India Pakistan

এখনই শান্তি ফিরুক মহম্মদ রশিদ, সোপিয়ান

জাতীয়

কিশোর কুমার, আর এস পুরা 
রাত হতেই ফের ব্ল্যাকআউট। সাইরেনের প্রবল আওয়াজের সঙ্গে গাঢ় অন্ধকার মুড়ে গেছে চারপাশ। সুচেতগড় সীমান্তের কাছেই চলছে প্রবল গোলাগুলি। একের পর এক সেই গোলা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠছে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকা আরএস পুরা কলেজের দেওয়ালও। কখন কি হয়? সেই আতঙ্কেই সময় গুনে চলেছি। আমার মতো স্ত্রী, সন্তান সহ পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে যাঁরা এই কলেজে সীমানা ঘেঁষা গ্রামগুলি থেকে এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি, সকলেই প্রায় প্রাণ হাতে করে ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। জানি না এমন অবস্থা আর কতদিন চলবে।       
আরএস পুরার মতই জম্মু জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্ক। শুক্রবার রাত হতেই বিপদের সঙ্কেত দিতে আবার বেজে উঠেছে সাইরেন। সঙ্গে টানা গোলা বর্ষণের তীব্র আওয়াজ, সেই ভয়েই সিঁটিয়ে গোটা জম্মু সঙ্গে আরএসএস পুরা সেক্টরও। গত দু’দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন এখানকার মানুষ। এখানে সীমান্ত লাগোয়া একাধিক গ্রাম খালি করে দিয়ে হাজার খানেক মানুষের সঙ্গে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ইকবাল, শামা লাল, রতন লালারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে এদিন দুপুরে ইকাবলের সঙ্গে বেরিয়ে ছিলাম। স্থানীয় বাজারে তখন কেবল দু’চারটে দোকান খোলা। কিছু জিনিস পাওয়া গেলেও, বাকিগুলো নেই। এদিন সকালে, অনেকেই ফিরে গিয়েছিলেন কৃষ্ণাগড়, সাই মিরন শাহিদের মতো আশপাশের ছোট ছোট গ্রামগুলিতে। তাঁরা গিয়েছিলেন বাড়িতে থাকা গবাদি পশুদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেতে। ঘরবাড়ির অবস্থা কি আছে তা জানতেও গিয়েছিলেন। এদিন যাঁরাই আশ্রয় শিবির ছেড়ে বেরিয়েছিলেন সকলকেই প্রশাসনের নির্দেশে ফিরে আসতে হয়েছে বিকাল ৪টার মধ্যে।       
এই মুহূর্তে আরএস পুরার সীমান্তবর্তী সমস্ত গ্রাম খালি করে দিয়ে আশ্রয় শিবিরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন গ্রামবাসীরা। এই মুহূর্তে আরএস পুরা কলেজ এবং আইটিআই কলেজে অশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষ সকলেই একসঙ্গে রয়েছেন এই শিবিরে। আবার কেউ কেউ দূরে তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছেন। আশ্রয় শিবিরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এদিন পর্যন্ত তা মিলেছে। কাল কি হবে, কেউই জানেন না।  
আমার সঙ্গে থাকা শামা লাল, তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন বাড়িতে ফেলে আসা গোরু, ছাগলদের কি হবে সেই নিয়ে চিন্তিত সে। আমারই আরও এক প্রতিবেশী রামপাল গত রাতে গ্রামেই ছিলেন। গোটা রাতটা বাঙ্কারে কাটিয়েছেন। ইতিমধ্যে, প্রশাসন তিনটি শিবির চালু করেছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে ভবিষ্যতে ১৫টি জায়গায় শিবির চালু করার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে তিনটি শিবিরে কয়েক’শো লোককে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও বেশি লোককে এই শিবিরগুলিতে স্থানান্তরিত করা হবে।
এদিকে, ব্ল্যাকাউটের জেরে এদিন রাতেও অন্ধকারে ঢেকে গেছে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা। চলছে প্রবল সাইরেনের আওয়াজ। জানা গেছে, শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে দ্রোণ হামালা চালিয়েছে পাকিস্তান। অবন্তিপুরাতেও পাক বাহিনীর হামলার খবর মিলেছে। তবে, দিনভর শান্ত ছিল কাশ্মীর উপত্যকার অধিকাংশ জায়গা। উরি, কুপওয়ারা বাদে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা শান্ত ছিল। শান্ত সোপিয়ানের গ্রামগুলিও। কেবল স্কুল, কলেজ  বন্ধ। কিন্তু দোকানপাট, অফিসকাছারি সবই খোলা। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই বললেই চলে। এখনও কিছু পর্যটক আছেন, তা হাতে গোনা। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কেউই বেরোচ্ছেন না। সোপিয়ানের মতই এখন আতঙ্কের গ্রাসে গোটা উপত্যকা। সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় অনিশ্চিয়তা আরও বেড়েছে এখানকার জনজীবনে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ ব্ল্যাকআউটের জেরে গভীর অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল গোটা কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে সোপিয়ানও। ফের আলো যখন ফিরে আসে, তখন ঘড়িতে রাত ১২টা। একটানা চলেছে সাইরেনের তীব্র আওয়াজ। শ্রীনগর থেকে ৫১ কিলোমিটার দূরে সোপিয়ানের জিনা পোড়া গ্রামে আমাদের বাড়ি। এখানে সকলেই আপেলের চাষের সঙ্গে যুক্ত। উপত্যকা জুড়ে এই অসহনীয় পরিস্থিতি আর নেওয়া যাচ্ছে না। ক্ষমতার রাজনীতির জেরে সন্ত্রাস আর হিংসায় উপত্যকা জুড়ে বেয়ে গেছে রক্তের স্রোত। বেপথে চলে যাওয়ায় শেষ হয় গেছে হাজার, হাজার যুবকের জীবন। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে অসংখ্য পরিবার। শেষ পর্যন্ত যেন শান্তি আসে। এই মুলুকে শান্তি এখন বড় দরকার। দক্ষিণ কাশ্মীর উপত্যকায় পাইনের জঙ্গল ঘেরা ছবির মতো এই গ্রামও বারে বারে ক্ষতবিক্ষত সন্ত্রাসবাদী হামলায়। এর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।  শুধু আমি না গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়েই এখন শান্তি চায়।

Comments :0

Login to leave a comment