পানীয় জলের সঙ্কটের তীব্রতা বাড়ছে গোটা বিশ্বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই সঙ্কট আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
বুধবার ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট নামে একটি সংস্থা পানীয় জল সঙ্কটের উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টকে ভিত্তি করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ চরম জল সঙ্কটের মুখোমুখি। ২০৫০ সালের মধ্যে আরও একশো কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তখন আক্রান্তের সংখ্যাও একইভাবে বৃদ্ধি পাবে।
রিপোর্টে চরম জলসংকটের সংজ্ঞা নির্ধারিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যেই দেশগুলি তাদের জল সঞ্চয়ের ৮০ শতাংশ খরচ করে ফেলেছে, তাদেরকেই চরম জল সঙ্কটের মুখোমুখি বলা হচ্ছে।
এই তালিকায় ২৫ টি দেশ রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ গুলি হলো বাহরিন, সাইপ্রাস কুয়েত, লেবানন এবং ওমান। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে স্বল্প মেয়াদী খরার মুখোমুখি হলেই এই দেশগুলির জলের ভান্ডার শেষ হয়ে যাবে।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট এর গবেষক সামান্থা কুজমা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভূপৃষ্ঠের সব থেকে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো জল। কিন্তু যথাযথভাবে আমরা তার ব্যবহার করছি না। ঢালাও অপচয় হচ্ছে। আমরা দশ বছর ধরে এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছি। দশ বছরে একবারও আমাদের নজরে পড়েনি, যে যথাযথ উপায়ে জলকে সংরক্ষিত করা হচ্ছে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, গত প্রায় ৬০ বছরে জলের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে সেই চাহিদা আরো কুড়ি থেকে ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্র, শিল্পক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধিও এর বড় কারণ। এর পাশাপাশি জলের অপচয়ের ফলে এত দ্রুত হারে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা এক প্রকার জলশূন্য হয়ে যাবে কয়েক দশকের মধ্যে। একদিকে যেমন পানীয় জলের হাহাকার তৈরি হবে। তেমনি শিল্পক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কুজমা জানিয়েছেন, উত্তর মধ্য আফ্রিকা বা সাব সাহারান আফ্রিকায় প্রতিদিন জলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে জল সংরক্ষণের পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় চাহিদা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধির মাত্রা যদি শিল্প বিপ্লবের আগের তাপমাত্রার তুলনায় ১.৩ থেকে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হয়, তাহলেও কম করে ১০০ কোটি মানুষ নতুন করে জল সঙ্কটের মুখোমুখি হবেন।
সিএনএন’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই রিপোর্টেই এই সঙ্কট মোকাবিলার পথ বাতলে দিয়েছেন গবেষকরা। সব থেকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে জলাভূমি এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণের বিষয়ে। এর পাশাপাশি কৃষকরা যাতে কৃষিতে জল অপচয় না করেন, সেই সংক্রান্ত সচেতনতা গড়ার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সৌর শক্তি বা বায়ু বায়ু চালিত শক্তির মত অপ্রচলিত শক্তির বিকাশের ক্ষেত্রেও জোর দিতে বলা হয়েছে। যাতে জলশক্তির উপর চাপ কমানো যায়।
প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বেই নদীতে বাঁধ দিয়ে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ জল বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। সেই প্রবণতাতেও লাগাম টানতে বলেছে রিপোর্ট।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলসম্পদের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও সিঙ্গাপুর কিংবা লাস ভেগাসের মতো জায়গাগুলির প্রশাসন প্রমাণ করেছে বর্জ্য জল পরিশোধন করে পানের উপযোগী করা যায়।
বিকল্পের সন্ধান দিলেও, এই সমাধান বাস্তবে কতটা মেনে চলা হবে সেই বিষয়ে গবেষকরাও সন্দিহান।
Comments :0