ নোটিস পাঠালোন লোকসভা সচিবালয়।
রবিবার কংগ্রেস জানিয়েছে যে লোকসভা সচিবালয় থেকে এই নোটিস পৌঁছেছে রাহুল গান্ধীর কাছে। বিবৃতিতে কংগ্রেস বলেছে, ‘‘সংসদের দুই কক্ষে অবাধে এবং নির্ভয়ে আলোচনা করার অধিকার সুরক্ষিত থাকার কথা। সেই দায়িত্ব লোকসভার অধ্যক্ষ এবং চেয়ারপার্সনের। সংসদে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে সেই ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলা যায় না।’’
গত বুধবার লোকসভায় বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক আলোচনায় আদানিকাণ্ড ঘিরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন রাহুল। আদানির সম্পরদ বৃদ্ধির তথ্যও দেন।
সংসদের দুই কক্ষে নিজের আলোচনায় আদানি সংক্রান্ত একটি প্রস্নেরও জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁরই সহযোগী, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে রাহুলের বক্তব্যে ‘স্বাধিকার ভাঙা’ হয়েছে বলে চিঠি দেন অধ্যক্ষকে। ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী নিজে।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের জেরে তার আগে থেকেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে গুরুতর পতন চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এলআইসি’র বিনিয়োগ এবং স্টেট ব্যাঙ্কের ঋণ রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর সাতটি সংস্থায়। আদানিকাণ্ডে আলোচনা চেয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। কিন্তু আদানি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি সরকারপক্ষ।
অধ্যক্ষকে লেখা চিঠিতে দুবের অভিযোগ, ‘‘রাহুল বক্তব্যের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি। তাঁর বক্তব্য অবমাননাকর, অশোভন, অসংসদীয় এবং অমর্যাদাপূর্ণ।’’ এই মর্মেই সওয়াল করেন মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীও। সংসদীয় কার্যধারার ৩৮০ নম্বর বিধি দেখিয়ে তিনি বলেছেন, অসম্মানজনক অভিযোগ করে সাংসদ হিসেবে নিজের অধিকার ভেঙেছেন রাহুল।
অধ্যক্ষ যদিও গত সপ্তাহেই ব্যবস্থা নিয়েছেন প্রথম দফায়। রাহুলের বক্তব্যের কিছু অংশ বাছাই করে ছেঁটে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন লোকসভার কার্য বিবরণী থেকে। এবার নতুন দফায় পাঠালেন নোটিসও।
সংসদে বিরোধীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে সরকারকে। কংগ্রেস সহ বিরোধী বিভিন্ন দল দাবি করেছে যে অন্তত যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।
দুবের নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, প্রমাণ যদি না-ই থাকে তা’হলে তদন্তে ভয় পাচ্ছে কেন সরকার। যৌথ সংসদীয় কমিটি হলে তো বিজেপি’র সাংসদই সংখ্যায় বেশি থাকবেন। তারপরও এত ভয় এই কারণেই যে তদন্ত হলে হাতে কলমে প্রমাণ বেরিয়ে পড়বে।
আদানির উত্থানে সরকারি মদতের বেশ কিছু তথ্য যদিও সংসদে বিরোধীদের বক্তব্যেই উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক বিদেশ সফরে আদানি সঙ্গী থেকেছেন। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে, বরাত পেয়েছেন আদানি। রাষ্ট্রায়ত্ত বন্দর, বিমানবন্দর এই গোষ্ঠীর হাতে গিয়েছে একের পর এক। শেয়ারের দামে পতনের মধ্যেও তিনশো কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল এলআইসি।
Comments :0