Modi Foreign policy

ভারসাম্যের নীতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিদেশনীতিতে ভারসাম্যের নীতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করা সম্ভব না হলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা থেকে যায়। ভারসাম্যের নীতির পেছনে যদি আদর্শগত ভিত শক্ত না হয়, সেটা যদি শুধুমাত্র স্বার্থকেন্দ্রিক হয় তাহলে সুফল মেলা দুষ্কর। এমনকি কুফলও মিলতে পারে। মোদী জমানায় বিদেশনীতিতে ভারসাম্যের নীতি কথাটি প্রায়শই উচ্চারিত হয়। পশ্চিম এশিয়ার ক্ষেত্রে যেমন মোদী সরকার ভারতের অবস্থানকে ভারসাম্যের নীতি শিরোনামে ব্যাখ্যা করতে চাইছে তেমনি ইউক্রেন-রা‍‌শিয়া যুদ্ধের প্রশ্নেও ভারসাম্যের কথা জোরালোভাবে বলা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের প্রতিষ্ঠিত বিদেশনীতি ছিল জোট নিরপেক্ষ নীতি। এই নীতিকে ঘিরে তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশ তৎকালীন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে জোট ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক জোটের বাইরে থেকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। মোদী ক্ষমতায় এসে সেই জোট নিরপেক্ষ নীতি পরিত্যাগ করে আদর্শহীন স্বার্থকেন্দ্রিক বিদেশনীতি অনুসরণ করছে। এই নীতিতে একদিকে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে পুষ্ট করতে আমেরিকার সঙ্গে যেমন সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক নিবিড় করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে আমেরিকার শত্রু রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অটুট রাখছে। আবার চীনকে ভারতের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে আমেরিকার ঘনিষ্ট সহযোগী হচ্ছে। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি আটকে দিয়ে আমেরিকার প্রভাব অটুট রাখার মার্কিন পরিকল্পনার সবচেয়ে জোরালো অংশীদার হতে চায় মোদী সরকার। আবার চীনে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহযোগী রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ আমেরিকার এক শত্রুকে মিত্র করে অপর শত্রুকে ঘোর শত্রু বানাচ্ছে। এই জটিল জগাখিচুড়ি সম্পর্কের নীতিকেই বলা হচ্ছে ভারসাম্যের নীতি। বাস্তবে এই নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এতে আদৌ কি বিশ্ব মঞ্চে ভারতের সম্মান ও মর্যাদা বাড়ছে নাকি মার্কিন অধঃস্তন সঙ্গী হিসাবে আত্মমর্যাদা হারাচ্ছে। এতে কোনও দেশের কাছেই বিশ্বাসযোগ্যতা থাকছে না।
রুশ-ইউক্রেন প্রশ্নে মোদীর ভারসাম্যের নীতি মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা। আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো আগ্রাসন থেকে নিরাপত্তার লক্ষ্যে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। ইউক্রেন পালটা যুদ্ধ চালাচ্ছে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তায়। অর্থাৎ ইউক্রেনকে দাবার বোড়ে বানিয়ে আসলে যুদ্ধ চলছে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে রাশিয়ার। এই যুদ্ধে রাশিয়াকে এক ঘরে করে ভাতে মারার কৌশল নিয়ে কার্যত অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করা হয়েছে। সেই সুযোগে সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কিনে বিপুল আর্থিক সাশ্রয় করেছে ভারত। তাতে ক্ষুব্ধ আমেরিকা। এরই মধ্যে আমেরিকায় যখন ন্যাটো বৈঠক চালাচ্ছে তখন গত মাসে মোদী মস্কোয় গিয়ে বৈঠক করেন পুতিনের সঙ্গে। তাতে আমেরিকা বিরূপ হচ্ছে দেখে মোদী ছুটে গেলেন ইউক্রেনে। ফিরে পরদিনই আমেরিকার মন পেতে বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপ সারলেন। তার পরদিন ফোনালাপ করলেন পুতিনের সঙ্গে। পাশাপাশি ফের মস্কো ও নিউ ইয়র্ক সফরের পরিকল্পনাও সেরে ফেললেন। ভাবছেন সাপের মুখে এবং ব্যাঙের মুখে চুমু খেয়ে দু‘পক্ষকে খুশি রেখে নিজের বিশ্বগুরু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চটা আরএসএস’র হিন্দত্ববাদী দাবার ছক নয়। এখানে অতি চালাকি চলে না। ইউক্রেনে ভারসাম্যের নীতি ফলাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment