‘চোর’ অভিযোগ উঠলে নেতারা পালটা কী বলবেন, জানাতে পারলেন না মমতা ব্যানার্জি। তবে দলের নেতাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর ভোকাল টনিক,‘‘চোর বললে ভয় পাবেন না। বুক চিতিয়ে তৃণমূল করুন।’’
অর্থাৎ লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। চোর বললেও সাহস দেখাতে হবে।
শুক্রবার কালীঘাটে দলের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। চাকরিতে নিয়োগ থেকে রেগা, আবাস যোজনার টাকা চুরি— দুর্নীতির নানা অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলের মহাসচিব, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান পার্থ চ্যাটার্জি, বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সহ আরও বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা কোটি কোটি টাকা চুরির অভিযোগে ধৃত। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের চাঙ্গা করাই ছিল মমতা ব্যানার্জির প্রধান চ্যালেঞ্জ। যুক্তিপূর্ণ রাস্তা ছিল একটিই। দুর্নীতির অভিযোগগুলির বিরুদ্ধে যুক্তি, প্রমাণ হাজির করার চেষ্টা। কিন্তু যেহেতু রাজ্যের মানুষই তৃণমূল নেতাদের নানা ধরনের চুরিতে ভুক্তোভোগী, ফলে অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনও যুক্তি দেওয়ার অবস্থায় নেই খোদ মমতা ব্যানার্জিই।
তাই মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ,‘‘চোর বললে ভয় পাবেন না। বুক চিতিয়ে তৃণমূল করুন।’’
এদিন দলের বৈঠকের পরে মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূল নেতা সুদীপ ব্যানার্জি এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেখানে সুদীপের দাবি,‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের অবস্থান জিরো টলারেন্স।’’ অর্থাৎ দুর্নীতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দল আপস করবে না। যদিও প্রায় সাত মাস আগে গ্রেপ্তার হওয়া অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই তৃণমূল নেয়নি। সুদীপ দাবি করেন,‘‘যাঁরা দোষ করেছেন, শাস্তি পেয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো দেরি হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’’
সাগরদিঘিতে হারের ধাক্কা যে মমতা ব্যানার্জির বেশ লেগেছে, তা কিছুটা বোঝা গেছে এদিনের দায়িত্ব বন্টনে। মালদহ, মুর্শিদাবাদে দলের কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে। তাঁকে সাহায্য করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এবং রাজ্যসভার সাংসদ নাজমুল হক। মমতা ব্যানার্জি সরিয়ে দিয়েছেন দলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতিকেও। ছিলেন হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। যদিও বৈঠকে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে হার সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন,‘‘সাগরদিঘিতে হার হয়েছে নিজেদের দুর্বলতার কারণে। সংখ্যালঘুরা আমাদের সঙ্গে আছে, সংখ্যালঘু ভোট কমেনি।’’
এদিন যখন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির ক্ষমতা বাড়াচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি, তখনই তাঁর মুখে শোনা গেছে ফিরহাদ হাকিমের প্রতি হুঁশিয়ারি। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার মেয়রকে ‘বেশি কথা বলতে না’ করেছেন। তাঁর বক্তব্য,‘‘ববি বেশি কথা বলছে। ওর উচিত পৌরসভা নিয়ে শুধু কথা বলা। যদি কিছু বলতেই হয় আমার অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। ববিকে এটা মনে রাখতে হবে।’’
এদিন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব কালীঘাটের বাড়িতে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করেন। অখিলেশ কংগ্রেসকে ছাড়া তৃতীয় ফ্রন্টের পক্ষপাতী। এই বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। তবে ইতিমধ্যেই তাঁর ঘোষিত সিদ্ধান্ত,‘তৃণমূল একা লড়বে।’ যদিও কংগ্রেসের পাশে তিনি থাকবেন না, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন। সংসদেও তাদের ভূমিকা একই। এরই মধ্যে আগামী ২৪ মার্চ মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক হতে পারে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের।
Mamata Banerjee
চোর বললেও বুক চিতিয়ে চলুন, নির্দেশ মমতার
×
Comments :0