প্রবন্ধ | মুক্তধারা
ঈদের আকাশ
সৌরভ দত্ত
রমজানের রোজনামচা। ঈদের চাঁদ নিষ্কলঙ্ক আলো। পৃথিবীতে ধর্মযুদ্ধের আগে ও পরে চাঁদ ছিল আছে ,থাকবে।সে চাঁদ কখনো পাণ্ডুর, কখনো পাণ্ডুলিপিময়। বুভুক্ষু মানুষের কান্না। কলকাতায় চাঁদ ওঠে।রেড রোডে ঈদ গাহের মাথায়। ভেদাভেদের উর্ধ্বে মানবতার এক চিলতে সুসপন আলো।উৎসবে সম্প্রতির বার্তা বিনিময়। তিরিশ রোজার শেষে আসে প্রতীক্ষিত দিন।এক মাস ধরে ভোরে উঠে ইফতার। বিবিধ উপাচারে ইফতার এর খাদ্যসামগ্রী সাজিয়ে দেন সংখ্যালঘু পল্লীর মহিলারা।হাঁস-মুরগির ডাক ,নিকোনো উঠোন।ফলের দোকানে ভিড়।দাম বাড়লেও মানুষের বিকিকিনি চলে।সিমুই, লাপচা হাতে করে দেখছে মেহেরবান মানুষ।ওপারেও একটা প্রতিবেশী দেশ আছে। মাতৃভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দেশ।আমাদেরই বাংলাদেশ ।কিন্তু গত কয়েকমাসে জেহাদি এনার্কিস্টদের দাপটে পাল্টে গেছে দেশটা। রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম। ধর্মীয় বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিচ্ছে সতত।মানুষ মরেছে কাতারে,কাতারে। ঈদের মানে খুশির দিন। শপিং মলে থেকে পাড়ার স্টেশনারি দোকানে লম্বা লাইন। নতুন জামা, চোস্তা-পাঞ্জাবি পরে ঈদগাহ মাঠে আব্বুর সাথে ভিড় জমাবে খুদেরা। নামাজের শেষে কবর জিয়ারত। পূর্ব পুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা।এরপর কচিকাঁচারা দল বেঁধে চোখে রঙিন চশমা পরে আইসক্রিম খেতে বেড়িয়ে পড়বে উদ্দেশ্যহীন। তরুণদের চোখে সুরমার টান,পরনে সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় ফেজ টুপি। সুগন্ধি আতরের গন্ধ। মুরুব্বি মানুষেদের সালাম জানাবে তারা। পাড়া প্রতিবেশিদের পরস্পরকে জড়িয়ে আলিঙ্গন।এ.আই-চালিত প্রযুক্তির যুগে কয়েকজন খুদে জিবলি অ্যাপে নিজেদের কার্টুন বানাচ্ছে।বিলকিসের দুহাতে মেহেন্দির রেখা।তার মনটা ভালো নেই পরিবারের কিছু মানুষ বাংলাদেশে খুব কষ্টের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে। সেখানে মুক্তিযোধা মুজিবের একটুকরো স্মৃতিও অবশিষ্ট নেই।এপারেও মকবুলের পরিবার থমথমে।আম্মি বুকে আঁকড়ে ধরে আছে ছবিটা।অনীশ খানের বাবা বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।আর কেউ অক্সফোর্ডে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে পিছনে হাঁটছে। শিক্ষিত -মার্জিত জন সমক্ষে দেদার ভুল ভাল ইংরেজিতে বাতেলা ঝাড়ে। রাজ্যটাকে শিক্ষা,স্বাস্থ্য সব দিক থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।ঈদের মাস কামনা,বাসনার মাস।ফরিয়াদের মাস। মাগফিরাতের চাঁদের আলো কি কাটিয়ে দেবে জাগতিক সব অন্ধকার!
Comments :0