উত্তর প্রদেশে সরকার তথ্য দিয়েছে কুম্ভমেলায় শাহি স্নানে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেছে তবুও তথ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি একই স্থানে। জানানো হয়নি নিখোঁজের সঠিক পরিসংখ্যানও। বিরোধীদের অভিযোগ তথ্য গোপন করছে যোগী আদিত্য নাথের সরকার। শুধু বিশ্বমানের আয়োজন করা হয়েছে। পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়িতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে, তুবুও পাশে থাকেনি উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার।
কুম্ভ মেলায় গিয়ে এই রাজ্যের ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। তিন’জন মারা গিয়েছেন পদপিষ্ট হয়ে। বাকি তিন জন ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়ে মৃতদের পরিবার। নিখোঁজের তালিকাও ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার বিকেলের শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে এই রাজ্যের অন্তত ৮ জনের কোনও খোঁজ এখনও পর্যন্ত পায়নি তাঁদের পরিবার।
মৃত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরির দাবি তুলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। রাজ্যের সরকারের কাছে তাঁর দাবি, উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনও কাগজপত্র না দিয়েই রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে দেহ।
বৃহস্পতিবার রাত প্রর্যন্ত এই রাজ্যের দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। জানা যায় প্রয়াগরাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অমল পোদ্দার (৬০) নামে এক ব্যক্তির। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কুম্ভ ও বিভিন্ন স্থানে ভ্রমনের জন্য এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন শিলিগুড়ি লাগোয়া বাড়িভাষার মাদানি বাজার এলাকার বাসিন্দা অমল পোদ্দার। বুধবার বিকেলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় প্রয়াগরাজে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ছেলে অসিত পোদ্দার উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। কুম্ভে গিয়ে নিখোঁজ শিলিগুড়ি পাঞ্জাবীপাড়া দর্শনাদেবী বনসলের খোঁজ মিললেও এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত শিলিগুড়ি সংলগ্ন সমরনগর এলাকার বাসিন্দা পুতুল রায়ের হদিশ মেলেনি।
কুম্ভে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মালদা জেলার প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক অমিয় সাহা (৩৩)। তিনি কালিয়াচক ৩ ব্লকের রাজ নগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কার্তিকতলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্নানের পর তিনি বাবা মা ও পরিবারের থেকে বিচ্ছিন হয়ে অসুস্থ পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিড়সকরা।
কুম্ভে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার সীমান্ত শহর জয়গাঁর এক ব্যক্তির। মৃতের নাম মিঠুন শর্মা। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, মিঠুন ‘ট্যুর গাইডের’ কাজ করতেন। গত রবিবার বেশ কয়েকজন পর্যটককে নিয়ে তিনি প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বুধবার থেকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁকে। বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তি প্রথমে তাদের মিঠুন শর্মার অসুস্থ হওয়ার খবর দেন এবং তার ঘণ্টাখানেক বাদেই তার মৃত্যুর খবরও দেন। শুক্রবার দেহ বাড়িতে নিয়ে ফিরবে বলে জানা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন আধিকারিক বা কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন তিনি।
কুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ রুইদাস(৪৭)৷ শুক্রবার তাঁর দেহ ফিরে এসেছে কোন রকম কাগজপত্র ছাড়াই। মৃতের শ্যালক বিষ্ণু রুইদাস বলেন, আমি বিনোদ ও তাঁর এক বন্ধু গিয়েছিলমা কুমভমেলায়। ভিড়ের মধ্যে বিনোদ একদিকে চলে যায় আমি ও আরেকজন আরেকদিকে চলে যাই। এক কথায় বিনোদ আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির করে পাওয়া যায়নি বিনোদকে। পরে বিনোদকে ফোন করলে একজন ধরেন। তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে থাকা দেহের মধ্যে পেয়েছি ফোনটি। আপনার হাসপাতালে এসে দেখুন। কিন্তু হাসপাতালের নাম বলতে পারেননি তিনি।
তখন বিষ্ণু রুইদাস পাশের একটি হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিনোদের খোঁজ পাননি। কিছুটা দূরে অন্য একটা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন গেটে বিনোদের ছবি টাঙানো রয়েছে। ভিতরে গিয়ে দেহ চিহ্নিত করেন। রুইদাস জানান, পদপিষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে বিনোদের। তবে উত্তর প্রদেশ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে দেহ এই রাজ্যে এসেছে কোনও কাগজপত্র ছাড়াই। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। ময়নাতদন্ত না করে কাগজপত্র ছাড়াই কী ভাবে দেহ ছেড়ে দিল প্রশাসন সেই উত্তর জানা নেই তাঁর।
বিনোদের স্ত্রী শর্মিলা রুইদাস বলেন, সোমবার আমার স্বামী আমার ভাই কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা দেন। পরেরদিন রাতে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। স্নানের পর থেকে আমার স্বামী নিখোঁজ ছিল সেই খবর আমাকে আমার ভাই জানিয়েছিল। তারপর ফোন করে জানা যায় অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। পরে জানতে পারি মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন আমার স্বামী।
কুম্ভে নিখোঁজের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এবার বৈদ্যবাটির প্রৌঢ়ের নিখোঁজের খবর পাওয়া গেলো। আগের বার কুম্ভ থেকে ফিরেছিলেন, এবার প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে গিয়ে নিখোঁজ হলেন বৈদ্যবাটির প্রৌঢ়। কুম্ভে স্নানে গিয়ে নিখোঁজ বৈদ্যবাটির বাসিন্দা দীনেশ ঘোষ। পরিবারে বাড়ছে উৎকণ্ঠা।
উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়া ব্লকের হাতিপা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মহিলা সুনীতি মল্লিকের খোঁজে পরিবার। চারদিন ধরে আতঙ্কের পরিবেশ গ্রামে। নিখোঁজ সুনীতি মল্লিকের পুত্রবধু সুমতি মল্লিক জানান, চাকুলিয়া থেকে কয়েকজনের সঙ্গে কুম্ভ মেলায় ২৫ জানুয়ারি গেয়েছিলেন। ওখানে অস্থায়ী ঘরে জামা কাপড় মোবাইল রেখে ২৭ জানুয়ারি স্নান সেরে উঠেই ব্যারিকেড ভেঙ্গে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সঙ্গে চার জন মহিলা ছিলেন। ৩ জনের খোঁজ পাওয়া গেলেও শাশুড়ির খোজ মেলেনি। এদিকে জেলার ডালখোলার বাসিন্দা ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ২৯ জানুয়ারি থেকে নিখোজ। ছেলে বিশ্বজিত মজুমদার মেয়ে পিয়ালি মজুমদার উৎকণ্ঠায় জানালেন ২৯ জানুয়ারি বেলা ১ টা দেড়টা নাগাত স্নান সেরেছেন। বাবা নিজেই সে খবর দিয়েছেন। তারপর থেকে মোবাইল স্যুইচ অফ। বাবার আর কোনো খোজ খবর মিলছে না। দুশ্চিন্তায় পরিবার। ওই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ খোজ খবর দিতে পারছে না।
Maha Kumbh Stampede
কুম্ভে গিয়ে মৃত রাজ্যের ৬, নিখোঁজ একাধিক
×
Comments :0