digha jagannath temple

মন্দিরের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের পুনর্বাসন হয়নি

রাজ্য

রাধাগোবিন্দ মান্না: দীঘা
মন্দির উদ্বোধনের জন্য তৈরি। উদ্বোধন আগামী ৩০ এপ্রিল। কিন্তু মন্দিরের জন্য জমি অধিগ্রহণে যাঁদের উচ্ছেদ হতে হয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসন এখনও হয়নি। ক্ষুব্ধ সেই গরিব পরিবারগুলি। উচ্ছেদের সময় প্রশাসন এবং তৃণমূলের নেতারা তাঁদের বুঝিয়েছিলেন ছ’মাসের মধ্যে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেবে।
২০১৮-র ৬ ডিসেম্বর দীঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন পুরীর আদলে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি হবে। ২০১৯ সালে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক লাগোয়া ভগীব্রহ্মপুর মৌজায় ২০ একর জমি মন্দিরের জন্য বেছে নেয় দীঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ। ভগীব্রহ্মপুরে কুড়ি একর জায়গার উপর প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে পুরীর আদলে জগন্নাথ ধাম তৈরি হলো। ওই ফাঁকা কুড়ি একর জমির উপর কিছু মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯টি পরিবার বাস্তুহারা হয়ে আজও হাসপাতালের পাঁচিলের গায়ে বাস করছেন।
ওই এলাকার চারপাশ এবং ১১৬ বি জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় ৭০ টি ঝুপড়ি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এখনো পর্যন্ত তাদের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। গৃহহারা বরুণ জানা, গণেশ জানা, নিতাই পাত্র, পূর্ণিমা জানা, বাপি শ্যামল, সুমিতা পাত্রদের এখনো মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠাঁই হয়নি। হাসপাতালে পাঁচিলের পাশে ২০বাই ২০  জায়গায় ছেঁড়া পলিথিন, বাঁশ বাতার টিনেঘেরা ঘরে দিনযাপন। উচ্ছেদ হওয়া বাপি শ্যামল জানান, মাঝেমধ্যে প্রশাসন কখনো তৃণমূলের দাদারা এসে উঠে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। সুমিতা পাত্র তাঁর ভাঙা কালো ছেঁড়া পলিথিনের ঘর দেখিয়ে বলেন,‘‘মন্দির হয়েছে ভালো। অনেক দর্শনার্থী আসবেন। তাও ভালো। আমাদের জীবিকার জন্য কিছু ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। বেছে বেছে তৃণমূলের লোকজনকে সুযোগ দিয়েছে কেন?’’
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে দীঘা, শংকরপুর, মন্দারমণিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তৈরি হয় দীঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)। সেই সময়কালে উন্নয়ন পর্ষদ মন্দারমণিকেও যুক্ত করে। বামফ্রন্টের আমলে সমুদ্র বিজ্ঞানী ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়কে দীঘা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করে, দীঘার উন্নয়ন এবং সমুদ্রের পরিবেশ ও সমুদ্র ভাঙন রোধের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এলাকার গরিব মানুষ যাতে করে রুটি রুজির সংস্থান করতে পারেন। তার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলা সহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। দীঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য আশিস প্রামাণিকের কথায়, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান। এই এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারের পরিকল্পনা হয়েছিল। দীঘার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স পরিষেবার আরও উন্নতি ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সব উদ্যোগ চাপা পড়ে গেছে তৃণমূল-শাসনে।

Comments :0

Login to leave a comment