বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি
ঘোষিত বিদেশিদের মিলবে না সরকারি সুবিধা। এমনকি ঘোষিত বিদেশিদের সমস্ত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করবে সরকার। গৌহাটি হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানালো কেন্দ্রীয় সরকার। সপ্তাহখানেক আগে আদালতে হলফনামা দিলেও মঙ্গলবার তা সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর এসেছে। আসামের মরিগাঁও জেলার ময়নুল হক নামে এক ঘোষিত বিদেশির মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে নতুন করে ঘোষিত বিদেশিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মরিগাঁও জেলার জুরিবার গ্রামের ময়নুল হককে ২০১৬ সালে সন্দেহভাজন বিদেশি নোটিস ধরিয়ে দেয় রাজ্যের সীমান্ত পুলিশ। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৩ মে মরিগাঁও জেলার বিদেশি ট্রাইবুনাল ময়নুল হককে বিদেশি ঘোষণা করে দেয়।
ট্রাইবুনালের এই রায়ের বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্ট আবেদন করেন ময়নুল হক। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০১৮ সালের ৭ মার্চ হাইকোর্ট ট্রাইবুনালের রায় বহাল রেখে ময়নুল হকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। যদিও পুলিশ সেদিন ময়নুল হকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ময়নুল হককে আরও একবার বিদেশি নোটিস ধরিয়ে দেয় পুলিশ। এবার তাঁর বিচার মরিগাঁও জেলার ট্রাইবুনালে শুরু হয়। দ্বিতীয়বার সমন হাতে পেয়ে শুনানির দিন ট্রাইবুনালে হাজিরা দিতে গেলে শুনানির আগেই ট্রাইবুনালের নির্দেশেই ময়নুল হককে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নিজেদের হেপাজতে নেয় পুলিশ। তারপর তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে দেয়।
ময়নুল হককে গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁর আইনজীবী জুবের আহমেদ। বিচারপতি অচিন্ত্য মল্ল বুজোর বরুয়া ও বিচারপতি রবীন ফুকনকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে ময়নুল হকের শুনানি শুরু হয়।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের হলফনামা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। হলফনামায় ভারত সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আর.কে.ডি. চৌধুরি হলফনামা দিয়ে বলেন, ঘোষিত বিদেশিরা সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। তাদেরকে সরকারি প্রকল্প মিলবে না। ঘোষিত বিদেশিরা যাঁর কাছ থেকে জমি কিনে এদেশে বসবাস করছেন, সেই জমি থেকে ঘোষিত বিদেশি ও তাঁর পরিবারকে উচ্ছেদ করে তা বাজেয়াপ্ত করবে সরকার। হলফনামায় বলা হয়েছে, ঘোষিত বিদেশিরা সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুসারে শুধু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ডিটেনশন ক্যাম্পে পাওয়ার সুযোগ থাকবে। এরচেয়ে বেশি কিছু জুটবে না।
তখন বিচারপতি অচিন্ত্য মল্ল বুজোর বরুয়া সলিসিটর জেনারেলকে বলেন, আসামে ট্রাইবুনাল কর্তৃক ঘোষিত বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরা হলেও বেশিরভাগকে তাদের নিজ দেশে প্রত্যর্পণ করা হয় না। এখানে তাদের বাকি জীবন কাটাতে হয়। তাদের পরিবারের বাকি সদস্যদেরও এদেশে থাকতে হয়। ফলে তাদের জমি ও সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করলে এরা থাকবে কোথায়। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বলেন বিচারপতি। এছাড়া, ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের শিক্ষিত করে তুলতে সরকারকে গুরুত্ব দিতে বলেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, রাজ্যের বাঙালিদের পাইকারি হারে বিদেশি নোটিস ধরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। ওদালগুড়ি জেলার ট্রাইবুনাল একসঙ্গে ৩২ জনকে বিদেশি ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ২৩ জন হিন্দু।
Comments :0