অনির্বাণ দে
বৃষ্টি ভেজা ডোমকল। কয়েক ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে জলকাদায় মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা নেই। শনিবার বিকেলে সেই রকম মাঠেই সমাবেশ করল কৃষক সভা। কেউ কেউ ছাতা নিয়ে টানা ভিজলেন। সভা শুনলেন। কেউ আশেপাশের দোকানে। কেউ আব্দুল বারি মঞ্চে মাথা গুঁজে শুনলেন প্রথম থেকে শেষ অবধি। কৃষক সমাবেশ থেকেই লড়াইয়ের শপথ নিলেন কৃষক, খেতমজুররা।
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই শনিবার মঞ্চ থেকে ভাষণ দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক এবং পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। আহবান জানিয়েছেন গড়ার লড়াইয়ে শামিল হওয়ার। তৃণমূল আর বিজেপির বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে চলছে লড়াই। জানিয়েছে জনকল্যাণ ময়দানের জমায়েত।
এদিন সভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, লাল ঝান্ডা গড়ার শক্তি। আর তৃণমূল, বিজেপি ভাঙার শক্তি। ধ্বংসের শক্তির বিরুদ্ধে রাজ্যকে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
তিনি ডোমকলের উদাহরণ তুলে ধরেই বলেছে, ডোমকলের গার্লস কলেজ, পৌরসভা, রাস্তায় উন্নয়ন সবই বামফ্রন্ট সরকারের সময় হয়েছে। তৃণমূল পৌরসভাতে শুধুই দুর্নীতি করেছে। সেই লুটের টাকা নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর গন্ডগোল চলছে।
ডোমকলের সভায় তৃণমূল নিয়ে সতর্ক করেছেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন যে আরএসএস-র অভিভাবকত্বেই তৈরি হয়েছে তৃণমূল। বিজেপি-আরএসএস রাম মন্দির করলে মমতা ব্যানার্জি জগন্নাথ মন্দির করছেন। সরকারের কাজ স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট করা, নিয়োগ করা। তা না করে সরকার জগন্নাথ মন্দির, রাম মন্দির করছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার বলছে ওয়াকফ চালাবে। অথচ এই মোদী সরকারই ট্রেন চালাতে পারছে না। সরকারের কাজ সরকার করছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি অফিসে কোথাও নিয়োগ নেই। যেটুকু করছে সেখানেও শুধুই দুর্নীতি। তৃণমূলের দুর্নীতিতে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। স্বাস্থ্য, শিক্ষার বেহাল দশা। পানীয় জল অবধি নেই।
সেলিম বলেছেন, মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সামসেরগঞ্জে তৃণমূল আর বিজেপির পরিকল্পিত হিংসা হয়েছে। ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদের নামে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বিজেপি-কে মিছিল করতে বলেছে। তৃণমূল নেতারা অশান্তিতে মদত দিয়েছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছে, ওয়াকফ নিয়ে কথা বলবেন না। ওয়াকফ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হলে দিল্লি যেতে হবে। তৃণমূলের কারও হিম্মত নেই এর প্রতিবাদ করার। বিজেপি-আরএসএস প্রতিবাদ করলেই বলে, পাকিস্তান চলে যাও, বাংলাদেশ চলে যাও। আর তৃণমূল বলছে, দিল্লি যেতে। এরা এক গোয়ালের গরু।
সেলিম বলেছেন, ওয়াকফ সম্পত্তির দখল নিতে কেন্দ্র বিল পাশ করাচ্ছে। আর তৃণমূলের যে সাংসদরা বিরুদ্ধে ভোট দেননি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে? রাজ্যে কোথাও দাঙ্গাবাজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূলের সরকার। তাই সাহস বেড়েছে দাঙ্গাবাজদের।
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মোদী সরকার দেশের স্বাধীন বিদেশনীতিকে সঙ্কটে ফেলেছে। দেশের সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন থেকে হচ্ছে। এটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা চাননি। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে। এই মুহূর্তে দেশের বিদেশনীতির অবস্থান কী? আমেরিকা হস্তক্ষেপ করছে দেশের সিদ্ধান্তে। বামপন্থীদের শান্তির পক্ষে কথা বলতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। সন্ত্রাস পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে হোক বা পাড়ায় হোক, তার প্রতিবাদ করতে হবে। সন্ত্রাস আর ভয় দেখিয়ে লুটের পরিকল্পনা হচ্ছে।
সেলিম বলেছেন, আম্বানি আদানিদের সুবিধা দেখে দেশের নীতি ঠিক হতে পারে না। দেশের মানুষের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে। দেশের শ্রমিক, কৃষকের স্বার্থে সরকারকে কাজ করতে হবে। সেজন্য লড়াই সংগ্রামে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের হাতে দেশ আক্রান্ত হলে সরকারের কাজ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। আর বিজেপি দেশের মানুষকে জাত ধর্মের নামে বিভাজিত করছে। তৃণমূলও একই কাজ করছে।
Comments :0